Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কবি রাধাপদ রায়ের ওপর হামলা ও ঘুণেধরা সমাজব্যবস্থা

ইমরান ইমন
৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৫১

সম্প্রতি কুড়িগ্রামের চারণকবি রাধাপদ রায়কে মারধরের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সবাই শুধু তাকে মারধরের শারীরিকভাবে ক্ষতবিক্ষত শরীরের ছবি দিয়ে পোস্ট করছেন। কিন্তু কাউকে মূল জায়গায় হাত দিতে দেখা যাচ্ছে না। মূল প্রসঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে না। গুটিকয়েকজন যা বলছেন, তা হলো দোষীদের বিচারের কথা। বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে বিচার চাইতে যাওয়া অমূলক—সেটা কি বোধোদয় নয়!

বিজ্ঞাপন

রাধাপদ রায়ের ভাষ্য, পাশের গ্রামের বাসিন্দা কদু মিয়া ও রফিকুল ইসলাম গান-বাজনা পছন্দ করেন না। তাকে পেটানোর সময় রফিকুল ইসলাম বলছিলেন, ‘হিন্দু কবিকে পেটালে কিছু হয় না’। কদু মিয়া ও রফিকুল ইসলামে ভরা এই সমাজব্যবস্থা। এরা আবার সমাজের মোড়ল—গ্রামসরকার।

এ সমাজটা যে পচে গেছে, নষ্টদের দখলে চলে গেছে সেটার জ্বলন্ত উদাহরণ কবি রাধাপদ রায়ের ওপর মারধরের ঘটনা। যে সমাজে মুক্তচিন্তার অধিকার নেই, মুক্তমতের চর্চা নেই, যে সমাজ সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদপুষ্ট—যেখানে মানুষকে এখনও “মানুষের” পরিবর্তে ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের পরিচয়ে বাঁচতে হয়, বাঁচতে হয় ‘সংখ্যালঘু’ পরিচয়ে—সেখানে এমন ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

যে সমাজব্যবস্থায় একজন কবিকে শুধু হিন্দু হওয়ার অপরাধে মার খেতে হয়, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার জন্য, কবিতা লেখার জন্য আক্রমণ ও হামলার শিকার হতে হয়—সে সমাজব্যবস্থা নষ্টের কোন অবস্থায় গেছে সেটা সহজেই অনুমেয়। কদু মিয়া ও রফিকুল ইসলাম গংদের এখন দোর্দণ্ড প্রতাপ। কে বা কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এদের এমন প্রতাপ—সেটা কারও অজানা নয়।

সবকিছু এখন নষ্টদের দখলে, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ—মোটাদাগে সব। রাধাপদের ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে সরকারি সুবিধাভোগী কথিত কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা এখন নিশ্চুপ আছেন। কারণ, সবাই এখন যার যার পকেট ভারী করতে এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধিতে ব্যস্ত। সমাজ-রাষ্ট্র কোন রসাতলে যাচ্ছে সেদিকে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। এভাবে সমাজ-রাষ্ট্র চলতে পারে না।

আমরা কি আলোর দেখা পাবো নাকি আরও অন্ধকারের অতলে তলিয়ে যাবো?

বিজ্ঞাপন

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

ইমরান ইমন কবি রাধাপদ রায়ের ওপর হামলা ও ঘুণেধরা সমাজব্যবস্থা মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর