Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উলিপুরের ক্ষীরমোহন জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে

নাজমুল হাসান
৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৪৯

ভাওয়াইয়া গানের ধাম, নদ-নদীময় কুড়িগ্রাম। নদ-নদী বেষ্টিত উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের নাম শুনলেই যে কেউ আনমনে গেয়ে ওঠে- ওকি গাড়িয়াল ভাই, হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে। সেইসঙ্গে ভোজনরসিকদের মনে আসে উলিপুরের ক্ষীরমোহন নামটিও। এই ক্ষীরমোহনের জন্য উলিপুরকে অন্য অঞ্চলের মানুষ সহজেই শনাক্ত করতে পারছে, এই শনাক্তকরণই হচ্ছে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই)।

উলিপুরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন ক্ষীরমোহন ক্ষীর ও মোহনের সংমিশ্রণে তৈরি। ক্ষীর হলো মিষ্টির রস। গাভীর দুধ দীর্ঘ সময় জ্বাল দিয়ে এরসঙ্গে নানা পদের মসলা মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই রস। স্থানীয়ভাবে মিষ্টির এই রসকে ক্ষীর বলা হয়। অন্যদিকে, মোহন বলতে মিষ্টির সাদা অংশকে বোঝানো হয়। দুধ দীর্ঘ সময় জ্বাল দিয়ে ছানা তৈরি করে নিয়ে এরসঙ্গে পরিমাণ মতো চিনি ও সামান্য ময়দা মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই মোহন। এরপর চিনির শিরায় ডুবিয়ে আগুনের আঁচে জ্বাল দিতে হয়। পরে ক্ষীরের মধ্যে ডুবিয়ে সামান্য জ্বাল দিলেই তৈরি হয় অমৃত স্বাদের ক্ষীরমোহন। দুধ যত খাঁটি হবে, ক্ষীরমোহন তত ভালো হবে।

উইকিপিডিয়ার মতে, ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হচ্ছে কোনো সামগ্ৰীর ব্যবহার করা বিশেষ নাম বা চিহ্ন। এই নাম বা চিহ্ন নিৰ্দিষ্ট সামগ্ৰীর ভৌগোলিক উৎস (যেমন একটি দেশ, অঞ্চল বা শহর) অনুসারে নিৰ্ধারণ করা হয়। ভৌগোলিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সামগ্ৰী নিৰ্দিষ্ট গুণগত মানদণ্ড বা নিৰ্দিষ্ট প্ৰস্তুত প্ৰণালী অথবা বিশেষত্ব নিশ্চিত করে।

এই সংজ্ঞার সূত্র ধরে সহজেই বোঝা যায়, উলিপুরের ক্ষীরমোহন নির্দিষ্ট একটি শহরকে সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপন করে। আর সেই শহর হচ্ছে, উলিপুর। ক্ষীরমোহন মিষ্টান্নটি তৈরির প্রক্রিয়া অন্য যেকোন মিষ্টি-মিষ্টান্ন তৈরির প্রক্রিয়ার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। বিশেষত্বের দিক দিয়েও এটি মৌলিকত্ব বহন করে। অর্থাৎ কোনো পণ্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যেসব মানদণ্ড প্রয়োজন ক্ষীরমোহনের সেসব মানদণ্ড রয়েছে।

উলিপুরের এই ঐতিহ্যবাহী ক্ষীরমোহন সৃষ্টির পেছনে রয়েছে চমৎকার একটি গল্পগাঁথা। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন ফরিদপুরের গোয়ালন্দ থেকে সুধীর সরকার ওরফে সুধীর ময়রা নামে এক ব্যক্তি উলিপুরে আসেন। তিনি মিষ্টির কারিগর হিসেবে চাকরি নেন কছির মিয়ার দোকানে। চাকরির শর্ত ছিল, তিনি এমন মিষ্টি বানাবেন যা দিয়ে দোকানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে। রাজি হন সুধীর ময়রা। তিনি চাকরির শুরুতেই ক্ষীরমোহন তৈরি করে বাজিমাত করেন। ক্ষীরমোহনের মন জুড়ানো মিষ্টি গন্ধে মাতোয়ারা করেন ভোজনরসিকদের।

উলিপুরের ক্ষীরমোহনের স্বাদ নিয়েছেন ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ, রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে পাঠানো ক্ষীরমোহন খেয়ে তিনি এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদেরও ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে উলিপুরের ক্ষীরমোহন।

এ অঞ্চলে সরকারপ্রধান, মন্ত্রী, বিদেশী অতিথি ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের অতিথিদের ভোজনের অনুষঙ্গ হিসেবে দেওয়া হয় ক্ষীরমোহন। আশির দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠা উলিপুরের ক্ষীরমোহন এখন দেশ জয় করে ইউরোপ, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ও ভারতে যাচ্ছে। অতএব, এটি বলার কোনো অপেক্ষা রাখে না যে, উলিপুরের ক্ষীরমোহন দেশ-বিদেশে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ।

উলিপুরের ক্ষীরমোহনকে ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতির ব্যবস্থার মাধ্যমে উলিপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশ-বিদেশে ক্ষীরমোহনের আরও চাহিদা বাড়াতে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের পদক্ষেপ জরুরি।

লেখক: শিক্ষার্থী, উলিপুর মহারানী স্বর্ণময়ী স্কুল এন্ড কলেজ

সারাবাংলা/এসবিডিই

উলিপুরের ক্ষীরমোহন জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে নাজমুল হাসান মুক্তমত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর