হয়রানির অপর নাম চট্টগ্রাম মেডিকেল আনসার বাহিনী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:০৭
চট্টগ্রাম বিভাগের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৭ সালে। এই মেডিকেলে রয়েছে ২২০০টি সজ্জা এবং ৫৮ টি বিভাগ। বলা যায়,পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের তিন কোটি বত্রিশ লক্ষ দুই হাজার তিনশ’ছাব্বিশ জন (আদমশুমারি তথ্য ২০২২) মানুষ সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মানুষের সুলভ খরচে চিকিৎসা পাওয়ার একমাত্র স্থান এটি। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ একটু কম খরচে ভালো চিকিৎসার আশায় চলে আসেন এই মেডিকেলে।তবে এই মেডিকেলের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী আনসার বাহিনীর বর্বরতা আর অনিয়ম আপনাকে অবাক হতে বাধ্য করবে।
আমার নিজের সাথে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা শেয়ার করি। আমার আন্টি হঠাৎ স্ট্রোক করে তারপর আমরা উনাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল নিয়ে গেলাম। ভর্তি করানো হলো চট্টগ্রাম মেডিকেলে। তখন দুপুরে ১-২ টার মধ্যে হবে সময়টা। ওয়ার্ডে দেওয়ার পর আন্টি যেহেতু স্ট্রোকের রোগী তাই আমাদের বারবার বাহিরে যেতে হচ্ছে বিভিন্ন প্রয়োজনে। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রথমবার যখন ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে পানি আনার জন্য গেলাম আসার পর আর দায়িত্ব রত আনসার আমাকে ডুকতে দিচ্ছিলো না। আমি বললাম আমার রোগী ভিতরে আছেন। আমাকে পানি নিয়ে যেতেই হবে। আনসার বলে রোগীর বেড নাম্বার বলেন আমি পানি দিয়ে আসি। তখন আমি আর কোন উপায় না পেয়ে তার কাছে পানি দিয়ে দিলাম। তারপর যা হলো আমি দেখে অবাক আমার তালতো ভাই আনসারের হাতে একটা ১০০ টাকার নোট গুজিয়ে দিয়ে বললেন ওকে যেতে – আসতে দিয়েন। অথচ আমি তখনও লক্ষ্য করছিলাম উনি অনেক মানুষ কে গেইটের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন যাদের অনেকেই বলছে আমাদের রোগীকে ঔষধ দিয়ে আসতে হবে।
এভাবেই চলছে আমাদের বিভাগীয় সবচেয়ে বড় হাসপাতালের আনসার বাহিনীদের বর্বরতা। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে আনোয়ারার জসিম নামের একজন লোকের কথা। যে ঘটনাটি ফেসবুকে অনেকদিন আলোচনায় ছিল। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা থেকে রোগী নিয়ে আসেন জসিম। রোগীকে ভর্তি করিয়ে ঔষধ কেনার জন্য নিচে নামেন তিনি। ঔষধ কিনে পুনরায় ভবনে উঠতে গেলে আনসার সদস্যরা তার কাছ থেকে পাসকার্ড খুঁজে। আচ্ছা পাসকার্ড সমন্ধে একটু বলি। এই কার্ডটি যদি আপনি মেডিকেল বুথ থেকে সংগ্রহ করেন তাহলে আপনি আনসার বাহিনীকে কোন প্রকার অর্থ না দিয়েই ভবনে উঠানামা করতে পারবেন। তবে দুর্নীতির কথা এই যে পাসকার্ডে এটির মূল ২০ টাকা লিখা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। আবার আপনি যদি চট্টগ্রামের বাহিরের হন তাহলে আপনার থেকে যতটুকু সম্ভব নিয়ে নিবে। আচ্ছা ঘটনায় ফিরে যাই। তো জসিম জানান সে এখনো পাসকার্ড পায়নি। এতেও কোন লাভ হয়নি। কোনভাবেই প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছে না তারা জসিম কে। সাথে থাকা ঔষধ দেখিয়েও মন গলাতে পারেনি আনসারের। চিন্তার বিষয় হচ্ছে প্রতিবাদ করতে গিয়ে উল্টো হেনস্থার শিকার হয় জসিম। দুইজন আনসার সদস্য মিলে মারধর করে তাকে। পরে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পায় জসিম। এই ঘটনার আগেও এইসব বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে আনসার সদস্যদের হাতে মার কিংবা অপমানিত হওয়ার অনেক নজির রয়েছে। এছাড়াও রোগী ওয়ার্ডে রেখে ঔষধ ক্রয়ের জন্য নিচে গিয়ে আবার ওয়ার্ডে আসার সময়ও বাঁধার সম্মুখীন হয় রোগীর স্বজনরা, নানা অজুহাতে তাদের হয়রানি করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। যে আনসারই দায়িত্বরত থাকুক না কেন সবার চিন্তা ভাবনা থাকে কিভাবে টাকা আদায় করবে রোগীর স্বজন ও দর্শনার্থীদের কাছ থেকে। আর সব কিছু নীরবে সহ্য করে যাচ্ছে ভুক্তভোগীরা। প্রতিবাদ করলেই বিপদ।এটাই হচ্ছে আমাদের প্রাণের চট্টগ্রাম মেডিকেলের আনসার বাহিনীর নিত্যদিনের বর্বরতার ইতিহাস।। তাদের অসদাচরণ ও দুর্ব্যবহার রোগী দেখতে আসা স্বজনদের কাছে নিয়মিত ঘটনা। প্রতিবাদও করা যায় না তাদের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ করলেই ভোগান্তির পরিমাণ আরও বাড়ে। এমনকি স্বজনদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগও রয়েছে আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে। এরকম অহরহ আমি, জসিম প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছি মেডিকেলে দায়িত্বরত আনসার বাহিনীর দ্বারা। কিন্তু প্রতিবাদ করার সময় কোথায়।আমরা তো মেডিকেল যাই আমাদের প্রিয়জনদের বাঁচানোর জন্য।অথচ আমাদের এই কঠিন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আমাদের লুটে যাচ্ছে এই আনসার বাহিনীর সদস্যরা।
আচ্ছা একটা বিষয় বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনাদের এসব ভোগান্তি থেকে বাঁচার উপায়ও আমি বলে দিতে পারি। রোগী দেখতে গেলে গেটে তাদের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিলেই স্বাধীন ভাবে উপরে উঠার নামার সুযোগ মিলবে আপনাদের। আপনি জানেন কি এই সব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মহাদয় গন কিরকম উত্তর দিয়ে থাকেন। তারা বলেন ভিজিটিং টাইমে কোন ওয়ার্ডেই রোগীর কোন আত্মীয় স্বজন বা দর্শনার্থী প্রবেশ করার নিয়ম নেই। তবে যদি কোন আনসার সদস্য অর্থের বিনিময়ে এই টাইমের আগে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়, তাহলে সাথে সাথে অভিযুক্ত আনসারের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কথা হচ্ছে সে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি টা কবে বা কখন নেওয়া হবে।একটা প্রবাদ মাথায় চলে আসলো আমার সারা অঙ্গে ব্যাথা দেখেও যদি চিকিৎসক বলেন ব্যাথার সঠিক স্থান নির্নয় করতে পারছি না তাহলে বিষয়টি কীরকম হয়ে দাঁড়ায় না !আসলে এগুলোর সমাধান কোথায়? কেন প্রসাশন কথা বলছে না এইসব বিষয়ে? কেন দেশের অন্যতম সরকারি মেডিকেলে এসব অনিয়ম চোখের সামনে ভেসে উঠছে? দিনশেষে আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের অর্থ সংকটের কারণেই সরকারি মেডিকেল চিকিৎসা নিতে যেতে হয়। তাই আমরা চাই হয়রানি মুক্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল। আসুন সবাই সচেতন হোন।
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম
সারাবাংলা/এসবিডিই
মুক্তমত মো. রাকিব হয়রানির অপর নাম চট্টগ্রাম মেডিকেল আনসার বাহিনী