ভিয়েতনামে জিডিপি বাড়াতে একটি প্রদেশের অবদান
১ অক্টোবর ২০২৩ ১১:৫৩
২০২৩ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভিয়েতনামের জিডিপি ৪.১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৩.২৮ শতাংশ।
২০২২ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিক থেকে রফতানি কমেছে মূলত তিনটি কারণে। প্রথমত: বিভিন্ন দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদের হার বেশি, অর্থনৈতিক মন্দাজনিত বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস এবং চীনের মতো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রক্ষণাত্মক আর্থিক নীতি গ্রহণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানি কমেছে যথাক্রমে ২২.৬ শতাংশ, ১০.২ শতাংশ এবং ১০.১ শতাংশ। দ্বিতীয়ত: রফতানি পণ্যের দাম কমেছে। তৃতীয়ত: লজিস্টিক খরচ বেড়ে গেছে।
২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি সম্প্রসারণে প্রধান অবদানকারী ছিল পরিষেবা খাত, যা ৬.১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরে কৃষি, বনজ এবং মৎস্য খাতে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ৩.২৫ শতাংশ। আর শিল্প ও নির্মাণ খাতে বৃদ্ধির হার ছিল ২.৫ শতাংশ। লক্ষণীয় যে, এই সময়ে কৃষিপণ্য, ফল ও সবজি রফতানিতেও সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
তবে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধ থেকে ভিয়েতনামের পর্যটন খাত ইতিবাচক উন্নয়ন দেখেছে। ৫৫ লাখ বিদেশি পর্যটকদের (বছর শেষে ৮০ লাখ বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করার কথা রয়েছে, অথচ বছরের প্রথমার্ধেই ৬৮.৭৫ শতাংশ বিদেশি পর্যটক তাদের ভ্রমন সম্পন্ন করেছেন) পাশাপাশি দেশীয় পর্যটকের সংখ্যা ৬ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছেছে, ফলে বছরের প্রথমার্ধেই পর্যটন থেকে ১৪.৫১ বিলিয়ন আয় এসেছে। সিএনএন-এর মতো অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মের মতো বড় মিডিয়ার মাধ্যমে পর্যটনের প্রচার ঘটিয়ে এই সাফল্য তারা দেখিয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি, ই-ভিসা ৩০ দিন থেকে ৯০ দিন এবং ভিসা-মুক্ত থাকার সময় ১৫ থেকে ৪৫ দিনে বাড়ানো হয়েছে।
অতিরিক্ত উদ্দীপনা নীতিগুলোর মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন ছিল, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা, যা ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এটি করা হয়েছে দেশীয় ভোক্তা খাতকে উদ্বুদ্ধ করতে, অর্থাৎ দেশি পণ্য ক্রয় এবং উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে। যা আসলে ব্যবসাগুলোর খরচ কমিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সাহায্য করবে।
চমৎকার অবকাঠামো নির্মাণ, সবুজ শহর, টেকসই উন্নয়ন, উচ্চমানের মানবসম্পদ প্রশিক্ষণ, পরিবেশ ও শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা, প্রশাসনিক প্রক্রিয়া আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ভিয়েতনামের বিন ডুং প্রদেশ একটি নতুন কিন্তু স্মার্ট প্রদেশ হিসেবে রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে ২০টি দেশ এবং বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিনিয়োগ এসেছে এই প্রদেশটিতে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে পান্ডোরা গ্রুপ নামক ডেনমার্কের একটি কোম্পানি। আর ভিয়েতনামের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনে নেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে নেদারল্যান্ডস। এই প্রদেশের বাউ ব্যাং ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে, পলিটিক্স ফার ইস্টার্ন ভিয়েতনাম কোম্পানি লিমিটেড এই পর্যন্ত ১.৩৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পাশাপাশি আরও ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
রাজধানী হো চি মিন সিটি এবং বিন ডুংয়ের মধ্যে সংযোগের ক্ষেত্রে কন্টেইনার ট্রাকগুলো টোল বুথে থামা ছাড়াই (স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টোল প্রদান করতে পারে কারণ বিন ডুংয়ে সবার জন্য ‘ওয়াইফাই’ সুবিধা ফ্রিতে দেওয়া হচ্ছে) একটি নির্দিষ্ট অংশ দিয়ে ২৪ ঘণ্টা যাতায়াত করতে পারে এবং বিভিন্ন অনুন্নত জমিগুলোকে উন্নত পরিকাঠামো ও আইনি আওতায় এনে বিদেশি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে জমি ইজারা দিচ্ছে।
একসময় কৃষির জন্য পরিচিত বিন ডুং স্মার্ট সিটিতে ১০ লাখ বাড়ি তৈরি করা হবে। নতুন শহরে ইতিমধ্যেই ইস্টার্ন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, একটি বিশ্বমানের একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, সেইসঙ্গে ছয়টি শিল্প পার্ক তৈরি করা হয়েছে। এই শহরের লক্ষ্য হচ্ছে শিল্প/কৃষি, সরকার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সহযোগিতার ‘ট্রিপল হেলিক্স মডেল’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে টেকসই উপায়ে ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা। এই অঞ্চলের আশেপাশের স্কুল, ভোকেশনাল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে থাকবে টেকল্যাব এবং ফ্যাবল্যাব (ছোট আকারের ওয়ার্কশপ যা ডিজিটাল ফেব্রিকেশন প্রযুক্তি এবং সরঞ্জামাদির ব্যবহার ঘটায়)। যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প উৎপাদনকারীদের মধ্যে যৌথ গবেষণা প্রকল্প হিসেবে কাজ করবে।
বিন ডুয়ং প্রদেশটি ঐতিহাসিকভাবে কৃষিপ্রধান ছিল। অনেক কৃষক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই অঞ্চলে দারিদ্র্য কমাতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে স্থানীয় কৃষক এবং অন্যান্য নাগরিকদের জন্য বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ সরবরাহ করার জন্য কমিউনিটি, ওয়ার্ড এবং টাউনশিপ ব্যবস্থাপনায় তথ্য অ্যাক্সেস পয়েন্ট স্থাপনের জন্য ২০১১ সালে একটি প্রকল্প শুরু করে। এখন এই প্রদেশটিতে এখন ৮৭টি তথ্য এক্সেস পয়েন্ট রয়েছে। যার ফলে কৃষকরা পণ্য ক্রয় এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের এড়িয়ে চলতে পারছে।