Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফিরিয়ে দিন সেই পুরোনো দিন

মীর আব্দুল আলীম
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:১১

আমার দাদা বলতেন- ‘আগের দিনও নেই, আগের মানুষগুলোও নেই।’ কয়েকটি শব্দ মাত্র, কিন্তু এর মমার্থ অনেক। কই গেল আগের সেই দিন? মানুষগুলো বদলে গেছে বলেইতো দিনও বেদলে গেছে। এ লেখায় আমার জীবনের দুটি গল্প শোনাতে চাই আপনাদের। ছোটবেলার নষ্টালজিয়া থেকেই সে গল্প বলছি। গল্পতো গল্পই! এ গল্প, গল্প নয় বাস্তব ঘটনা। বাস্তবতার সঙ্গেও যে গল্পের মিল থাকে তা ছোট বেলায় নিজের চোখে দেখেছি। বৃহত্তর ঢাকা জেলার তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমার রূপগঞ্জের রূপসী গ্রাম। আমার গ্রাম। প্রিয় স্থান। যেখানে শেষ বেলা ঘুমনোর স্বপ্ন দেখি। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত আমার ছোটবেলা ওই গ্রামেই কেটেছে। ছোট বেলায় আমার মায়ে কাছে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্প শুনেছি। তিনি গল্প শুনিয়েই আমাকে বড় করেছেন। মায়ের গল্পগুলো ছিল বাস্তবতার সঙ্গে মিলানো।

বিজ্ঞাপন

বলছিলাম হেমিলনের বাঁশিওয়াল গল্পের কথা। জার্মানির হ্যানোভারের ৩৩ মাইল দক্ষিণে হ্যামিলন শহরে হ্যামিলনের বাঁশির সুরে যেমন প্রথমে ইঁদুর ও পরে শিশুদের ঢল নেমেছিল ঠিক তেমনি বিরল ঘটনা ঘটতে দেখেছি আমার জন্মস্থান, রূপসীর অজপাড়া গাঁয়ে। এখনকার স্বনামধন্য পূর্বাচল খ্যাত এলাকাটি তখন নিভৃত গ্রামই ছিল বলা চলে। এখন শিল্প সমৃদ্ধ শহর। যা কিনা হতে যাচ্ছে এশিয়ার সর্ব বৃহৎ স্যাটেলাইট শহর। তখনকার একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কথা আমার বেশ মনে পরে। নাম তাঁর সোনামিয়া। যার নামের পরে কবে যে চেয়ারম্যান শব্দটি যোগ হয়েছে এখনও তিনি সেই নামেই সমধিক পরিচিত।

বিজ্ঞাপন

তিনি বেঁচে নেই। চেয়ারম্যান চাচা যখন গাঁয়ের ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতেন তখন, যুব, বৃদ্ধ, শিশুর দল তার সঙ্গে ছুটতো। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো অত ইঁদুর আর শিশুর দল তার সঙ্গে না থাকলেও গোটা ৫০ লোক তো তখন সব সময়ই তার পিছু পিছু ছুটতে দেখতাম। তিনি এ তল্লাটে অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তার কথায় তখন সবাই উঠত-বসত। বিচার সালিশ থেকে সব কিছুই সোনামিয়া চাচা অতি সহজে করে দিতেন। তার কোনো সিদ্ধান্তে কারও অমত করতে দেখিনি কখনও। সারা থানাই ছিল তার প্রভাব পতিপত্তি। তার প্রভাব চলতো গরিব অসহায় মানুষের পক্ষে। এখন কি দেখি? নিজেদের নিয়েই ভাবেন অনেকে। সোনা মিয়া চেয়ারম্যানরা দেশে আছেন কি? থাকলে ক’জন? আজকাল কেউ কাউকে মানতে চায় না। যেন সবাই নেতা। গ্রাম একটা, আর নেতা ১৪ জন। আমার জন্মস্থান রূপসীতেও এখন তাই ঘটছে। দিন দিন গ্রামের মানুষগুলো যেন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। আর রাজনীতিতে বিশুদ্ধতার বড্ড অভাব দেখা দিচ্ছে। তাই সবার সঙ্গে সবার বনিবনা কম হচ্ছে। আগের মানুষগুলো কই? আগের সেই দিনগুলো কই? নেই। হারিয়ে গেছে। পৃথীবি বদলে গেছে, যা দেখি তা তো সবই নতুন লাগে। আগে অনেক সুন্দর দিন কাটাইতাম। আগে বাঙালি ছিলাম ভালোই তো ছিলাম। সাহেব হয়ে, শহুড়ে হয়ে আর্টিফিসিয়াল হয়ে যাচ্ছি আমরা। আমার দাদা সুবেদ আলী মীর, নানা এখলাছ উদ্দিন ভূঁইয়ার মতো ভালো মানুষ এখন আর দেখি না কেন? কাদা মাটিতে গড়া মানুষ। আমরা এমন হতে পারছি না কেন? ছলচাতুরি, বাটপারি, মিথ্যাচার তাদের কাছেই কখনও ভিড়ত না। গ্রামের বিচার আচার তারাই করতেন। চুলচেরা বিচার। এখন আইন আদালতে ভরে গেছে দেশে। জজ, ব্যারিস্টারের অভাব নেই। সুবিচারের অভাব? এমন দিনের প্রত্যাশায়ই কি ছিলাম আমরা?

স্বাধীতার আগে এবং পরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের গল্প আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার কাছে অনেক শুনেছি। আপামর দেশের মানুষ নাকি তখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতেন। তার কোনো আদেশ পেলেই তাই সাদরে গ্রহণ করত আমজনতা। এখন এই বাংলাদেশেই কত শত নেতা-নেত্রী দেখছি। সবাই ক্ষমতা ধর। কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলে না; মানতে চায় না; বিশ্বাস করেন না। রাজনীতিতে এখন বড় ভেজাল হয়ে গেছে। শুদ্ধতা, পরিপক্বতা খুবই কম। আগের সেই ত্যাগী নেতাও নেই। সে সময় গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের অনেক ইজ্জত ছিল। এখন নেই তা বলব না। কতটা আছে জনগণ আপনারাই তা ভালো বলতে পারবেন। এখন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মানুষ মানতে চায় না। নানা বিভেদ ও স্বার্থের কারণে রাজনৈতিক দলের নেতা-নেতৃও কেউ মানতে চায় না। সমীহ করে কতটুকু তা তো দেখছিই প্রতিদিন। করলেও ভয়ে করে বেশি। সমীহ করে মামলার ভয়ে, হামলার ভয়ে, জান খোয়ানের ভয়ে। তবে এভাবে সবাইকে এক কাতারে ফেলা বোধ হয় আমার সমীচীন হচ্ছে না। ভালো মানুষ, ভালো চেয়ারম্যান, মেম্বার, কমিশনার, নেতা-নেত্রী, মন্ত্রী-এমপি নেই তা বলা বোধ হয় ঠিক না। তবে তারা সংখ্যায় খুবই নগণ্য।

যার কারণে কতৃত্ব, মর্যাদা হারাচ্ছে রাজৈতিদক দলের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা। এ অবস্থায় দেশের শৃঙ্খলা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কোনোটাই সঠিকভাবে হবে না বলেই মনে করছি। এ বিষয়টি আমাদের দেশপ্রেমিক জনগণ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক এবং বিজ্ঞজন সবাই ভাবনায় এনে নেতৃত্ব এবং জনপ্রতিনিধিদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হবেন এটাই আমরা কায়মনে চাই। আমার গ্রামের ছোট বেলার পল্লী চিকিৎসক। নাম তার ‘টুকুন ডাক্তার’। তিনিও এখন আর বেঁচে নেই। বছর ৪০ আগে মারা গেছেন। নিভৃত পল্লীতে বসেই চিকিৎসা সেবা দিতেন গ্রাম্য চিকিৎসক টুকুন ডাক্তার। তিনি সে সময়কার আমার গ্রামের একমাত্র ডাক্তার। চিকিৎসা সেবার ভরসা। অসম্ভব মেধাবী এই চিকিৎসকের চিকিৎসাপদ্ধতি ছিল একটু ভিন্ন ধরনের। একেবারে সাদাসিধে জীবনযাপন ছিল তার। শোয়ার ঘরটিও টিনের বাংলো ঘরের মতো ছিল। সামান্য সময় পেলেই বসে যেতেন পড়ার টেবিলে। বই-সেই চিকিৎসা সাস্ত্রীয়। ডাক্তারির ওপর সংসার চলত তার। গোটা গ্রামের মানুষের চিকিৎসা করলেও তার অভাবের সংসারই ছিল। টুকুন ডাক্তার তার আসল নাম নয়। তবে এ নামেই তিনি পরিচিত ছিলন। এ নামের ভিড়ে আসল নামটি যেন হারিয়ে গেছে কখন। যখন লিখছি, তখন আমার পিতার কাছে ছুটে যাই টুকুন ডাক্তারের আসল নাম জানতে। তিনিও বলতে পারলেন না। সরলভাবে বললেন- ‘নাম তো টুকুন ডাক্তারই।’ পরে তার ছোট ছেলের কাছ থেকে জানা গেল তার প্রকৃত নাম আবদুল আজিজ। চিকিৎসা করে সকলের কাছ থেকেই টাকা পয়সা নিতেন না তিনি। অভাবি মানুষদের বলতেন- ‘তুমি টাকা দিবা কইথাইক্কা।’ তার সংসারের অভাবটাও বুঝতে দিতেন না রোগীদের।

ঢাকার পাশের রূপসী গ্রামের এই টুকুন ডাক্তারে উপরেই আমাদের গোটা গ্রামের চিকিৎসা সেবা নির্ভর ছিল। আমার ভাগ্নে এ হাই মিলন। বর্তমানে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। আমার বছর খানেকের ছোট হবেন তিনি। সেই ছোট বেলায় কাঁচা বাঁশ দিয়ে ভোঁ ভোঁ করে গাড়ি চালাতে গিয়ে নিজের অজান্তেই আমার থুতনিতেই বাঁশ লাগিয়ে দিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে কেটে ঝুলে গেল মাংস। সবাই ধরা ধরি করে ৬ বছর বয়সী আমাকে নিয়ে গেলেন টুকুন ডাক্তারের কাছে। একটু ডেটল, দুটি সেলাই আর কয়েকটি ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। বললেন- ‘বাড়িত যাইয়া সাগু খাওগা, দুই চারদিন পরে সাইরা যাইবো।’ তাই হয়েছে। সেই আমারই বড় ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় সামান্য ব্যথা পেয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের কেবিনে ২২ দিন, এবং পরে তিনি যে মেডিকেল কলেজের ছাত্র সে মেডিকেল কলেজে ২ মাস ভর্তি ছিলেন। সামান্য পায়ের আঘাতেই তার ৬ মাস লেগে গেছে সুস্থ হতে।

আসলে আমরা নিজেরাই যেন কেন দিন দিন জটিল হয়ে যাচ্ছি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন হয়েছে। অবনতি হয়েছে আমাদের। আমাদের চিকিৎসকরা অনেকে দিনকে দিন জটিল হচ্ছেন, বাণিজ্যিক হচ্ছেন (তবে সবাই না)। ছোট বেলায় জ্বর হলে মা জোর করে সাগু খাইয়ে দিতেন। সাগু খাওয়ার ভয়েই দৌড়ে পালাত জ্বর। তা না হলে বড় জোড় ডাকা হতো টুকুন ডাক্তারকে। তিনি যে দোকানে বসে চিকিৎসা দিতেন তার আশপাশের পথঘাটগুলো মান্ধাতা আমলের ছিল। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু কাদা। তখন ছিল না ওই গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থাও। ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় রাত বিরাতে অন্ধকারেই ছুটতেন টুকুন ডাক্তার। তিনি মিক্চার কিংবা দু/একটা বড়ি খাইয়ে দিলেই জ্বর-জারি হাওয়ায় মিলাত। আর হাঁচি কাশি তো তিনি তুড়ি দিয়েই সারিয়ে দিতেন। এখন আছেন কি সেই ভদ্র, সজ্জন, বিনয়ী, ত্যাগী ও মানব দরদী কোন টুকুন ডাক্তার? এখনকার ডাক্তারগন সেবা দেন না তা বলছি না। বললে যে আমার ঘারেই পড়বে বেশি। কারণ আমার পরিবারেই ডজন খানেক ডাক্তার আছেন। ডাক্তারগণ এখন বড্ড বেশি প্রফেশনাল, এটা আমাকে বলতেই হবে। হাসপাতালগুলো তো বটেই! আমি নিজেও আল-রাফি হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছি। নারায়ণগঞ্জ জেলার হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা আমি। উপদেষ্টা হিসেবে স্থানীয় তিন এমপি গাজী গোলাম দস্তগীর (বীরপ্রতীক), নজরুল ইসলাম বাবু, এবং লিয়াকত হোসেনও রয়েছেন। আমরা হাসপাতালে হাসপাতাল মালিকদের নিয়ে মাঝে মাঝেই আলোচনায় বসি। একটি কথাই আমি আমার বক্তব্যে বলি, হাসাপাতাল ব্যবসা বলবেন না। এটা চিকিৎসা সেবা। ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ হাসপাতালে সমিতির বার্ষিক আনন্দ্র ভ্রমনে কক্সবাজার যাই আমরা। কক্সট্যুডের লবিতে সবাইকে একটি গল্প শুনিয়েছে। আমার গল্পতো সব বাস্তব ঘটনা নিয়ে। বাস্তব ঘটনাকে গল্প বলি, এ কারণে যে আমাদের চাওয়া পাওয়াগুলো বাস্তবে রূপ পায় কম। গল্পের মতো মিলিয়ে যায় সব। নাটক সিনেমা শেষ হলে যা হয় তাই। মনে রাখে না কেউ। বাস্তবে রূপ পায় না। দিন ক’য়েক আগের কথা। গভীর রাতে একজন আমার মোবাইলে ফোন করে বলছেন- ‘স্যার আপনার হাসপাতালে ছেলের বউকে নিয়ে এসেছি সিজারের জন্য ব্যবস্থা করছে না। এও জিজ্ঞাস করলেন-‘ সার্জন কি নেই’। কথা শুধু শুনে যাচ্ছি। কিছুটা রাগের সুরে কথা বলছেন এটা বুঝলাম। আবারও বলছে- ‘বার বার কইছি সিজার করতে। করে নাই। ডাকাতার নাই মনে হয়।’ আমি শুধু বললাম- প্লিজ আপনার ছেলের বউয়ের নামটা বলুন, আর কেবিন নাম্বর বলুন। বলতেই বললাম এবার রাখুন দেখছি কেন সিজার হচ্ছে না। মোবাইলটে দিয়ে হাসপাতালের ইমাজেন্সি নাম্বারের কল করলাম। ঐ রোগির কি অবস্থা জানতে চাইলাম। হাসপাতাল ধেতে জানানো হলো নরমাল ডেলিভারির শেষ অবস্থায় আছে; সিজারের কোন প্রয়োজন নেই। লাইনটা কেটে দিয়েই ঐ ভদ্রলোককে ফোন করলাম। বললাম এটা সিজারের বিষয় নয়, নরমাল ডেলিভারিতেই বাচ্চা প্রসব হবে। বলতেই- একটু রাগান্মীত কন্ঠে বলছেন- অনেক কষ্ট হচ্ছে মেয়েটার সিজারের ব্যবস্থা করুন। এবার আমি একটু রেগে বললাম-“আমি সিজারের লোকান খুলে বসিনি যে আপনি চাইলেই সিজার হবে; চিকিৎসককে চাইতে হবে।” আবারও সিজেরের অনুরোধ। এবার একটু রেগেই বললাম- এ পর্যন্ত কোন বিল দিতে হবে না, অ্যাম্বুলেন্স ডেকে দিচ্ছি যেখানে সিজার করে সেখানে গিয়ে সিজার করিয়ে নিন। আমাকে মাফ করবেন বলেই মোবাইলটা রেখে দিলাম। আধাঘন্টা পরে মোবাইল বেজে উঠলো। ঐ ভদ্রলোকের কন্ঠ- সালাম দিয়ে বললেন- আমার নাতি হউছে স্যার। জিজ্ঞেস করলাম কখন কোথায় সিজার হলো। হাসি দিয়ে বললেন- কি যে বলেন স্যার আপনার এখানেইতো নরমাল ডেলিভারি হয়েছে।’ বললাম, একটি অপারেশন এত সহজ কথা নয়। তাতে সারা জীবনের প্রতিক্রিয়া থাকে। আরও বললাম অপারেশন করে দিলেইতো কয়েক হাজার টাকা পেতাম আমরা। জানতে চাইলাম হাসপাতালে কত টাকা দিয়েছেন। ১হাজার টাকা। বললাম- টাকাও বেঁচে গেছে, আপনার ছেলের বউ একটা অপারেশন থেকে রক্ষা পেয়েছে। পরে ঐ ব্যক্তি ক্ষমা চেয়ে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন। বলেছি এটা আমাদের কর্তব্য। আমরা অহেতুক অপারেশনে বিশ্বাসী নই। মানুষতো আমরা? কয়েক হাজার টাকার জন্য অহেতুক পেট কেটে কাউকে শাররীক এবং অর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাই না। এসব কথা বলতে গিয়ে সেদিন চিকিৎসা যেন সেবার জায়গায়ই থাকে, সেদিনের সভায় হাসপাতালের মালিক ডাক্তার সবাইকে বললাম।

আসলে দেশে এতো সিজার হচ্ছে কেন? এটাতো মহামারি নয়? কতক অমানবিক চিকিৎসক আর হাসপাতাল নয় আজকাল রোগীর স্বজনরাও সিজারে যে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। সিজার কমিয়ে নরমাল ডেলিভারির জন্য আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। সারাদেশে সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন কোনো শেষ নেই। অনেক ক্লিনিকে তো রীতিমতো অচিকিৎসকরাই রোগীদের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। অথচ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বড় বড় কর্মকর্তা যেন ‘নাকে তেল দিয়ে’ ঘুমায়। দেশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর অবস্থা তো আরও ভয়াবহ। রোগ পরীক্ষার নামে এদের বেশির ভাগই মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে, রোগীদের প্রকারন্তে হত্যা করছে। এ রকম হূদয়বিদারক ঘটনা অহরহ ঘটছে। কারণ বেশিরভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রশিক্ষিত লোকজন বা টেকনিশিয়ান নেই বললেই চলে। পরীক্ষায় যেসব উপাদান ব্যবহার করা প্রয়োজন, তা করা হয় না। আবার অনেকে খরচ কমাতে মেয়াদোত্তীর্ণ উপাদান ব্যবহার করে। এসব সেন্টারে আগে থেকে প্যাথলজির একজন অধ্যাপকের সই করা রেজাল্ট শিট থাকে; সেগুলোতে যা খুশি লিখে রোগীর স্বজনদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। আমরা জানি না, আর কত নিচে নামব আমরা? নীতি-নৈতিকতাহীন ব্যবসার কাছে মানুষ আর কতকাল অসহায় হয়ে থাকবে? আর কত নিষ্ঠুরতা আমাদের দেখতে হবে? রাষ্ট্রের কাছে আমরা এর প্রতিকার চাই। মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিয়ে যেন ব্যবসার নামে লাগামহীন কর্মকাণ্ড না চলে, তার নিশ্চয়তা চাই।

আমরা বদলাতে চাই, বদলে দিতে চাই। সুখ চাই; শান্তি চাই। বউলের মতো সুরে সুরে বলতে চাই না ‘শান্তির মায় মইরা গেছে অশান্তির মায় মরে না।’ শান্তির সুখম্বপ্ন দেখি আমরা। শান্তিময় বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি আমরা। নীতি-নৈতিকতা বির্জিত মানুষ হতে চাই না আমরা। নোংরা কুলশিত সমাজ চাই না। ব্যবসার নামে এক শ্রেণির বিবেকহীন মানুষ বিষ খাইয়ে মানুষ মারছে। অপচিকিৎসায় দেশে মানুষ মরছে। একজনের জমি আরেকজন গায়ের জোরে হরণ করছে। সম্পদ লুট হচ্ছে, মানুষ গুম হচ্ছে, খুন হচ্ছে। দিন দিন প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। প্রতিনিয়তই আমাদের ভেজাল ও বিষযুক্ত খাবার হজম করতে হচ্ছে, ব্যবসার নামে শিক্ষার অধঃপতন ঘটিয়ে দেশে সার্টিফিকেট বিক্রি হচ্ছে, বার বার প্রশ্নফাঁস হচ্ছে। আরও কত কী! অথচ রাষ্ট্র উদ্বেগহীন, নির্বিকার। এভাবে আর কত কাল চলবে? এভাবে তো চলে না? চলতে পারে না? আর চলতে দেয়া যায়ও না। সব শেষ হয়ে যাবার আগেই বদলে যেতে হবে আমাদের। মুখোশধারীদের রূপ বদলে দিতে হবে। তবেই বদলে যাবে দেশ। এই স্বপ্নই দেখি আমরা। এ লিখার শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। ভোর হয়েছে। মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাচ্ছি। সুন্দর সকালটার মতোই সুন্দর হোক আমার এ দেশ। আমাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবে রূপ পাক। এই প্রত্যাশা।

লেখক: মহাসচিব- কলামিস্ট ফোরাম অফ বাংলাদেশ, চেয়ারপার্সন- আল-রাফি হাসপাতাল লি:

সারাবাংলা/এসবিডিই

ফিরিয়ে দিন সেই আগের দিন মীর আব্দুল আলীম মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর