Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঈদে মিলাদুন্নবীর পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক কেন?

এ জেড এম আব্দুস সবুর
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৪১

ঈদে মিলাদুন্নবী হচ্ছে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ উৎসবমুখর দিন। সারা বিশ্বের বহু মুসলিম অত্যন্ত জাঁকজমক, ভক্তি ও মর্যাদার সাথে আরবী বৎসরের ৩য় মাস রবিউল আউআল মাসের ১২ তারিখে এই ঈদে মিলাদুন্নবী বা নবীর জন্মের ঈদ পালন করেন। কিন্তু অধিকাংশ মুসলিমই এই ‘ঈদের’ উৎপত্তি ও বিকাশের ইতিহাসের সাথে পরিচিত নন। যে সকল ব্যক্তিত্ব এই উৎসব মুসলিম উম্মার মধ্যে প্রচলন করেছিলেন তাদের পরিচয়ও আমাদের অধিকাংশের অজানা রয়েছে। নবীজির জীবদ্দশায় এ ধরনের উৎসবের আয়োজন করা না হলেও তার মৃত্যুর কয়েকশ বছর পর প্রথমবারের মতো উদযাপন করা হয় ঈদে মিলাদুন্নবী। ইসলামি পণ্ডিতদের মাঝে অনেক বিতর্ক থাকলেও কালক্রমে এই উৎসবটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

কোনো কোনো আলেম হিজরি সপ্তম শতাব্দী অর্থাৎ চালু হওয়ার পর থেকেই ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের বিরোধিতা করেছেন এই যুক্তিতে যে, সাহাবিরা, তাবিয়িরা তাদের প্রচণ্ড নবীপ্রেম সত্ত্বেও কখনো তাদের আনন্দ এভাবে উৎসব বা উদযাপনের মাধ্যমে প্রকাশ করেননি। তাই পরবর্তী যুগের মুসলমানদের জন্যও তা শরিয়ত-সংগত হবে না। পরবর্তী যুগের মুসলমানদের উচিত প্রথম যুগের মুসলমানদের মতো সার্বক্ষণিক সুন্নত পালন, সিরাত আলোচনা, দরুদ সালাম ও ক্বলবি ভালোবাসার মাধ্যমে মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানানো, অমুসলিমদের অনুকরণে জন্মদিন পালনের মাধ্যমে নয়।

বিজ্ঞাপন

তাদের যুক্তি হলো-এসব অনুষ্ঠানের প্রসার সাহাবিদের ভালোবাসা, ভক্তি ও আনন্দ প্রকাশের পদ্ধতিকে হেয় প্রতিপন্ন করার মানসিকতা সৃষ্টি করবে। কারণ যারা এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভালোবাসা ও আনন্দ প্রকাশ করবেন, তাদের মনে হতে থাকবে যে, সাহাবিদের মতো নীরব, অনানুষ্ঠানিক, সার্বক্ষণিক ভালোবাসা ও ভক্তি প্রকাশ পদ্ধতির চেয়ে তাদের পদ্ধতিটাই উত্তম।

সেই যুগের এসব নিষেধকারীদের মধ্যে রয়েছেন সপ্তম-অষ্টম হিজরি শতাব্দীর অন্যতম আলেম আল্লামা তাজুদ্দিন উমর ইবনু আলি আল-ফাকেহানি, আল্লামা আবু আব্দুল্লাহ মুহম্মদ ইবনু মুহম্মদ ইবনুল হাজ্ব, অষ্টম হিজরি শতকের প্রখ্যাত আলেম আবু ইসহাক ইব্রাহিম ইবনু মূসা ইবনু মুহাম্মাদ আশ-শাতিবি (মৃত্যু ৭৯০ হি.)-সহ বেশ কিছু উলামায়ে কেরাম।

অন্যদিকে ঈদে মিলাদুন্নবী (স) উদযাপনের পক্ষাবলম্বীরা তাদের মতের সপক্ষে দলিল হিসেবে সুরা আলে ইমরানের ৮১নং আয়াতটি উল্লেখ করেন। এ আয়াতে আল্লাহ্তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘হে প্রিয় রাসুল! আপনি স্মরণ করুন ওইদিনের ঘটনা যখন আল্লাহপাক আম্বিয়ায়ে কিরামদের কাছে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন যে, তোমাদের কিতাব ও হিকমত যা কিছু দিয়েছি, অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার প্রত্যয়নকারীরূপে যখন একজন রাসুল আসবেন তখন তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ইমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে।’

দলিল হিসেবে তারা সুরা ইউনুসের ৫৭ ও ৫৮নং আয়াতটিও উল্লেখ করেন। এ আয়াতে কারিমায় আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানবকুল! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং অন্তরসমূহের বিশুদ্ধতা, হেদায়েত এবং রহমত ইমানদারদের জন্য। হে নবী আপনি বলুন, আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তার দয়াপ্রাপ্তিতে তারা যেন আনন্দ প্রকাশ করে। এটা তাদের সব ধনদৌলত সঞ্চয় করা অপেক্ষা শ্রেয়।’

পরিশেষে বলা যায়, ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন নিয়ে এখনো বিতর্ক থাকলেও তা মুসলিমদের মধ্যে কালক্রমে উৎসবে পরিণত হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে এ দিনটি কালক্রমে উৎসবে রূপ নিয়ে প্রতিবছর সাড়ম্বরে পালিত হয় এবং বাংলাদেশসহ কতিপয় মুসলিম দেশে এ দিনটি সরকারি ছুটির দিন।

লেখক: আইনজীবী

সারাবাংলা/এসবিডিই

ঈদে মিলাদুন্নবীর পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক কেন? এ জেড এম আব্দুস সবুর মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর