Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গরীবের মুখ থেকে আলু-ডিমও কেড়ে নেবেন

আজহার মাহমুদ
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৩৫

আলু আর ডিম গরীবের খাবার শুনে অনেকেই হাসতে পারেন। ডিম আর আলু ধনীরাও তো খায়। আজকাল শাক-সবজিও ধনীরা খায়। গরীবের খাবার বলতে কিছুই নাই। যেটা যখন সস্তা গরীবরা সেটাই খায়। এক আটি লাউ শাকের দাম ৬০ টাকা শুনলে কোনো নিম্ন আয়ের লোক লাউ শাকের পাশ ঘেষে দাঁড়াবেও না। কিন্তু এক আঁটি শাক যদি বাংলাদেশে ১০০ টাকাও হয় কিছু উচ্চবিত্তরা ঠিকই খাবেন। কারণ তাদের ভিটামিন, প্রোটিন সবই দরকার।

অথচ গরীব, নিম্ন আয়ের মানুষেরা এসব খায় পেট ভরাব জন্য, বেঁচে থাকার জন্য। আমি ডিম আর আলুকে গরীবের খাবার এজন্যই বলেছি তারা আলু দিয়ে ডিম রান্না করে বেশি পরিমাণ ঝোল দিয়ে কয়েকবেলা ভাত খায়। আর এই আলু উচ্চবিত্তরা খায় ফ্র্যান্স ফ্রাই হিসেবে। উচ্চবিত্তরা খায় বিরিয়ানির সাথে। আর ডিম দিয়ে তারা নানান মিষ্টি, ফুডিং, কেক বানায়। ডিম তাদের জন্য নাস্তা। সুতরাং উচ্চবিত্তদের জন্য এসব খাবারের মূল্য এক রকম হবে, আর নিম্নবিত্তদের জন্য একরকম হবে। কোরবানির ঈদ ছাড়া এদেশের নিম্ন আয়ের মানুষজন গরুর মাংস কয়বার খায় সেটা জরিপ চালালেই প্রমাণ পাবেন। নিম্ন আয়ের মানুষের কথা দূরে থাক মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোও গরুর মাংস খেতে পারে না। মাঝে মাঝে হয়তো বাজার থেকে ছোট একটা মুরগী কিনে নিয়ে যায়। আর ধনীরা নিয়ে যায় ৮/১০ টা করে মুরগী। মুরগীর রোস্ট, কাবাব, রসা, মাসালা নানান সিস্টেম করে ধনীরা খায়। আর মধ্যবিত্তরা খায় ডেকসি পুরিয়ে তরকারি মিক্স করে। মাংসের আলুটাও তাদের কাছে মাংসের মতো মনে হয়। অথচ সেই আলুটাও এখন মাংসের দামের কাছাকাছি হয়ে যাচ্ছে। চালের কেজি আর আলুর কেজি সমান সমান। এখন আলু খাবে না ভাত খাবে মানুষ সেটাই জানে না।

আরেকটা ডিমের কথা বলেছিলাম। গরীবের কাছে মাংস হচ্ছে ডিম। ডিম দিয়ে তারা ভালো খাবারের তৃপ্তি মেটায়। এই ডিমের দামও ১৪ থেকে ১৬ টাকা প্রতি পিস। অথচ আগে ডিমের হালি পাওয়া যেতো ১৬ টাকায়। বিশ^কাজাওে নাকি প্রতি পিস ডিমের দাম ৬ টাকা করে। অথচ আমাদের দেশে সরকার কর্তৃক ১২ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দাম নির্ধারণ করার পরেও যদি দাম না কমে তখন সত্যি বড় কষ্ট লাগে। সরকারের ক্ষমতা সম্পর্কে ভেবে তখন অবাক হই। আলুর দাম সরকার ৩৫ টাকা নির্ধাারণ করে দিয়েছে। এরপর আলুর দাম কমার বদলে কিছু কিছু বাজারে বেশি দামেও বিক্রি হয়েছে। ৫০ টাকায় আলু এখনও বিক্রি হচ্ছে। এভাবে ডিমের দামও সরকার ১২ টাকা নির্ধারণ করলেও ১৩ থেকে ১৫ টাকায় সেটা বিক্রি হচ্ছে।

এই যে সাধারণ মানুষের সাথে ব্যবসায়ীরা এভাবে খেলছে এটার দায় শুধু কি ব্যবসায়ীদেরই দিতে হবে? সরকারেরও এর দায় দিতে হবে। আমাদের জীবন নিয়ে এভাবে এসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন সরকার। তাই তারা সেটা করতে পারছেন। বাজারে নেই নিয়মিত মনিটরিং, নেই কোনো তদারকি। ডাব ব্যববসায়ী থেকে শুরু করে সব ব্যবসায়ীদের সাথে ভোক্তার ডিজি মহোদয় মিটিং করেন। কিন্তু সেটা ওই এসি রুম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এখনও ডাবের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামের ওয়ার্লেস মোড়ে প্রতি পিস ডাব ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই ডাব আবার চট্টগ্রাম মেডিকেলের সামনে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। স্থানভেদে ডাবের দাম পরিবর্তন হলেও দাম কমার কোনো সুযোগ নাই। যেটা বাড়ছে সেটা বেড়েই চলছে।

ডাব না হয় গরীবের নিত্যদিনের খাবার নয়। কিংবা ডাব না খেলেও নিম্ন আয়ের মানুষের দিন কাটবে। কিন্তু আলু আর ডিমও কি গরীবের পেটে জুটবে না? তাদের ভাতের তালা থেকে কি এবার আলু আর ডিমও কেড়ে নিবেন? এই প্রশ্নগুলো কাকে করছি? প্রশ্ন করছি সেসব সিন্ডিকেট কোটিপতি ব্যবসায়ীদের, আর প্রশাসনের দুর্নিতীবাজ ঘুষখোর লোকদের। তাদের হৃদয়ে কি নূন্যতম দয়া-মায়া নাই? পরকালের ভয় নাই?

একইসাথে সরকারের এই ব্যার্থতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। দেশ উন্নত করে লাভ কি? যদি পেটে ভাত না থাকে। আমাদের ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল আর টানেলের প্রয়োজন নাই। শুধু প্রয়োজন দুই বেলা ভাতের। ভাতের সাথে আলু, ডিম, ডাল হলেও চলবে। অন্তত কাঁচা বাজারের দাম, ভোগ্য পন্যের দাম নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ভেতর রাখার অনুরোধ সরকারের কাছে। আমদানি হোক আর উৎপাদন করে হোক সাধারণ মানুষের নাগালে বাজার রাখাটা সরকারের দায়িত্ব। একইসাথে প্রতি বছরই জনগণের সাথে দামবৃদ্ধির এই নোংরা তামাশা বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সরকারের। কঠোর হাতে এইসব সিন্ডিকেটকে দমন করা প্রশাসনের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

সারাবাংলা/এজেডএস

আজহার মাহমুদ গরীবের মুখ থেকে আলু-ডিমও কেড়ে নিবেন?


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০০

সম্পর্কিত খবর