একনজরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:২২
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হলো এক ধরনের হাইওয়ে যা ভূপৃষ্ঠের উপরে নির্মিত হয়। এটি সাধারণত উচ্চমাত্রার যানবাহন চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েগুলি সাধারণত শহরের কেন্দ্রস্থলগুলিতে নির্মিত হয় যেখানে যানজট একটি বড় সমস্যা। এগুলি যানজট কমাতে, যাতায়াত ব্যবস্থাকে উন্নত করতে এবং পরিবেশ দূষণ কমাতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশে প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি ২০২৩ সালের ২রা সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হয়। এটি ঢাকার বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত চলবে প্রথম পর্যায়ে। এটি একটি চার লেনের সড়ক যা ট্রাক, বাস এবং অন্যান্য ভারী যানবাহনের জন্য নির্মিত। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল মহাসড়ক নির্মাণে নেয়া এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিরবচ্ছিন্ন চলাচল নিশ্চিত করা। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটির চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু জমি বুঝে না পাওয়া, নকশায় জটিলতা ও অর্থায়নের অভাবে এর নির্মাণ কাজে কেটে গেছে এক যুগের বেশি সময়। এ কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সরকারের অন্যতম ধীরগতির প্রকল্পের নামও পায়। তবে কয়েক বছর ধরে প্রকল্পটির বিমান বন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত কাজে গতি পায় কয়েকগুণ। পূর্ণাঙ্গ এক্সপ্রেসওয়েটি হবে ফার্মগেট, তেজগাঁও, মগবাজার হয়ে চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত। মোট ২০ কিলোমিটার সড়কের সাড়ে ১১ কিলোমিটার পথ খুলে দেয়া হচ্ছে প্রথম পর্যায়ে।
তাছাড়া এটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কাওলা) থেকে শুরু করে মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার হয়ে কুতুবখালী গিয়ে শেষ হবে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনে কাজ শেষ করার লক্ষ্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের মেইন লাইনের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিমি এবং র্যাম্পের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক শূন্য কিমি। র্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৫ কিমি। এ অংশে ওঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প (এয়ারপোর্ট-২, কুড়িল-৩, বনানী-৪, মহাখালী-৩, বিজয় সরণি-২ ও ফার্মগেট-১) রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি র্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
এক্সপ্রেসওয়েটি তৈরি হচ্ছে সরকারের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে। মূল এক্সপ্রেসওয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠা-নামার জন্য ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প (সংযোগ সড়ক) রয়েছে। র্যাম্পসহ এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েগুলির বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: যানজট সমস্যা কমানো যবে এর মাধ্যমে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েগুলি রাস্তার যানবাহনগুলির সাথে মিশে না যাওয়ায়, এগুলি যানজট কমাতে সাহায্য করে। এটি যানবাহন চলাচলের সময় কমিয়ে দেয় এবং দূষণ হ্রাস করে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। আগে যেখানে বিমানবন্দর দিয়ে রাজধানীতে প্রবেশের পর যানজটের কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে কত সময় লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলার উপায় ছিলো না। তবে উড়াল সড়ক দিয়ে এই পথ পাড়ি দিতে গাড়িতে সময় লাগবে ১০ থেকে ১২ মিনিট। ফলে ঢাকাবাসীর কর্মঘণ্টা বাঁচবে।
যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হবে দেশের। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েগুলি যাতায়াত ব্যবস্থাকে উন্নত করে। এগুলি দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য যাতায়াত ব্যবস্থা প্রদান করে। এগুলি শহরের বিভিন্ন অংশকে সংযুক্ত করে এবং যানবাহন চলাচলের জন্য আরও বিকল্প তৈরি করে।
পরিবেশ দূষণ কমে যাবে দেশে । এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েগুলি রাস্তার যানবাহনগুলির সাথে মিশে না যাওয়ায়, এগুলি বায়ু দূষণ এবং শব্দ দূষণ কমাতে সাহায্য করে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রাজধানীর উত্তর অংশে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল। সেখানকার বেশিরভাগই তৈরি পোশাক শিল্প। এসব রপ্তানি পণ্য রাজধানীর যানজট পেরিয়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরসহ নির্ধারিত গন্তব্যে যাওয়া ছিল বেশ ঝুকির বিষয়। তবে সেই কষ্টের দিন ফুরাবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। এই উড়াল সড়ক ধরে রাজধানীর চিরায়ত যানজট এড়িয়ে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে রপ্তানি পণ্যবাহী যানবাহন। এতে দেশের অর্থনৈতিক চাকা আরও সচল হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই উড়াল সড়ক দেশের জন্য নতুন দিগন্তের দুয়ার খুলে দেবে এবং সরকারের যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিশন রয়েছে, সেই লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে। এর ফলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ রাজধানীবাসীর দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িত অনেক বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। শহরের কেন্দ্রস্থলে যানবাহন চলাচলের জন্য আরও জায়গা তৈরি করা: এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েগুলি শহরের কেন্দ্রস্থলে যানবাহন চলাচলের জন্য আরও জায়গা তৈরি করে। এটি রাস্তার যানবাহনগুলির জন্য আরও স্থান তৈরি করে এবং পথচারীদের জন্য আরও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে। যেখানে বাংলাদেশে যানজট একটি বড় সমস্যা। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েগুলি যানজট কমাতে এবং যাতায়াত ব্যবস্থাকে উন্নত করতে একটি কার্যকর উপায় হতে পারে।
তাছাড়া উন্নত বিশ্বের শহরগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা যেখানে কমিয়ে আনা হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে ঘটছে এর উল্টোটি। ঢাকায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে প্রায় ৪০টি নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি। বাড়ছে মোটরসাইকেলের সংখ্যাও। ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে রাজধানীতে বাড়ছে যানজট-বিশৃঙ্খলা। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যক্তিগত গাড়ি যাদের রয়েছে তারা যখন এই উড়াল সড়ক ব্যবহার করবেন তখন নিচের সড়কের চাপ অনেকটাই কমবে।
এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েগুলির বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: নির্মাণ ব্যয় হচ্ছে অনেক বেশি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েগুলি সাধারণত ভূপৃষ্ঠের উপর নির্মিত হাইওয়েগুলির চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল। কারণ এগুলির জন্য আরও বেশি উপাদান এবং শ্রম প্রয়োজন। শহরের দৃশ্যপটকে পরিবর্তন হয়ে যাবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েগুলি শহরের দৃশ্যপটকে প্রভাবিত করতে পারে। তারা শহরের আকাশকে আচ্ছাদন করতে পারে এবং শহরের সৌন্দর্যকে নষ্ট করতে পারে।
কিছু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলাচলের জন্য টোল প্রদান করতে হতে পারে। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য একটি অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে। দুর্ঘটনার ঝুঁক বাড়তে পারে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েগুলিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ভূপৃষ্ঠের উপর নির্মিত হাইওয়েগুলির চেয়ে বেশি হতে পারে। এটি কারণ এগুলিতে রাস্তার যানবাহনগুলির সাথে ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েগুলি নির্মাণের সময় এবং ব্যবহারের সময় পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নির্মাণের সময়, এগুলি বায়ু দূষণ এবং শব্দ দূষণের কারণ হতে পারে। ব্যবহারের সময়, এগুলি শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। বাংলাদেশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েগুলির নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও, এই অসুবিধাগুলি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া বাংলাদেশে আরও কয়েকটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলি ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য শহরগুলিতে নির্মাণ করা হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই