Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উম্মতের মুক্তির দিশারি হিসেবে রহমতস্বরূপ নবীজির শুভাগমন

মাঈন উদ্দীন রুবেল
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:২৪

মাহে রবিউল আউয়াল হিজরী বর্ষের তৃতীয় মাস। গুরুত্ব এবং মর্যাদার দিক থেকে এই মাস ঈমানদার মুসলমান ও আশেকে রাসূলগনের অন্তরে এক মহাসম্মানিত ও নবী প্রেমের মহা সমুদ্রের জোয়ারের ন্যায় ঢেউ খেলে। ছরকারে দু আলম সাইয়্যেদুল মুরসালিন খাতেমুন নবীয়্যিন শফিউল মুজনেবীন রাহমাতুল্লিল আলামিন হাবীবে খোদা হযরত মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর শুভ আগমন ১২ই রবিউল আউয়াল । যিনি শেষ নবী অর্থাৎ খাতেমুন নবী, যার পরে আর কোনো নবী আসবেনা, যার শুভাগমনে ধন্য সমগ্র জগৎ, আলোকিত মক্কার মরুপ্রান্তর, যার কারণে চিরভাস্বর মদিনাতুল মুনাওয়ারাহ। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেছেন, “ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রহমাতুল্লিল আলামীন”, অর্থাৎ হে রসূল (সাঃ) সমগ্র জগৎবাসীর জন্য আমি আপনাকে রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। ওই আয়াত দ্বারা প্রমাণ করে রসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোটা সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত। আরও ইঙ্গিত বহন করে যে, আল্লাহ যতটুকুর জন্য রব এবং তার প্রিয়বন্ধু হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন ততটুকুর জন্য রহমত। আল্লাহর রুবুবিয়্যাত তথা মালিকানা যে পর্যন্ত বিস্তৃত, ত্রিভূবেনর বাদশা নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুয়তও সে পর্যন্ত বিস্তৃত।

বিজ্ঞাপন

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন যে বরকতপূর্ণ ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত রবিউল আউয়ালে সংঘটিত সঙ্গত সে কারণেই এই মাসটি উম্মতে মোহাম্মদী তথা জগতবাসীর কাছে তাৎপর্যমণ্ডিত ও মহিমান্বিত এবং খুশি উদযাপনের মাস।

দয়াল নবীর শুভাগমনের মাস হিসেবে বিশ্বের ঈমানদার মুসলমানদের অন্তরে প্রবাহিত হতে থাকে এক মুহাব্বতের ফল্গুধারা। সবাই অনুভব করে আনন্দ ও এক অনাবিল প্রশান্তি সেই সাথে আরও মজবুত হয় নবী প্রেমিকদের ঈমান ও আক্বিদা।

রবিউল আউয়াল মাস এমন একটি সম্মানিত ও গৌরবান্বিত মাস, যেই মাসে তশরীফ এনেছেন আল্লাহ তবারকা ওয়া তাআলার প্রিয় প্রিয় হাবীব ও মানব জাতির কল্যাণকামী এবং উম্মতের মুক্তিদাতা আখেরী নবী হুজুর পুরনূর (সাঃ), আকায়ে নামদার, শফিউল মুজনেবিন, রহমতুিল্লল আলামিন, হযরত আহমদে মোজতবা মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার ছোবহে ছাদেকের সময় পবিত্র মক্কা মোয়াজ্জামায় হযরত মা আমেনার (রাঃ) পবিত্র শেকমে পাক থেকে দুনিয়ার বুকে তশরীফ আনলেন হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদীছে পাক এবং অন্যান্য কেতাবের রেওয়ায়েত মতে কোন রকম অপবিত্রতা ব্যতিরেকে সম্পূর্ণ পাক পবিত্র অবস্থায় বেহেশ্তী পোশাক পরিহিত অবস্থায় , চোখে সুরমা দেওয়া অবস্থায় আল্লাহর পেয়ারা হাবীব (সাঃ) তশরীফ আনলেন। দুনিয়ার জমিনে তশরীফ এনেই তিনি আল্লাহর দরবারে সেজদায় পড়লেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলী উপরে তুলে আল্লাহর একাত্মতা এবং স্বীয় নবুওতের ঘোষণা দিলেন এবং উম্মতের জন্য দোয়া করলেন “রাব্বি হাবলী উম্মতি, রাব্বি হাবলী উম্মতি”।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন রেওয়ায়েত মতে, হযরত মা আমেনা (রাঃ) বর্ণনা করেন, “আমার শিশু সন্তান যখন ভূমিষ্ঠ হচ্ছিল তখন আমি শুনতে পাচ্ছিলাম অনেক লোকের আওয়াজ। তারা সালাম দিতে দিতে আমার ঘরের দিকে আসছিল।” রেওয়ায়েতে রয়েছে আল্লাহ তবারকা ওয়া তাআলার নির্দেশে হযরত জিবরাঈল (আঃ) এর নেতৃত্বে ঝাণ্ডা নিয়ে মিছিল বা জুুলুস সহকারে হাজার হাজার ফেরেস্তা আখেরী নবী ইমামুল আম্বিয়া নবী করীম (সাঃ) কে মোবারকবাদ ও সালাম আরজ করতে করতে হযরত মা আমেনার (রাঃ) গৃহের দিকে আসছিলেন এবং এই ঝান্ডা পবিত্র কাবা শরীফের উপরে স্থাপন করেন। এই বিষয়টিই চতুর্দশ শতাব্দীর মোজাদ্দেদ আ’লা হযরত আহমদ রেজা খাঁন ফাজেলে বেরলভী (রহঃ) তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন- “ফেরেশতোঁ ­­­কী সালামী দেনে ওয়ালী ফৌজ গাতি থী, জনাবে হযরতে মা আমেনা ছুনতি থি আওয়াজ আতি থি”। আল্লাহর পেয়ারা হাবীব (সাঃ) আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (সাঃ) এর ধরাধামে শুভাগমনে পবিত্র দিনটিকে উপলক্ষ করে সমগ্র দুনিয়ার ধর্মপ্রাণ নবী প্রেমিক মুসলমানগণ উদযাপন করেন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) এর সাধারণত অর্থ হলো ‘ঈদ’ অর্থ আনন্দ আর ‘মিলাদুন্নবী (সাঃ) এর অর্থ হলো পবিত্র জন্মদিন বা খোশরোজ। মিলাদুন্নবী আরবী শব্দ। আভিধানিক অর্থ হচ্ছে নবী করিম (সাঃ) এর শুভাগমন। সুতরাং ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) এর সার্বিক অর্থ দাঁড়ায় নবী করীম (সাঃ) এর শুভাগমন উপলক্ষে আনন্দ বা খুশী উদযাপন করা। এখানে একটি প্রশ্ন থাকতে পারে আমাদের আরো দুটি ঈদ রয়েছে। একটি পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের দিন অর্থাৎ শাওয়াল মাসের প্রথম দিন এবং আরেকটি ঈদ হল জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আজহা বা পবিত্র কোরবানির ঈদ। এই দুইটা ঈদ আমরা প্রতি বছর উদযাপন করে থাকি। এই দুটি ঈদ দুনিয়ার ধর্মপ্রাণ মুসলমান অতি মর্যাদা সহকারে পালন করে থাকেন। আর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) এমন একটি অনুষ্ঠানের নাম, একটি দিবসের নাম। ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার পক্ষ থেকে এমন এক নেয়ামত যা গ্রহণ, পালন এবং যার শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে থাকেন।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা হাদীসে কুদসীতে নবী করিম (সাঃ) কে উদ্দেশ্য করে এরশাদ করেন- “লাওলাকা লামা খালাকতুল আফলাক।” অর্থাৎ ‘‘(হে নবী), আমি যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম তাহলে আমি কিছুই সৃষ্টি করতাম না।” এই হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা পরিষ্কার করে স্বীয় রসুল (সাঃ) এর সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন। এই বিশ্ব জগৎ, আসমান-জমিন, লৌহ- কলম,বেহেশত-দোজখ, আরশ-কুরসী সব কিছু সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার প্রিয় হাবীব (সাঃ) কে আঠার হাজার মাখলুকাতের সামনে প্রকাশ করা। শুধু প্রকাশ করা নয় আল্লাহর রহমত স্বরূপ মানবজাতির কল্যাণে দুনিয়ার জমিনে প্রেরণ করা। যেমন, আল্লাহ তাআলা কোরআনুল করিমে এরশাদ করেন, “ওয়ামা আরছালনাকা ইল্লা রহমতুল্লিল আলামিন”। অর্থাৎ (হে নবী), আমি আপনাকে সমস্ত সৃষ্টির জন্য শুধুমাত্র রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।” এই জন্যে বলা হয়, সকল ঈদের সেরা ঈদ- ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)।

আল্লাহ তবারকা ওয়া তাআলা মানব জাতির জন্য অফুরন্ত রহমত ও নিয়ামতের ভাণ্ডার খুলে দিয়েছেন। সুরা আর রাহমানে আল্লাহ তবারকা ওয়া তাআলা এমন অনেক নেয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন এবং সে সব নেয়ামতের কথা বান্দাগণ যাতে অস্বীকার না করে তার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা আরেক আয়াতে নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার জন্য মানব জাতিকে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, “ফায্কুরূনী আযকুরকুম, ওয়াশকুরূলী ওলা তাকফুরুন”। অর্থাৎ, “যদি তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং আমার শোকরগুজার কর এবং না শুকরি করোনা”। বুঝা গেল যে, আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের বা রহমতের শুকর গুজার হওয়া আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অবশ্যই কর্তব্য। আরেক আয়াতে করিমায় আল্লাহ তবারক তাআলা স্বীয় হাবীব (সাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “কুুল ইয়া এবাদিয়াল্লাজিনা আছরাফু আলা আনফুছিহিম, লা তাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহ্। ইন্নাল্লাহা ইয়াগফিরুজ জুনুবা জামিয়া, ইন্নাহু হুয়াল গাফুরুর রাহীম”। এই আয়াতে আল্লাহ তবারকা ওয়া তাআলা স্বীয় হাবীব (সাঃ) এর মাধ্যমে তার গোনাহগার বান্দাদেরকে গোনাহের কারণে তাঁর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন তাদের সব গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। যে রহমতের কথা আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন সে রহমত তো উপরে উল্লেখিত। এক হাদীছে রাসূলে করিম (সাঃ) এরশাদ করেন, “আনা কাছেমুন ওয়াল্লাহ ইয়ুতি”। অর্থাৎ, “আল্লাহ দান করেন আর আমি বন্টনকারী”। সুতরাং, নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা সকল মানব জাতির জন্য বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই। শুকরিয়া আদায় করার একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হলো বেশি বেশি পরিমাণে নবী করিম (সাঃ) এর উপর দরুদ ও সালাম পাঠ করা যা কোরানুল করিমের ঘোষণা মতে আল্লাহ তার সমস্ত ফেরেশতাদের নিয়ে প্রতিনিয়ত বিরতিহীনভাবে দরুদ শরীফ পাঠ করে থাকেন এবং আমাদেরকে ও নবী করিম (সাঃ) -এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

নেয়ামতের শুকরীয়া আদায়ের আরেকটি এবং বড় এবাদত হলো খুশী উদযাপন করা। কোরানুল করিমে আল্লাহ পাক রাব্বুল ইজ্জত এরশাদ করেন, “কুল বেফাদলিল্লাহে ওয়া বেরাহমাতিহি ফাবিজালিকা ফাল ইয়াফরাহু” অর্থাৎ, (হে রাসূল) আপনি বলুন, (সবকিছু) আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানীতে। সুতরাং এরই প্রতি তারা (মুসলমানগণ) যেন খুশী উদযাপন করে। তারা যা সঞ্চয় করছে তা থেকে এটিই শ্রেষ্ঠতর”।

যখনই এ মাসের শুভগমন হয়, বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের অন্তরে, আশেকে রাসূলগনের অন্তরে স্বাভাবিকভাবে নবী-প্রেমের নতুন হাওয়া দোলখেতে থাকে, তারা নতুন করে হয়। আবার রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন, এ বিষয়ে কোনো মতানৈক্য নেই। আশেকে রাসূলগনের মতে,সুন্নিদের মতে নবী করিম (সাঃ) এর আগমন যেমন উম্মতের জন্য রহমত তেমনিভাবে দুনিয়া ছেড়ে যাওয়াটা ও রহমত। কারণ এটা আল্লাহর বিধি-বিধান, সবাইকে মৃত্যু স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক নবী-রাসুলগনই এর শিক্ষা দিয়ে গেছে। উনারাও প্রভূর ডাকে সারা দিয়ে পৃথিবী থেকে পর্দা করেছেন। তাই প্রকৃত নবী প্রেমিকগন যারা নবীকে জানের চেয়ে পরিবারের চেয়েও বেশি ভালোবাসে তারা সিরাতুন্নবী পালন না করে নবীর ভালোবাসা নিয়ে মিলাদুন্নবী উদযাপন করে। কারণ আমাদের প্রিয় নবীর দুনিয়া আসা ও যাওয়া দুটোই সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত। তাছাড়া ইসলামে মসলমানদের ইন্তেকালের পর তিনদিন পর্যন্ত শোক পালন করার বিধান রয়েছে এর বেশি নয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী নবী প্রেমিকগন পুরো মাসব্যাপী মিলাদুন্নবী পালন করে, সিরাতুন্নবী নয় কারণ তিনি আমাদের থেকে দুনিয়াবীভাবে পর্দা করেছেন কিন্তু আল্লাহ প্রদত্ত রহমত হিসেবে তিনি সর্বদা বিরাজমান যা আশেকে রসূলগন মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এবং নবী করিম (সা:) সর্বদা সর্বস্থানে হাজের ও নাজের হিবেবে বিশ্বাস করেন। আর এটা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে তারা নবীর ভালোবাসায় নবীর আগমনকে জুলুছ করে স্বাগতম জানাই। দরুদ ও সালামের মাধ্যমে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অসংখ্য দরূদ সালাম পেশ করেন। এবং তিনিই শেষ নবী ও রাসূল যার পরে আর কোনো নবী আসবেনা।

আল্লাহপাক বলেন, ‘যারা ঈমানদার তাদের মহব্বত গভীর হওয়া স্বাভাবিক’ (সূরা বাকারা: ১৬৫)।

আল্লাহপাক আবার বলেন, ‘হে রাসুল! আপনি বলে দিন যে যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তাহলে আমার অনুকরণ করো, তাহলে আল্লাহই তোমাদের ভালোবাসবেন। ’

এ দুই আয়াত থেকে বোঝা গেল যে মুমিন আল্লাহকেই বেশি ভালোবাসেন এবং এ ভালোবাসা প্রকাশের একমাত্র পথ হলো রাসুলের অনুসরণ, অনুকরণ ও আনুগত্য।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা কি পরিমাণ থাকা উচিত সে কথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন- ‘তোমাদের কেউ সত্যিকারের মু’মিন হবে না, যে পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা, পুত্র ও সকল মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় বলে গণ্য না হবো। ’

রবিউল আউয়াল
মু’মিনের দিলে রাসূলের প্রতি যে মহব্বতের দরিয়া প্রবাহিত হয় তাতে রবিউল আউয়াল মাসে যেন বান ডাকে। মহব্বতের এ জোয়ার এ মাসে সর্বত্রই লক্ষ্য করা যায়। এ মাসে যে সংখ্যক মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপিত হয় আর কোন মাসে হয় না। বড় বড় মাহফিলে, মসজিদে, অফিসে, বাড়িতে, সর্বত্র এ মাসে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) এর ব্যাপক আয়োজন হয় এবং তাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরাম মূল্যবান তকরির পেশ করেন।

মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসা ও তাঁর দেখানো পথ অনুযায়ী জীবন-যাপন করা ঈমানের অংশ। এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী (রহঃ) তার কিতাবে স্বতন্ত্র একটি শিরোনাম এনেছেন, যার অর্থ ‘নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ’। বিশিষ্ট সাহাবী আনাস (রাঃ) ও আবূহুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ওই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার নিকট নিজ পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষ হতে প্রিয় না হবো’। (বুখারী শরীফ : হা: ১৫, মুসলিম শরিফ: হা: ৪৫, মুসনাদে আহমদ: ১২৪৩)।

অতএব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালবাসার অর্থ হলো, তিনি যে সকল গুণে গুণান্বিত ছিলেন সেগুলোর চর্চা করা ও নিজের মাঝে সেগুলোর বাস্তবায়ন এবং যে সকল বিষয় তিনি পরিহার করেছেন ও পরিহার করতে বলেছেন তা পরিহার করা। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনীত দ্বীনকে তোমরা আকড়ে ধর, আর যা নিষেধ করেছেন তা পরিহার কর’। (আল হাশর : ৭)।

কোরআন ও হাদিসে প্রত্যেকটি বিষয় যেভাবে এসেছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামগণ যেভাবে আমল করেছেন বা করতে বলেছেন সেভাবে করা বা মেনে নেয়ার নামই হলো ইবাদত। এতে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি করাকে শরিয়ত সমর্থন করে না। এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালবাসার ব্যাপারে তিনি যেভাবে ভালবাসতে বলেছেন বা সাহাবায়ে কেরামগণ যেভাবে ভালবাসা দেখিয়েছেন সেভাবে ভালবাসাই হলো ইবাদত। এতে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি করা শরিয়ত সমর্থন করে না। পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপার নিষেধও করেছেন। তিনি বলেছেন, খ্রীষ্টানরা যেমনভাবে ঈসা ইবনে মারিয়ামের (আঃ) ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছে, তোমরা তেমনিভাবে আমার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর বান্দা, অতএব, তোমরা বল আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।

আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনই হলো বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ । তিনি সর্বদা উম্মতের কল্যাণে মগ্ন থাকতেন।

তার বর্ণিত হাদিসগুলো কেয়ামত পর্যন্ত উম্মতকে পথের দিশা দেখিয়ে যাবে। ওই সব উপদেশ মালায় হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

১. যদি পরিপূর্ণ ঈমানওয়ালা হতে চাও, তবে উত্তম চরিত্র অর্জন করো।

২. যদি সবচেয়ে বড় আলেম বা জ্ঞানী হতে চাও, তবে তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) অর্জন করো।

৩. যদি সবচেয়ে বেশি সম্মান পেতে চাও, তবে মানুষের নিকট হাত পাতা (অন্যের ওপর ভরসা করা, ভিক্ষা করা) বন্ধ করে দাও।

৪. যদি আল্লাহর নিকট বিশেষ সম্মান পেতে চাও, তবে অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির করো।

৫. যদি রিজিকের প্রশস্ততা চাও, তবে সর্বদা অজুর সঙ্গে থাকার চেষ্টা করবে।

৬. যদি সমস্ত দোয়া কবুল হওয়ার আশা রাখো, তবে অবশ্যই হারাম থেকে বেঁচে থাকবে।

৭. যদি কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে গুনাহমুক্ত উঠতে চাও, তবে সহবাসের পর দ্রুত পবিত্র হয়ে যাবে।

৮. যদি কেয়ামতের দিন আল্লাহর নূর নিয়ে উঠতে চাও, তবে মানুষের ওপর জুলুম
করা ছেড়ে দাও।

৯. যদি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে চাও, তবে আল্লাহর ফরজ বিষয়াদির প্রতি যত্নবান হও।

১০. যদি জাহান্নামের আগুন নেভাতে চাও, তবে দুনিয়ার বিপদাপদে সবর করো।

১১. যদি আল্লাহতায়ালার রাগ বা গোস্বা থেকে বাঁচতে চাও, তবে গোপনে সদকা করো, আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চলো এবং মানুষের ওপর রাগ করা ছেড়ে দাও

আল্লাহতায়ালা সবাইকে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এসব উপদেশ মেনে চলার তওফিক দান করুন।

এক কথায় রাসুল (সা.)-এর আদর্শ হলো অতুলনীয়। পুরো মানবজাতির জন্য তার আদর্শ অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। অতএব, আমাদের উচিত রসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আগমনের এই মাসকে কেন্দ্র করে আমরা বেশি বেশি করে নামাজ পড়া, কোরআন শরীফ তেলাওয়াত, দরুদ শরীফ ও মিলাদ শরীফ পড়ে রাসূলের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তার মহান আদর্শ ও সুন্নতকে আঁকড়িয়ে ধরে ইহকালীন অগ্রগতি ও পরকালীন মুক্তিলাভে কাজ করা। মাহে রবিউল আউয়াল মাসের বরকত, রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মহব্বত ও পরকালীন নাজাত মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে নসিব করুন।

তাই প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আদর্শকে বুকে ধারণ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে হালাল রুজি-রোজগার করে সৎভাবে জীবন যাপন করে তার দেখানো পথে মতে চলে আল্লাহ ও তার হাবীব (সাঃ) এর সন্তুষ্টি অর্জন করাই প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমানদের কাজ।

আমার এ প্রয়াসের কারণে যেন আল্লাহ পাকের পরে প্রিয় নবীর প্রতি প্রেম মুহব্বত সর্বোচ্চ হয় এবং তার সাথে যাতে দুনিয়ায় আর করো তুলনা না চলে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার পর সৃষ্টি জগতে তিনি সুউচ্চ, অতুলনীয়। যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে প্রেরিত। যিনি তৎকালীন আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ অর্থাৎ অন্ধাকার যুগ থেকে আলোর যুগ দান করেছেন। তৎকালে কন্যা শিশু জন্মগ্রহণ করলে তাকে নিষ্ঠুরভাবে মাটিতে জীবন্ত পুতে ফেলত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) আবির্ভাবের পর থেকে তিনিই নারীদেরকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন। তাই নবীর আগমনে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে নারীদের বেশি বেশি খুশি উদযাপন করা ও প্রিয় নবীর প্রতি অসংখ্য অগনিত দরূদ পাঠ করা উচিত।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

উম্মতের মুক্তির দিশারি হিসেবে রহমতস্বরূপ নবীজির শুভাগমন মাঈন উদ্দীন রুবেল মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর