Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্রেইন-স্টর্মিং

রহমান মৃধা
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:২৮

মনের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, সেই সাথে অস্থিরতা তাড়া করছে। উপায় নেই, তাই ভাবছি একটি সমাধান বের করা দরকার; কিন্তু কিসের সমাধান সেটা এখন মূল প্রশ্ন? আচ্ছা আমরা তো বাংলার মানুষ, জাতি হিসেবে আমরা কেমন? নিজেদেরকে আমরা কীভাবে দেখি বা দেখতে পারি? অন্যদের কী ধারণা আমাদের সম্পর্কে? ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে আমরা নিজেদেরকে কীভাবে মূল্যায়ন করে থাকি? আমাদের ভূদৃশ্য ও পূর্বপুরুষদের ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের কী ধারণা? আমাদের চারিত্রিক গুণাগুণ ও চেহারা সম্পর্কে আমাদের মন্তব্য কী? আমাদের মূল্যবোধ এবং আমাদের আত্মবিশ্বাস সম্পর্কে আমরা কী বলতে পারি? এসব বিষয়ে জানা যেমন গুরুত্বপূর্ণ একটি জাতি হিসেবে, ঠিক তেমনিভাবে গুরুত্বপূর্ণ একজন পৃথক ব্যক্তি হিসেবেও। ব্যক্তিগতভাবে জানতে হবে, আমি কে? আমি কী হতে চাই? কেন হতে চাই? আমার জীবনের উদ্দেশ্য কেমন হওয়া উচিত? অর্থাৎ জাতি এবং ব্যক্তি হিসেবে নির্ধারণ করা উচিত আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য।

বিজ্ঞাপন

আমরা সহজেই নিজেদের তুলনা করতে পারি অন্য একটি ভিন্ন দেশের সঙ্গে। তাদের মৌলিক মূল্যায়নের সঙ্গে অথবা একটি ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্পকারখানার মূল লক্ষ্যের সঙ্গে। এতে পরিষ্কার যে একটি নির্দিষ্ট অভিমুখে তারা তাদের দক্ষতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বা নেওয়ার চেষ্টা করছে। যেমন: টেলিফোন ও কম্পিউটার কোম্পানি অ্যাপেল আইফোনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে, কারণ তাদের ব্যবসার শুরু থেকে তারা তাদের নির্দিষ্ট প্রযুক্তির ওপর বিশ্বাস ও জ্ঞানকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে চলছে। তাদের এই সাফল্যের পিছনে কী জড়িত? তারা শুরু থেকেই তাদের নির্দিষ্ট ধারণার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিল।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে আরেকটি উদাহরণ দিতে চাই তা হলো সুইডেন। দেশ হিসেবে পাহাড় পর্বতে ভরা। ভূ-প্রকৃতিজুড়ে রয়েছে বেশ এক সুন্দর ও মনোরম দৃশ্য। দেশটিতে বেশির ভাগ সময় ঠাণ্ডা এবং বরফে পরিপূর্ণ থাকে বিশেষ করে শীতের সময়। গরমে দেখা মেলে ফুলে-ফলে ভরা এক লাল-সবুজের মেলা, সেই সঙ্গে আছে হাজারও লেক। লোহা, সোনা বা আরো নানা ধরনের মূল্যবান ধাতুর খনি রয়েছে, রয়েছে বিশাল বন-জঙ্গল সারাদেশ জুড়ে। যার থেকে হতে পারে জ্বালানি, কাগজ বা আসবাবপত্র।

সুইডিশ জাতি বেছে নিয়েছে উন্নত প্রযুক্তি। সঙ্গে যে সম্পদ তাদের নিজেদের রয়েছে, তার ওপর তারা বেস্ট প্রাকটিস করে গড়ে তুলছে তাদের দেশ। সঙ্গে তাদের ধ্যানে-জ্ঞানে সেটাই তারা চর্চা করে চলছে সেই শুরু থেকে, তার প্রমাণ আলফ্রেড নোবেল। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে এই বিশাল পাহাড়ের দেশকে যদি ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পারা যায় তাহলে সুইডেনকে বিশ্বের শীর্ষে তোলা যাবে না। তাইতো তিনি তার ধ্যান ও চিন্তার সঙ্গে জ্ঞানের সমন্বয় করে গবেষণার কাজে লেগেছিলেন। তাই সম্ভব হয়েছিল তার পক্ষে ডিনামাইট উদ্ভাবন করা এবং যার সাহায্যে তৈরি হয রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে শহর, নগর, বন্দর ইত্যাদি। আমি ডিনামাইটের মতো কিছু উদ্ভাবন করতে নয় বরং দলগতভাবে কিংবা একা, কোনো কাজ বা সমস্যা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উন্মুক্তভাবে চিন্তা প্রকাশের মাধ্যমে বিশ্লেষণধর্মী পদ্ধতিতে নতুন আইডিয়া বা পরিকল্পনা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো (যাকে বলা হয় ব্রেইন-স্টর্মিং)। সেক্ষেত্রে বর্তমান বাংলাদেশের কিছু ঘটনা থাকবে আলোচনার বিষয়বস্তু।

দেশে ভুরি ভুরি হাসপাতাল আছে চিকিৎসা নেই, কেন্দ্র আছে প্রশিক্ষণ নেই, যন্ত্র আছে ব্যবহার নেই, পরিচালক আছে পরিচালনা নেই, অর্থ আছে হিসাব নেই, দায়িত্বশীল মন্ত্রী আছে জবাবদিহিতা নেই, স্বামী-স্ত্রী আছে ভালোবাসা নেই— শুধু নেই নেই আর নেই, সব থাকতেও কিছুই নেই, শুধুমাত্র দক্ষ পরিচালক এবং পরিচালনার অভাবে, যেমন;

ক) বাংলাদেশ বিমান সারাক্ষণ লসের উপর আছে। যেগুলো বোয়িং বা কার্গো প্লেন রয়েছে তার ২৫% যথাক্রমে ৯০% ক্যাপাসিটির যথাযথ ব্যবহার নেই সত্ত্বেও নতুন যানবাহন কেনার প্রতিশ্রুতি সরকারের, ফ্রান্স থেকে।

হাসপাতালের যন্ত্রপাতির মতো শুধু নতুন নতুন যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে মর্ডান অস্ত্রসমূহ সারাক্ষণ কেনা হচ্ছে। সঠিক এবং দক্ষ পরিচালনার অভাবে সেসব সরঞ্জামে মরিচা পড়ে শেষে অকেজো হয়ে গার্বেজে নিক্ষেপ হচ্ছ, অথচ কোথাও কেউ নেই যে বা যারা একবার চিৎকার করে বলছে — না এসব হতে পারে না।

রাষ্ট্র এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সামান্য অসুস্থ হলেই বিদেশি চিকিৎসা নিতে উড়াল দিচ্ছে। বিশ্ববাসী সহ দেশের জনগণের সামনে ভাষণে বেহায়া, বেপরোয়া ভাবে বলছে —দেশে উন্নতির ঢেউ বয়ে চলছে।

বুঝলাম রাজনীতিবিদরা অপপ্রচারে ব্যস্ত কিন্তু দেশের সব বেতনভুক্ত কর্মচারীরা কিসে ব্যস্ত ভেবেছেন কি? দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সহ সমস্ত মন্ত্রণালয় অপরিকল্পিতভাবে কোটি কোটি টাকার স্থাপনা তৈরি করছে। অথচ সেগুলোর কোনো ব্যবহার নেই ফলে ব্যবহার ছাড়াই নষ্ট হচ্ছে, কারো চোখে পড়ছে না!

দেশে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণ চালু হয়েছে। দেশের মেহনতি মানুষের অর্থের বিনিময়ে যে সমস্ত গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরি হচ্ছে, দিব্বি তারা দেশের সেবাই নিয়োজিত না হয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। কথা ছিলো বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়াররা প্রশিক্ষণ শেষে দেশের হাসপাতালগুলোর যন্ত্রপাতি মেইনটেইনের দায়িত্ব নিবে কিন্তু না কেউ সেটা করছে না, কারণ কী? জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তৈরি করা মেধাবীর সেবায় উন্নত হচ্ছে অন্য দেশ। বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আছে দুর্নীতিবাজদের সন্তান। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার নামে তারা অনেকেই বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন বৈদেশিক মুদ্রা। ওই টাকায় সংশ্লিষ্ট দেশে গাড়ি-বাড়ি কিনে কিংবা ব্যবসায়ী সেজে স্থায়ী বসবাসের (পিআর) অনুমতি নিচ্ছেন। এরপর শুরু হয় তাদের উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন। অবশ্য বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই ‘ফান্ডিং’ (ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরি) কিংবা ‘মেধাবৃত্তি’ নিয়ে পড়তে যান। আবার বাবা-মায়ের সর্বশেষ সম্বল বিক্রি করে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়।

একটি দেশের উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য ও দক্ষ অংশ যখন অন্য দেশে চলে যায় এবং সেখানেই চাকরি করে; ফিরে আসে না, সেটাকে আমরা মেধা পাচার বা ব্রেইন-ড্রেইন বলি। উন্নত প্রযুক্তি ও পরিবেশে লেখাপড়া-গবেষণা আর বৈশ্বিক জ্ঞান ভাণ্ডারের সঙ্গে পরিচিত হতে বিদেশে উচ্চশিক্ষার্থে যাওয়াটা অপরাধ নয়, বরং জরুরি। ফিরে এসে তারা দেশের জনশক্তিকে বৈশ্বিক মানে তৈরি করবে এ আশা আমরা যে করবো সে সাহস হারিয়ে ফেলতে বসেছি, কারণ যথাযোগ্য মর্যাদাপূর্ণ জায়গাগুলো দুর্নীতির ছোবলে বিলুপ্তির পথে, ফলে সুযোগ -প্রকৃত মেধাবীরা পাচ্ছে না বিধায় কেউ আর দেশে ফিরছে না। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, মেধাবীরা বিদেশে থাকলেও তারা দেশের জন্য কাজ করেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ এর উদাহরণ। বর্তমান যুগে এটাকে ‘মেধা পাচার’ না বলে ‘মেধা সঞ্চালন’ হিসাবে দেখা যেতে পারে। তবে তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে দেশকে উদ্যোগ নিতে হবে।

অযোগ্য অকর্মণ্য রাজনীতিবিদরা দেশের গুরুদায়িত্বগুলোর সুযোগ আঁকড়ে ধরে আছে। এর জন্য দায়ী বড় রাজনৈতিক দলগুলো কারণ তারা প্রার্থীর থেকে প্রচুর টাকা নিয়ে নমিনেশন দেয় ফলে যোগ্যতার মান নির্ধারিত হয় টাকার বিনিময়ে, জ্ঞানের বিনিময়ে নয়। যার ফলে এরা ক্ষমতায় গেলে প্রথমেই তাদের নমিনেশন কিনতে যে টাকা খরচ হয় সেটা সুদেমূলে তুলতে চেষ্টা করে। বুঝতে পারছেন তাহলে কেন দেশের পরিকাঠামোর কোনো উন্নতি হচ্ছে না?

খ) আবার দেখবেন দক্ষ ও যোগ্য প্রশাসন গড়ে তুলতে হাতে বড় প্রকল্প নিচ্ছে সরকার। যেমন জেনেছি ২৪১ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় সরকারের ১ হাজার ৭৮০ জন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে প্রশিক্ষণ ও ডিগ্রি অর্জন করবেন। এ তালিকায় রয়েছেন চাকরি জীবনের শেষ সময়ে থাকা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সিনিয়র সচিবরাও। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের আওতায় ৭৫ জন সচিব ও সিনিয়র সচিবও করবেন বিদেশ সফর। যদিও সফর শেষে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সময় পাওয়ার আগেই অবসরে যাওয়ার বড় সম্ভাবনা রয়েছে তাদের অনেকের।

ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করা কর্মকর্তাদের একটি অংশ চাকরি জীবনের শেষদিকে সচিব হন। তাদের মধ্যে যারা আগে সচিব পদে পদোন্নতি পান, তারা পরে সিনিয়র সচিব হন। অতীতে দেখা গেছে, অনেক কর্মকর্তা সচিব বা সিনিয়র সচিব হওয়ার পর অল্প কয়েক মাসের মধ্যে অবসরে গেছেন। তাদের কেউ কেউ পরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেও বাকিরা এ সুযোগও পান না। ফলে সচিব বা সিনিয়র সচিব থাকাবস্থায় নেওয়া তাদের প্রশিক্ষণ বা ডিগ্রি অর্জন থেকে প্রশাসনের খুব একটা সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থাকে না। তা সত্ত্বেও ৭৫ জন সচিব-সিনিয়র সচিব যাবেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রিফ্রেশার্স কোর্স’ করতে।

বলা হচ্ছে, ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ ও যোগ্য প্রশাসনিক কাঠামো গড়া জরুরি। এজন্য বিদেশে উচ্চ প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।

আদৌ এসব প্রশিক্ষণ দরকার আছে কি না? থাকলেও কী ধরনের মনিটরিং ব্যবস্থা রয়েছে যার মাধ্যমে জানা যাবে যে কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসে সেই প্রশিক্ষণ কাজে লাগাতে পারছেন, নাকি পারছেন না? তা না হলে প্রশিক্ষণের নামে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ হবে, সরকারের হবে অর্থের অপচয়। যাই হোক না কেন সচেতন জাতি হিসেবে পুঁথিগত বিদ্যার সঙ্গে আমাদের অন্য বিষয়ের উপরও গুরুত্ব দিতে হবে।

গ) বর্তমান বিশ্বে যেমন জামাইকা এবং কেনিয়া দৌড় প্রতিযোগিতা এবং কোরিয়া তীরন্দাজিতে (archery) আধিপত্য করে চলেছে। কী সিক্রেট কারণ রয়েছে এর পেছনে? এ দেশগুলো বিশ্বের ধনী দেশের সারিতে নয় তারপরও তাদের মোটিভেশন, ডেডিকেশন এবং সর্বোপরি স্টেপ বাই স্টেপ প্রচেষ্টা যা শিশুশিক্ষা থেকে শুরু এবং শেষ অলিম্পিক স্বর্ণপদক দিয়ে। এদের রক্তে জেনুইন দেশপ্রেম এবং হেয়ার অ্যান্ড নাও কনসেপ্ট জড়িত।

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নানা সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বড় সমস্যা হলো প্রতিভাবানদের হতাশার মধ্যে ডুবিয়ে মারা। কারণ সঠিকভাবে প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর মতো যোগ্য ব্যক্তির অভাব রয়েছে। দেশের বড় পদগুলো যারা দখল করে মাসে মাসে বেতন তুলছে তারা জানে না তাদের দায়িত্ব কী? যারা দায়িত্ব দেবে তারাও জানে না কী করতে হবে। সব মিলে হাওয়ালে বৃন্দাবন।

আমি নিজে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে যেমন টেনিস ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি কিন্তু তাদের থেকে কোনো সাপোর্ট পাইনি। ভেবেছিলাম নিজের ছেলে ও মেয়েকে দিয়ে টেনিস ট্র্যাডিশনকে তুলে ধরবো বাংলাদেশে। কিন্তু ফেডারেশন কোনো সাহায্য করেনি, কিছুই করেনি। যে সুযোগ বাংলাদেশ হারালো শত বছর চেষ্টা করেও সেটা পাবে না, যা আজ দুঃখের সঙ্গে জানাতে বাধ্য হলাম।

ইদানীং অনেকেই প্রশ্ন করতে শুরু করেছে অলিম্পিকে পদক না জেতা সবচেয়ে জনবহুল দেশটির নাম কী? উত্তর—বাংলাদেশ। জনসংখ্যা বা আয়তনের ভিত্তিতে সব সময় পদক আসে না অলিম্পিকে, আবার আসে। যেমন চীন এ বছর সবচেয়ে বেশি পদক পেয়েছে অন্যদিকে প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের দেশ ভারত তেমন কোনো আশানুরূপ ফলাফল দেখাতে পারেনি।

বাংলাদেশ কবে একটি অলিম্পিক পদক জিতবে, এমনটি ভাবনা আসতেই পারে সবার মনে। সম্ভাবনাময় ক্রীড়াবিদদের ধরে রাখতে হলে তাদের দিতে হবে জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা, সেটা কি দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে? তাছাড়া দেশে খেলাধুলার সংস্কৃতিও হারিয়ে যাচ্ছে। ক্রীড়াপ্রেমীদের অনেকেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত কিন্তু ক্রিকেট বাদে নিজ দেশের অন্য খেলাধুলা নিয়ে অনাগ্রহ দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে।

দেশের ক্রীড়া প্রশাসনকে বুঝতে হবে, অলিম্পিকে একটি পদক জেতা অনেকটা হিমালয়ের সর্বোচ্চ পাহাড়ে ওঠার মতো। তাই অনেক বেশি চেষ্টা করা দরকার। শুধু দল বেধে অলিম্পিকে গেলাম আর পরাজিত হয়ে ফিরে এলাম, এভাবে চলতে পারে না অনির্দিষ্টকাল ধরে। যদিও বলা হয় অলিম্পিকের মূলমন্ত্র জয়লাভ নয়, অংশগ্রহণই বড় কথা, তারপরও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ‘অংশগ্রহণই বড়’ এই কথার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছ, সেটার দিকে কড়া নজর দিতে হবে। ক্রীড়াঙ্গনে চলছে রাজনৈতিক শক্তির দৌরাত্ম্য। দেশে চলছে একনায়কতন্ত্র শাসন যার ফলে কোথাও প্রতিযোগিতার চিহ্নমাত্র নেই। এভাবে চলতে থাকলে দেশের পরিকাঠামো একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাবে।

অনেক অযোগ্য ব্যক্তি ফেডারেশনের চেয়ার দখলে রেখেছে। ফলে খেলাধুলায় উন্নতি নেই। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসেই বাংলাদেশ এখনো পেছনের বেঞ্চের সারিতে, অলিম্পিক তো অনেক দূরের পথ। যদিও বাংলাদেশসহ ৫০টির বেশি দেশ আজও পারেনি অলিম্পিকে পদক জিততে। তারপরও আমরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করতে পারি।

যদি বলি ২০২৮ অলিম্পিকে আমরা সোনা জিততে চাই। আমার আশা আর বাস্তবতার মধ্যে দুর্ভেদ্য কোনো প্রাচীর রয়েছে এমনটিই বলবে সবাই। আমি মনে করি এই প্রাচীর নিশ্চয়ই ভাঙা সম্ভব। তবে হয়তো ২০২৮ নয়, আরও সময় লাগতে পারে। দরকার শুধু একটা মহাপদক প্রকল্প হাতে নেয়া। যেমনটা ২০১০ সালে দীর্ঘ মেয়াদে অনুশীলনের ব্যবস্থা করায় দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে ৩ থেকে এক লাফে ১৮টি সোনা জেতে বাংলাদেশ।

আমি এভাবে শত শত অপ্রিয় সত্য ঘটনা তুলে ধরতে পারব, কিন্তু তাতে কি সমস্যার সমাধান হবে? সরকার এখন সম্পূর্ণ অস্থিতিশীলতার মধ্যে যার ফলে কোনো ভালো উপদেশও গ্রহণযোগ্যতা পাবে না সেখানে। দরকার দেশে স্থিতিশীলতার এবং সেটা সম্ভব একটি অবাধ এবং সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে। তারপর একে একে সব বিষয়গুলো নিয়ে সংসদে বসে সঠিক উদ্যোগ এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সঠিক সিদ্ধান্ত এবং উদ্যোগ নিলে এক সময় সফল আসতে বাধ্য।— If you change your mind, I’m the first in line to help you Bangladesh.

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

সারাবাংলা/এসবিডিই

ব্রেইন-স্টর্মিং মুক্তমত রহমান মৃধা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর