সন্তানকে সঠিক পারিবারিক শিক্ষায় গড়ে তুলুন
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:০৮
আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলে এবং মেয়ে একসাথেই পড়ালেখা করে থাকে। সকলেই একে অন্যের বন্ধু এবং সহপাঠি হিসেবে পরিচিত। একজন ছেলেকে যেভাবে দেখা উচিৎ একজন মেয়েকেও সেভাবে দেখা উচিৎ। বন্ধুত্বে মধ্যে কোনো বৈষম্য থাকা উচিৎ নয়। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিষয়টা বেশ জটিল। এখনকার ছেলেমেয়েদের বন্ধুত্ব আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো পর্যায়ে আছে এটা যেমন স্বীকার করতে হবে, তেমনি এখনকার কিছু কিছু ছেলে তাদের মেয়ে বন্ধুদের প্রতি ভিন্ন দৃষ্টি দিয়ে তাকায় এটাও আমাদের মানতে হবে।
এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। সকল ছেলেই যে তার সহপাঠিনীর প্রতি ভালো দৃষ্টি দিয়ে দেখছে এটা কিন্তু সঠিক নয়। এমনও অনেক ছেলেকে দেখা যায় ক্লাস রুমে বসেই তার সহপাঠি বান্ধবীকে নোংরা মন্তব্য করছে। আমরা হয়তো প্রচুর শিক্ষা নিচ্ছি ও দিচ্ছি। কিন্তু তার ফলস্বরূপ আমরা তেমন কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। দৈনন্দিন কি শিখছে ছাত্ররা সেটা বুঝা যায় তাদের আচরণের মাধ্যমে।
এখনকার সময়ে দেখা যায় একটি মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে তার সহপাঠী। আসলে এটা একেকজনের মানসিকতার একটি বিষয়। কিন্তু আমরা এটা বুঝি না, কখন কোথায় কোন বয়সে এসে প্রেম করাটা উত্তম। হয়তো অনেক সময় ম্যাচুরিটির অভাবেও এমনটা হয়। আর এজন্য সমানভাবে দায়ী পরিবার ও সমাজ।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য পরিবার হতে পারে প্রধান মাধ্যম। পারিবারিক শিক্ষা এক্ষেত্রে অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার থেকে যদি ছেলে সঠিক শিক্ষা না পায় তাহলে ছেলে যা খুশি তা-ই করতে পারে। পরিবারের তদারকি না থাকলে, নিয়মিত খোঁজ-খবর না রাখলে সন্তান নষ্টপথে হাঁটবে এটাই স্বাভাবিক। সন্তানকে সঠিক অনুশাসনে না রাখলে, নিয়মিত শৃংখলার মধ্যে দিয়ে গড়ে না তুললে এমন ভুল সন্তানরা বারবার করবে।
আবার এটা সামাজিক সমস্যাও একটি। এজন্য সমাজের দায় রয়েছে প্রচুর। পুরো একটা সমাজ নষ্ট হয়ে গেলে সেখানে ভালো কিছুই সৃষ্টি হবে না। সমাজের বড়জনরা যদি ছোটদের শৃংখলায় না রাখেন উল্টো নিজেরাই উশৃংখল হয়ে থাকেন এতে করে ছোটরাও এসব শিখবে। এতে করে সমাজের সোনালি প্রজন্ম নষ্ট হবে। যার জন্য দায়ি থাকবে সমাজ ও সমাজের মানুষ।
আচরণের মাধ্যমে বুঝা যায় কোন ছেলে তার সহপাঠিনির সাথে বন্ধুত্ব করতে চায় আর কোন ছেলে নোংরামি করতে চায়। আমাদের শিক্ষাঙ্গনে এখন এই সমস্যাটা এতোটাই বেড়ে গেছে যে এটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে সকলের কাছে। আজকাল ক্লাস সিক্সের ছেলে-মেয়েরও প্রেম হয়। এসব ঘটনা এখন সবখানে সহজ হয়ে উঠেছে। এতেই বুঝা যায় আমাদের পরিবার ও সমাজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব ঘটনার জন্য ৯০ শতাংশ দায়ী ছেলেরাই। এত করে অনেক সময় ছেলেমেয়ে উভয়ের সম্পর্ক খারাপের দিকেও চলে যায়। অনেক সময় দেখা যায় তার সহপাঠিনী প্রস্তাবটি গ্রহণ না করলে ছেলেটি নানাভাবে নিপীড়নমূলক আচরণ করে। ইভটিজিং থেকে শুরু করে ভয়ংকর কিছুও করতে ভাবে না অনেক ছেলেরা।
তবে সব ছেলেরা আবার এমন সেটা কিন্তু মোটেও নয়। কিছু কিছু বন্ধুত্ব রয়েছে যাদের মধ্যে ছেলে মেয়ে সকলেই থাকে এবং সকলেই একতাবদ্ধ। নেই কোনো অশ্লীল আচরণ, চাল-চলন। যেখানে দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক থাকবে সেখানে সবকিছুই ঠিক থাকবে। আর এজন্য প্রয়োজন পারিবারিক শিক্ষা। পরিবার থেকে শিক্ষাটুকু নিয়ে যারা বিদ্যালয়ে আসে তাদের মাধ্যমে কখনও এমন কার্যক্রম হবে না এটা হলফ করে বলা যায়।
অনেক অনেক ক্ষেত্রে এটি বয়সের প্রভাবেও হতে পারে। তবে মানসিকতা ঠিক রাখলে সবকিছুই ঠিক রাখা যায় বলে আমার বিশ্বাস। আর এই মানসিকতার ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে পরিবারের। বাবা-মায়েরা যদি সন্তানদের মানসিকভাবে গড়ে তোলেন তাহলে এমন সমস্যা থেকে সকলেই মুক্ত থাকবে। তাই বলা যায়, পারিবারিক শিক্ষাই একটা সন্তানের আসল শিক্ষা।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
সারাবাংলা/এজেডএস