Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেখ হাসিনার রাষ্ট্র ও উন্নয়ন দর্শন

রনি অধিকারী
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:২১

রাষ্ট্রের দর্শন সবাই দিতে পারে না। দর্শনের সাথে উন্নয়নের সম্পর্কও সবাই সৃষ্টি করতে পারে না। কেউ কেউ পারেন। তাদেরই একজন বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। যেখানে বঙ্গবন্ধুর দর্শন বাস্তবায়নের অসমাপ্ত বেদনার অঙ্গীকার, সেখান থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের দর্শনের সূত্রপাত। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা থেকে রূপকল্প ২০২১ থেকে ২০৪১ বাস্তবায়নের দুঃসাহসী যাত্রা।

বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে একটি আদর্শ বা দর্শন দিয়েছিলেন, যা আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা শক্তি দিতে পারেনি। বাঙালী জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে এই দর্শনের সূত্রপাত ঘটে। যেখানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে একত্রিত করে উদার ও সর্বজনীন মনোভাব গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করা হয়। এ দর্শনের আরেকটি দিক ছিল তা হলো, মহা অর্জনের জন্য মহাত্যাগ দরকার। রাষ্ট্র গঠনে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে সামগ্রিক স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়াই ছিল এটির মূল উদ্দেশ্য। যেখানে দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মানুষ তার ত্যাগের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। তবে অপরাজনীতির আগ্রাসনের ফলে অনেকেই বঙ্গবন্ধুর দর্শনভিত্তিক রাজনীতির সুষম ধারণা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েন। দর্শনের জায়গায় সুবিধাবাদিতা জায়গা করে নেয়। যেখানে সুবিধাবাদিতা থাকবে, সেটাকে কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শভিত্তিক রাজনীতি বলা যাবে না। বরং এটাকে রাজনীতির আগাছা ও পরগাছা বলা যায়। রাজনীতিতে রাজনীতিবিদরা ভুল করতে পারেন, কিন্তু জনগণ যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেয় তার নেতিবাচক প্রভাব রাষ্ট্রকে বহন করতে হয়। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শভিত্তিক রাজনীতির শক্তি সরকারে রয়েছে। এখানে ইতিবাচক রাজনৈতিক ফলাফলের প্রতিফলন ঘটেছে। তবে এরমধ্যে স্বার্থভিত্তিক আগাছাও জন্ম নিয়েছে, যা অনেক সময় ইতিবাচক দিকগুলোকে কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত করছে। তবে এরমধ্যে সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, আদর্শকে ধারণ করে কিভাবে উন্নত রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়া যায়, সেটি ভাবার মতো নেতৃত্বও গড়ে উঠেছে। সেটি গড়ে তুলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে সফল করার যে ঘটনা, সেখানে আশাবাদী মনোভাব তৈরির জায়গাটা অনেক বেশি প্রভাব ফেলেছে মানুষের ওপর। এই সিদ্ধান্ত যে একটি জাতির মনোভাব ইতিবাচকভাবে বদলে দিয়েছে, তা কি কখনো আমরা ভেবেছি? হয়তো এটি নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা হতে পারে। আকাশ, মাটি, পানি, পরিবেশ সবখানেই প্রধানমন্ত্রীর কৌশল আর পরিকল্পনা সফল হয়েছে। এত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হয়েও আমরা রোহিঙ্গাদের আমাদের দেশে জায়গা করে দিয়েছি। একসময় মনে হয়েছিল এই সংকটে আমাদের সঙ্গে কেউ নেই। কিন্তু এখন তো সবাই আমাদের সঙ্গে। এটি সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিচার-বিবেচনায়। এ সমস্যার সমাধান কি হবে সেটির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের রূপরেখাও এসেছে প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবনী চিন্তাধারা থেকে। তিনি কোনো বিজ্ঞানী নন। কিন্তু তার অভিজ্ঞতা ও দেশকে আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করার দর্শন তার মধ্যে উদ্ভাবনী শক্তি সৃষ্টি করেছে। তিনি জানেন উদ্ভাবন যত বেশি হবে, দেশ তত বেশি এগিয়ে যাবে। নিজে আইডিয়া তৈরি করেন, আমাদের দেশের সব স্তরের মানুষকে আইডিয়া তৈরির মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জোগান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পায়নের গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে সারাদেশে বিশেষ কয়েকটি শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এরই মধ্যে এগুলোর কয়েকটির প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৃষ্টিশীল রাষ্ট্র উন্নয়নের ভাবনার মাধ্যমে এই বিষয়টি সম্ভব হয়েছে। উল্লেখ্য, তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে এই ঘোষণাটি এসেছে। তা হলো-মাথাপিছু আয়, জনসম্পদ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। অর্থনীতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয়। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাময়িক হিসাবের চেয়ে বেড়েছে। একইসঙ্গে মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। সাময়িক হিসাবে যা ছিল ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৬০২ মার্কিন ডলার। চূড়ান্ত হিসাবে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬১০ ডলার।

‘২০৫০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ২০৫০ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো উন্নত ও অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলো ছাড়িয়ে যাবে। ২০৫০ সালে কতটা এগোবে বাংলাদেশের অর্থনীতি? এ নিয়ে বৈশ্বিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে ২০৫০ সালে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। আর ওই ধাপে এগোলে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হবে বিশ্বে ২৮তম। অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আগামী ৩৪ বছরে কতটা শক্তিশালী হবে, তা নিয়ে গবেষণা করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপারস। প্রতিষ্ঠানটির ‘সুদূরপ্রসারী ২০৫০ সাল নাগাদ কিভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে?’ শীর্ষক সাম্প্রতিক গবেষণায় বাংলাদেশ নিয়ে এমন আশাবাদের তথ্য উঠে এসেছে।

২০২৪ সালে জাতীয় গ্রিডে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করার অঙ্গীকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বপ্নের পরমাণু যুগে প্রবেশ করেছে। কনভেনশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার কৃষির সার্বিক উন্নয়নে কৃষিবান্ধব নীতি প্রণয়ন ও সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করায় দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী ধারণার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তিনি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনে নতুন উপাদান চিহ্নিত করেছেন, যা আগে সেভাবে ভাবা হয়নি। এ ধারণাটি যে কিছু মৌলিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে ঘটছে, তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টির পারস্পরিক সমন্বয় ঘটেছে এ বহুমাত্রিক চিন্তাধারায়।

‘গ্লোবাল ইনোভেশন এক্সচেঞ্জ’ (জিআইই) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ‘মোস্ট ইনোভেটিভ পলিটিশিয়ান’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি সমগ্র উদ্ভাবনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে গবেষণামূলক কার্যক্রম করে থাকে। উদ্ভাবন ও চিন্তাশীলতার সৃজনশীল আইডিয়াগুলো সংগ্রহ করে সেই বিষয়গুলো ম্যাগাজিনে প্রকাশ করে। তাদের সাম্প্রতিকালের গবেষণার তথ্য-উপাত্ত বলেছে, বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের মধ্যে উদ্ভাবনী ক্ষমতা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। তারা রুটিনমাফিক কাজ করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এমন কোনো সরকার প্রধান দেখা যাচ্ছে না, যাদের উদ্ভাবনী চিন্তা রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রভাব রেখেছে। জিআইই তাদের বিশ্লেষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিনটি উদ্যোগকে অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ ও ইনোভেটিভ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা অন্য দেশগুলো তাদের দেশে প্রয়োগ করতে অনুপ্রাণিত হয়েছে। সংস্থাটি ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’-এর ধারণাটিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে ইনোভেটিভ আইডিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিতীয় উদ্ভাবনী চিন্তার বাস্তবায়ন বলা হচ্ছে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’, যার মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক চমকপ্রদ পথ আবিষ্কার করা হয়েছে। তার তৃতীয় উদ্ভাবনী চিন্তার নাম ডিজিটাল বাংলাদেশ। হতদরিদ্র, অর্ধশিক্ষিত মানুষের হাতে তথ্য-প্রযুক্তি পৌঁছে দিয়ে কার্যত শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদানে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে বদলে গেছে বাংলাদেশের চিত্র। প্রধানমন্ত্রী শুধু নিজের মধ্যেই এই সৃষ্টিশীলতা ধারণ করেননি, মানুষের মধ্যেও এটা যাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে তার নিজস্ব পরিকল্পনা ও নেতৃত্বের মাধ্যমে তা অব্যাহত আছে। প্রকৃত অর্থে যাঁর মধ্যে মানবতাবোধ আছে, সততা আছে, একটা সুন্দর মন আর প্রত্যয় আছে তিনিই নতুন কিছু ভাবতে পারেন, উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

রূপকল্প ২০৪১, উন্নত দেশের পথচিত্র: ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন, যা একদিকে দীর্ঘ ২১ বছর পরে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ এবং পাশাপাশি তাকে তার পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়নের পথ তৈরি করে দেয়। বিষয়টি মাথায় রেখে এবং উন্নয়নের জন্য তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির সংমিশ্রণে শেখ হাসিনা ২০০১ সালে ‘ভিশন ২০২১’ নামক একটি রূপরেখা প্রস্তাব করেছিলেন।

এই দৃষ্টিভঙ্গির মূল লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘একটি মধ্যম আয়ের জাতি’ হিসেবে গড়ে তোলা, যা বিশ্বব্যাংক নির্ধারিত সময়সীমা থেকে তিন বছর আগে। এ ছাড়া তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ‘উন্নত’ দেশে রূপান্তর করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনিও বঙ্গবন্ধুর মতো স্বপ্নদ্রষ্টা নেতা। তিনি বাংলাদেশকে এশিয়ার সুইজারল্যান্ডে রূপান্তর করার জন্য মুজিবের দৃষ্টিভঙ্গিটি উপলব্ধি করতে পারেন। তার প্রদত্ত রূপরেখা ‘দৃষ্টিভঙ্গি ২০২১’।

এবং জাতিসংঘের এজেন্ডা ২০৩০ বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে মিল রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ প্রতিষ্ঠার এজেন্ডাটি এখন বিশ্বব্যাপী স্পষ্ট হচ্ছে। উন্নত দেশে যেতে রূপকল্প ২০৪১-এর রোডম্যাপ বা পথচিত্র তৈরি করেছে সরকার। আগামী ২০ বছরের জন্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় এমন সব সংস্কার কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে যার ফলে সার্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন সূচিত হবে। ফলে ওই সময়ে বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৯.৯ শতাংশ।

মানুষের গড় মাথাপিছু আয় গিয়ে ঠেকবে সাড়ে ১২ হাজার ডলারে। চরম দারিদ্র্য বলতে কিছু থাকবে না। অর্থাৎ তা শূন্যে নেমে আসবে। মাঝারি দারিদ্র্যও কমে আসবে ৫ শতাংশের নিচে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের তৈরি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১-এর সারসংক্ষেপ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সারসংক্ষেপে বলা হয়, উচ্চ প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে উঠে টেকসই সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। এ জন্য প্রয়োজন ফলপ্রসূ করব্যবস্থা ও ব্যয় সংকোচন নীতিমালা। তার সঙ্গে যোগ হয় সঞ্চয়, প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা, পরিবহন, বাণিজ্য, জ্বালানি ও গুণগত বিনিয়োগ। এর সঙ্গে আরো অনেক কিছুর মেলবন্ধন ঘটিয়ে গড়ে উঠে একটি উন্নত দেশের ভিত্তি।

২০৪১ সালে মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে। বাণিজ্য কাঠামোও ব্যাপকভাবে পরিবর্তন আনা হবে। পোশাক খাতে যেভাবে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, একই ভাবে অন্য খাতে প্রণোদনা দিয়ে রপ্তানি বহুমুখীকরণ শক্তিশালী করা হবে। উৎপাদন, বণ্টন থেকে শুরু করে জাহাজীকরণ পর্যন্ত সর্বস্তরে একটি সহজ, সুন্দর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা হবে। বর্তমানে যেভাবে একটি শক্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তোলা হয়েছে, এ ধারা আরো শক্তিশালী করা হবে। বিনিয়োগকে ওই রূপকল্পেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তা গড়ে ৩৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে।

অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়, উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ ও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের মাধ্যমে এটা করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কৃষি খাতে যে প্রবৃদ্ধির ধারা বিশেষ করে চালের যে উচ্চ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি তা আরো বেগবান করা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উন্নয়নেও বহুমুখী কার্যক্রমের কথা বলা হয়েছে। দেশ যত উন্নত হবে, ক্রমেই কমে আসবে বাণিজ্যসুবিধা। উচ্চ জিডিপি অর্জনে তখন নারীদের আরো কাজের সুযোগ করে দেওয়া হবে। পোশাক, পাদুকা, ইলেকট্রনিকস শিল্পে তাদের আরো বেশি কর্মসংস্থান করা হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাতে ২০৪১ সাল নাগাদ ৯২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং বছরে গড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হবে ৪৬০০ মেগাওয়াট।

ওই সময়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে সম্ভাব্য ক্ষতির চেয়ে বরং উপকার বাড়বে ৫০ শতাংশ। একই ভাবে উৎপাদন উপকরণ থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অবদান ০.৩ শতাংশে উন্নীত করা হবে ৪.৫ শতাংশে। নগরায়ণে ব্যাপক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা করা হয়েছে রূপকল্প ২০৪১-এর জন্য। বলা হয়েছে, এ খাতে বিনিয়োগ কর্মসূচি জিডিপির ২.৪ শতাংশ থেকে ২০৩১ সালে ৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালে তা ৭ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে। একই সময়ে জনসংখ্যার গুণগত মানোন্নয়ন করা হবে যাতে তা অর্থনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তখন সাক্ষরতা হবে শতভাগ, ১২ বছর বয়সীদের জন্য সর্বজনীন অবৈতনিক শিক্ষা, সর্বজনীন সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যবীমা ও সবার জন্য পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক কার্যক্রমও নেওয়া হবে।

ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে কাজ করবে পরিকল্পনা কমিশন : শুধু পরিকল্পনাই নয়, এবার বাস্তবায়ন পর্যায় নিয়েও কাজ করবে পরিকল্পনা কমিশন। শিগগিরই শুরু হচ্ছে শত বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনার (ডেল্টা প্ল্যান ২১০০) বাস্তবায়নের প্রাথমিক কার্যক্রম। এজন্য ‘সাপোর্ট টু দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ নামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে নেদারল্যান্ডস অনুদান হিসেবে দেবে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও অন্যান্য সংস্থার মানবসম্পদের দক্ষতার উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা, ডেল্টা বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদান ও প্রয়োজনের নিরিখে নতুন জ্ঞান ও কৌশল অবলম্বনে এ পরিকল্পনাটি পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিকল্পনায়, হটস্পটভিত্তিক যেসব চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হল- ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, নদী ও উপকূলীয় এলাকার ভাঙন, স্বাদু পানি প্রাপ্যতা, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং পরিবেশের অবনমন, স্বাদু পানির প্রাপ্যতা, বন্যা ও জলাবদ্ধতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পরিবেশের অবনমন ইত্যাদি।

ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে : একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে পরিকল্পনাগুলো স্বল্পমেয়াদি, না দীর্ঘমেয়াদি হবে এটি নির্ভর করে কাজের প্রকৃতির ওপর।

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ মহাপরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে। এর মাধ্যমে যেটি স্পষ্ট তা হলো, বাংলাদেশ এখন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। এটি আমাদের জন্য আশাবাদী হওয়ার মতো একটি বিষয়। এই শত বছরব্যাপী পরিকল্পনার মাধ্যমে বন্যা, নদীভাঙন, নদী শাসন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামের পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। ইংরেজি শব্দ ডেল্টা অর্থ ব-দ্বীপ।

বাংলাদেশ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ব-দ্বীপ অঞ্চল ও নদীমাতৃক দেশ হিসেবে নদী ব্যবস্থাপনা ও এর উন্নয়নের ওপর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করছে। বাংলাদেশে আবহাওয়া বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে আমাদের দেশে অনেক অঞ্চল প্লাবিত হয়। এই পানির প্রায় ৯২ শতাংশ চীন ও ভারতের মতো উজানের দেশগুলো থেকে আসে।

নদীভাঙন বাংলাদেশের একটি অন্যতম সমস্যা। এর ফলে প্রতিবছর ৫০ হাজার পরিবার যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি পাঁচ হাজার হেক্টর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পৃথিবীতে সয়েল ইরোশন বা মাটির ক্ষয় কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা চললেও আমাদের দেশে এ নিয়ে উল্লেখ করার মতো কোনো গবেষণা নেই। আমেরিকার সয়েল অ্যান্ড ওয়াটার কনজার্ভেশন সোসাইটি বিভিন্ন ধরনের মাটির ক্ষয় রোধের প্রযুক্তি বের করেছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও মাটির ক্ষয় রোধে গবেষণার কাজ চলছে। এখান থেকে ধারণা নিয়ে কিভাবে আমরা নিজস্ব পদ্ধতিতে মৌলিক ও ফলিত গবেষণার মাধ্যমে নদীভাঙন রোধ করতে পারি, সে বিষয়টি নিয়ে আরো বেশি করে ভাবার সময় এসেছে।

ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হবে। এখন প্রশ্ন হতে পারে, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতা কেন প্রয়োজন। এর কারণ হলো, নদী ব্যবস্থাপনায় এই দেশটির দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

‘বাংলাদেশে ডেল্টা প্লান ২১০০’ এই পরিকল্পনার আওতায় সরকার ২০৩১ সালের মধ্যে তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার প্রত্যাশা করছে, উপকূলে খাদ্য ও পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং মোকাবেলা করবে প্রাকৃতিক দুর্যোগও। সরকার এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায়। পরিকল্পনা কমিশনের মতে, তিন স্তরে আগামী ১০০ বছরে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে। আর মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে ২০৫০ ও ২১০০ সালের মধ্যে।এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে এর পানিসম্পদ সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে ছয়টি হট স্পটে বিভক্ত করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায়, এসব হট স্পটে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এই হট স্পটগুলো হচ্ছে : উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র অঞ্চল ও খরাপীড়িত অঞ্চল, হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকা, প্রধান প্রধান নদী ও সংলগ্ন এলাকা, শহুরে এলাকা এবং চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল।

এই ডেল্টা পরিকল্পনার উল্লেখযোগ্য দিক হলো- উপকূল সম্পর্কিত সব খাত ও নীতিমালার সমন্বয় সাধান করে ‘ডেল্টা ভিশনে’ অন্তর্ভুক্ত করা হবে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায়। এটি পরিবর্তন আনবে খাতবিশেষের প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনায়। তা কার্যত পরিণত হবে বহুপাক্ষিক সমন্বিত উদ্যোগ ও সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি ব্যবস্থাপনায়। এই প্রকল্প সরকারকে পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়ায় সক্ষম করে তুলবে। তখন বাংলাদেশ আরো কার্যকরভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করতে পারবে। বলা হচ্ছে, ডেল্টা প্লান সরকারকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জোরদার করবে অধিকতর কৌশলী ও জ্ঞানভিত্তিক ও অব্যাহত উপায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সক্ষম করে তুলবে।

এই পরিকল্পনা বিভিন্ন সরকারি বিভাগে ও বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে তহবিলায়ন প্রক্রিয়ায় সমন্বয় সাধন জোরদার করবে। এর ফল সীমিত তহবিল ও বিনিয়োগ কার্যকরভাবে সম্ভব হবে। আরো বলা হয়েছ- ডেল্টা প্লান কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ও প্রতিবেশ সম্পর্কিত বিষয়, শহরায়ন, পর্যটন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য বিধানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এই পরিকল্পনা যেসব উপকার বয়ে আনবে, বলা হচ্ছে তার মধ্যে আছে- সীমিত সম্পদ দিয়ে সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়াবলি সমন্বিত উপায়ে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে পারবে। এটি হচ্ছে ভবিষ্যৎ বদ্বীপের জন্য একটি পরিকল্পনা, যা নিশ্চিত করবে পানি, খাদ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নিরাপত্তা।

২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে সামিল করার লক্ষ্য সামনে রেখে রূপকল্প ২০৪১ এর রূপরেখা অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ২০৪১ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৯.৯ শতাংশ, গড় মাথাপিছু আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৯৪ মার্কিন ডলার, প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল ৮০ বছর। এ সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ দাঁড়াবে ৪৬.৯ শতাংশ এবং রাজস্ব আদায়ের হার দাঁড়াবে ২৪.১শতাংশ।

এমন সব হিসাব নিকাশ ও লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে প্রণীত রূপকল্প ২০৪১ এর খসড়া জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেন কমিটির চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এফডিআর ৩ শতাংশ, সরকারি বিনিয়োগ ৮.৯ শতাংশ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ ৩৮ শতাংশের উপর ভর করে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেগবান হয়ে উঠবে। মোট জাতীয় সঞ্চয় ৪৬.৭ শতাংশ, মোট দেশজ সঞ্চয় ৪২.৭ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি ৪.৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

দারিদ্র্য নিরসন, আয়বৈষম্য হ্রাস, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও লেনদেনে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, টেকসই বিদ্যুত ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মতো ইস্যুগুলোকে সামনে রেখে এই রূপকল্প প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দৃশ্যমান এসব প্রত্যাশা, পরিকল্পনা তথা রূপকল্প খুবই আশাব্যঞ্জক। তবে চলমান বাস্তবতায় এই লক্ষ্যমাত্রা এবং জনগণের আস্থা অর্জন কতটা সম্ভব তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ আছে। বিশেষত: গণতন্ত্রায়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার মতো রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিরসনের উপর এই রূপকল্পের বাস্তবায়ন অনেকাংশে নির্ভরশীল।

ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন ও আমাদের প্রত্যাশা: ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ নামে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর। ঘোষিত ইশতেহারকে শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জাতীয় সনদ আখ্যায়িত করে স্বপ্ন দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশের, সংসদ সদস্যদের জবাবদিহি নিশ্চিতের, ফোরজি চালু, দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা-দক্ষতা বাড়িয়ে এর কার্যকারিতা বাড়ানো, প্রভাবমুক্ত প্রশাসন গঠনের এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন কমিশনকে সংহত করার।

সে সঙ্গে রয়েছে আগের বারের ইশতেহার ‘দিনবদলের সনদে’র অসমাপ্ত কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি। সরকারের ধারাবাহিকতা দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে উচ্চতর এক সোপানে পৌঁছে দেবে এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে দারিদ্র বিমোচনই আমাদের সব কর্মকা-ের মূল লক্ষ্য। কেননা দারিদ্র, অসমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, স্যানিটেশন, মাতৃমৃত্যু, আয়ু, শিক্ষা প্রভৃতি সামাজিক সূচকে দেশের অবস্থান আরো সুদৃঢ় হয়েছে।

বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তর করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকার ভিশন ২০২১ অর্জনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিশন অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই দর্শনের উপর ভিত্তি করে, বাংলাদেশে এখন একটি বিশাল আর্থ-সামাজিক রূপান্তর শুরু হয়েছে। এবার উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্নপূরণে তৈরি হচ্ছে ‘রূপকল্প-২০৪১’।

এজন্য নতুন অর্থনৈতিক রূপরেখা তৈরি করছে সরকার। আগামী ২০৪১ সাল সামনে রেখেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সব অর্থনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্নীতি কমানো এবং সর্বক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করা। মূলত এগুলোকে ঘিরে ভবিষ্যত অর্থনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণ করবে সরকার।

বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত উন্নত বাংলাদেশের লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে যে তারুণ্যের তীর। তাই সকল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষিত হয়েছে তিন যুগের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার এখনও কোনা ‘বিকল্প নেই’। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে এবার নতুন নেতৃত্বে জোর দেওয়া হয়েছে।

রূপকল্প-৪১ বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়ানো হবে। বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক স্থাপনে জোর দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এদিকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক এ মূল্যায়ন সরকারের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। গত ২০১২ সালে দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করার মধ্য দিয়ে দেশের অতি দারিদ্র্যের হার দ্রুত কমে আসছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষণ, বঞ্চনা, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তার এই স্বপ্ন ও আদর্শকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন।

বর্তমানে তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শিতায় ও বলিষ্ট নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। উন্নয়নের রোড মডেলে পরিণত হয়েছে দেশ যা অবাক হয়ে তাকাচ্ছে বিশ্ববাসী। ২০২১ সালের ভিশন বাস্তবায়ন শেষে ভিশন ২০৪১ এর যেই পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে সেটা বাস্তবায়িত হবে শেখ হাসিনা’র সরকারের নেতৃত্বের মধ্যদিয়ে। ‘ভিশন ২০৪১’ বাস্তবায়নে সরকারের উন্নয়নের সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাক। -এটাই আমাদের প্রতিনিয়ত একান্ত প্রত্যাশা ।

লেখক: কবি, সাংবাদিক

সারাবাংলা/এজেডএস

রনি অধিকারী শেখ হাসিনার রাষ্ট্র ও উন্নয়ন দর্শন

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর