আমাদের শিক্ষকরা কি প্রাপ্য সম্মানটুকু পাচ্ছেন?
৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:২৩
একজন শিক্ষার্থীকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার কারিগর হচ্ছে একজন শিক্ষক। শিক্ষক ব্যতীত একজন শিক্ষার্থী কখনো সঠিক ভাবে জ্ঞান লাভ করতে পারেনা। শিক্ষকরাই পারেন একজন শিক্ষার্থীকে সঠিকভাবে মানুষের মতো করে গড়ে তোলতে। তাদের হাতেই তৈরী হয় একেকটি দেশের সম্পদ। তাই বলা যায়, শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের দয়িত্ব অপরিসীম। একটি দেশের মূল উন্নয়নের কারিগর কিন্তু শিক্ষকরাই। কারণ তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশ পাচ্ছে মেধাবী এবং জ্ঞানী জনসম্পদ।
শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে সাহায্য করা, দেশের শিক্ষার মান বৃদ্ধি করাসহ নানান বিষয়ে শিক্ষকদের ভূমিকা থাকতে হয় অসীম। একমাত্র শিক্ষকরাই পারে একটি জাতিকে সুশিক্ষায় শিক্ষত করে গড়ে তোলতে। বলা যায় একটা জাতির মূল কান্ডারি শিক্ষক। তাদের হাতেই রয়েছে একটি জাতির সঠিক শিক্ষার ভার।
আজ আমাদের দেশে যত বড় বড় মন্ত্রি, পুলিশ, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক রয়েছে মনে রাখতে হবে তারাও এক সময় শিক্ষার্থী ছিলো, তাদেরও কেউ না কেউ শিক্ষক ছিলো। সেই শিক্ষক গুলোর সুপ্রচেষ্টায় আজ তারা দেশের এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালন করছে। তারা আজ দেশের সম্মানিত ব্যক্তি, এটা হয়তো সকলেই জানে। তবে তাদের পেছনে যে শিক্ষকের একটা অবদান রয়েছে সেটা কেউ জানতে বা জানাতে চায় না। আড়ালেই থেকে যান আমাদের শিক্ষকরা। অথচ এসব শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, ভালোবাসা আর সঠিক পাঠদানের মাধ্যমেই আজ আমরা উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে উঠে এসেছি। কিন্তু কজন সেটা মনে রাখি? যত উপরে আমরা উঠি, ততই যেন আমাদের শিক্ষকরা আমাদের নিচে নেমে যান।
অনেক সময় তো শিক্ষকের চাইতে মানে, জ্ঞানে, অবস্থানে, অর্থে বড় হলে শিক্ষককে ছোট করতেও ভাবেন না অনেকে। ভুলে যায় এই মানুষটা একদিন অংক-ইংরেজি কিংবা বাংলা-বিজ্ঞান পড়িয়েছিলেন। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর। এখন সেসব শিক্ষকদেরই তাদের ছাত্রদের সামনে নিচু হয়ে থাকতে হয়। এটা যে সব শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের আচরণ তা কিন্তু নয়। তবে দিন যত গড়াচ্ছে ততই এটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনকার শিক্ষার্থীদের আত্ম-অহংকারবোধ অনেক বেশি হয়ে উঠে। তারা শিক্ষকদের আর শিক্ষক মনে করেন না।
আমি এমনও কুলাঙ্গার শিক্ষার্থী দেখেছি, যে নিজের শিক্ষকের শরীরে আঘাত করতেও দু’বার ভাবেনি। শিক্ষককে অপমান-অপদস্থ এমনকি হুমকি দেওয়া শিক্ষার্থীরও অভাব নাই এখন। ক্লাসের পর স্যারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে কত শিক্ষার্থী ক্লাস ছেড়ে বাইরে ছেলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো সেটার তালিকা করলেও বেশ দীর্ঘ হবে। অথচ সবক্ষেত্রেই আমাদের শিক্ষকরা বড় অসহায়। আমরা আমাদের শিক্ষকদের তাদের প্রাপ্য সম্মানটা তো দিচ্ছিই না, উল্টো ক্রমাগত অশ্রদ্ধা আর অসম্মান করে আসছি। বিগত কয়েক বছরে কত শিক্ষকের সাথে লাঞ্চনা, হেনস্তা আর মারধরের মতো ঘটনা ঘটেছে সেটা গুগল করলেই জানতে পারবেন। আর কত শিক্ষক জেলে গেছেন আর কত শিক্ষকের প্রাণ গেছে সেটাও জানতে পারবেন গুগলের মাধ্যমে। পত্রিকার পাতায় এসব ঘটনা কালো হরফে ছাপা হচ্ছে নিয়মিত।
আমি যদি একটা ঘটনা উল্লেখ করি তাহলে সকলের মনে পড়বে অবশ্যই। সাভারে হাজী ইউনুছ আলী কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার। এক শিক্ষার্থী তাকে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্য করেন। এটা নিয়ে সারাদেশে আন্দোলন, সমালোচনাসহ বেশ হইচই সৃষ্টি হয়েছে সেসময়। এমন ঘটনা আরও অনেক আছে। সেসব লিখে লেখা লম্বা করবো না।
শুধু এটুকুই বলতে চাই আমাদের শিক্ষকদের সাথে আমাদের এমন দূরুত্ব আর ভালোবাসার সম্পর্ক থাকার কারণেই আমাদের প্রজন্ম কিংবা পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের উন্নতি চোখে পড়ার মতো হচ্ছে না। ভালো তারাই করছে যারা শিক্ষকদের সম্মান করছেন, শিক্ষকদের দোয়া নিচ্ছেন।
একইসাথে শিক্ষকদের নিরাপত্তসহ সকল সুযোগ-সুবিধা দিতে সরকারের নিকট আহ্বান রইলো। শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান যেমন তাদের দিতে হবে, ঠিক তেমনি তাদের উপর অত্যাচার, অন্যায়, লাঞ্ছনা বন্ধ করতে হবে। কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে এসকল অপরাধীদের। তবেই শিক্ষকদের দিকে আঙ্গুল তুলে তাকাতে পারবে না কেউ।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
আজহার মাহমুদ আমাদের শিক্ষকরা কি প্রাপ্য সম্মানটুকু পাচ্ছেন? মুক্তমত