শিক্ষকের মর্যাদা
৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৪৩
শিক্ষকের গুরুত্ব আমার জীবনে এমন যা আমি লিখতে লিখতে যদি বই ও হয়ে যায় তাও মনের মতো করে শেষ করতে পারব বলে আমি মনে আমি মনে করিনা। একজন শিশু জন্মের পর আস্তে আস্তে সব শিখে তার এই পৃথিবীতে ভালোভাবে টিকে থাকা নির্ভর করে তার অর্জিত শিক্ষার উপর। আজকের শিক্ষা তার ভবিষ্যতের সঞ্চয় সেই সঞ্চয় তৈরি করে দিচ্ছেন একজন শিক্ষক। আমার জীবনে শিক্ষকের ভূমিকা একটু বেশিই।
শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে অর্থাৎ সেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অসাধারণ অনেক ভালো শিক্ষকের ছাত্র হতে পেরেছি। কিন্তু যদি সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক সম্পর্কে বলতে হয় তাহলে একজন শিক্ষকের কথাই আমি বলব। যিনি আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের চলার পথে সবচেয়ে বেশি প্রেরণা ও উৎসাহ জুগিয়েছেন। আমার সেই প্রিয় শিক্ষকের নাম হযরত মাওলানা মাহমুদুল হাসান হুজুর।
তিনি যে শুধু শিক্ষা দেয় তা নয় উনার মোটিভেশনও আমাদের জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার এখনো মনে আছে আমি যখন বক্তব্য, কেরাত দেওয়া থেকে পালিয়ে বেড়াতাম। তখনই হুজুর আমাকে বলেছিলেন তোমার কাছে আমি একটা জিনিস চাই। সেটা হল তুমি আগামীকাল স্টেজে উঠে শুধু সালামটুকু প্রদান করবে এটাই তোমার কাছে আমার চাওয়া । জীবনে যেখানে কোনদিন বক্তব্য দেয় নাই সেখানে হুজুরের এমন কথা শুনে আমি রীতিমতো অবাক হয়ে গেছি।
একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে কতটা ভালোবাসলে এভাবে বলতে পারে তা হয় তখনই আমি খানিকটা বুঝতে পেরেছিলাম। তাই তার ইচ্ছাকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য নিজের ঘুমটাও বিসর্জন দিতে এতটুকু কষ্ট হয়নি। সারারাত বিভিন্ন বই পুস্তক গবেষণা শুরু করি পরের দিন আমাকে বক্তব্য দিতেই হবে । তাই সহজ সরল একটা সাবজেক্ট সিলেক্ট করি সেটা হলো শিক্ষকের মর্যাদা । স্টেজে আমার নাম ঘোষণা করা হলো বুকে ততর করে কাঁপছে আমি স্টেজে উঠলাম হুজুরে নূরানী চেহারা দিকে তাকিয়ে থাকলাম তারপরও স্টেজে দাঁড়িয়ে প্রথমে সকলের উদ্দেশ্যে সালাম প্রদান করলাম। তারপর বললাম আজকে যে টপিকের উপর আলোচনা করব সেটা হলো শিক্ষকের মর্যাদা ।
আমরা সকলেই জানি শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক হলো মেরুদণ্ড সচল-সুস্থ রাখার তথা মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকরা জ্ঞানের আলো দ্বারা যুগের সব অন্ধকার দূর করে মানুষের জন্য সভ্য পৃথিবী সৃজন করেন। মানুষের আর্থসামাজিক অগ্রগতি ও নৈতিক বিকাশ অব্যাহত রাখতে সমাজে শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম।
সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষকরা মানুষের ভেতর সত্যিকারের মানুষ সৃজন করেন। তাই শিক্ষককে বলা হয় সন্তানের দ্বিতীয় জন্মদাতা। সত্যি তো, জন্মদাতা পিতা শুধু জন্ম দিয়েই থাকেন; কিন্তু তাকে সত্যিকার মানুষরূপে গড়ে তোলেন তার শিক্ষক। জ্ঞান বা বিদ্যার্জনের জন্য শিক্ষকদের ভূমিকাকে দ্বিতীয় জন্মদাতার সঙ্গে তুলনা করে শাহ মুহম্মদ সগীর কবিতার ছন্দে লিখেছেন,
‘ওস্তাদে প্রণাম করো পিতা হন্তে বাড়,
দোসর জনম দিলা তিঁহ সে আহ্মার।’
শিক্ষকের মর্যাদা নামে কবি কাজী কাদের নেওয়াজের কবিতা পড়েছি ছেলেবেলায়। আপনাদের সকলের জ্ঞাতার্থে আবারো স্মরণ করে বলছি বাদশা আলমগীরের শিক্ষকের মর্যাদা আর এটা সকলেরই জানা উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই কবিতা। শিক্ষকের প্রতি বাদশাহর অপরিসীম শ্রদ্ধার প্রতিফলন ঘটেছে এই কবিতায়।
একদিন বাদশাহ দেখলেন তার সন্তান শিক্ষকের চরণে শুধু পানি ঢেলে দিচ্ছেন। এটা দেখে বাদশাহ শিক্ষককে ডেকে পাঠালেন। শিক্ষক ভয়ে অস্থির, বাদশাহর ছেলেকে দিয়ে চরণে পানি ঢালার সেবা নিয়েছেন। গর্দান বুঝি যায় এবার। চরণে শুধু পানি ঢেলে দিচ্ছে, হাত দিয়ে কেন পা ধুয়ে দিচ্ছে না, তা সন্তানের শিক্ষার মধ্যে আনা উচিত ছিল; এটা বোঝানোর জন্যই তিনি শিক্ষককে ডেকেছিলেন। শিক্ষকের প্রতি সন্তানের এটুকু অবহেলাও মেনে নিতে পারেননি বাদশাহ আলমগীর।
আমার শিক্ষক তিনি ছিলেন ভীষণ স্বপ্নবান একজন মানুষ। ছাত্রদের নিয়ে ছিল তার ছিল অজস্র স্বপ্ন। তার ছাত্ররা কেউ ভালো করেছে কিংবা করছে এই খবর শুনলে তিনি শ্রেণিকক্ষে বলতেন এবং বাকিদেরও এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাতেন। প্রতিমুহূর্তেই বলতেন, ‘আর যাই করো পড়ার সময় পড়বে। বাকিদিন যা ইচ্ছে করো সমস্যা নেই। পড়তে বসে ফাঁকি দেবে না। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখবে। ও পেরেছে, আমি কেন পারব না। মানুষের পক্ষে সব সম্ভব, কেবল চেষ্টা থাকতে চাই। চেষ্টা করো দেখবে পারবে।
কেউ হয়তো দুর্বল ছাত্র কিন্তু তার অনুপ্রেরণা আর উদ্দীপনায় নিজেকে নতুন করে খুঁজে নিত। হুজুর প্রায়ই বলতেন , ‘দেখো তোমাদের মধ্যে কেউ হয়তো একসময় বড় আলেম হবে, কেউ বিসিএস ক্যাডার হবে কেউ ইসলামি স্কলার হবে , কেউ ভালো লেখক হবে বা শিক্ষক কিন্তু সবার আগে ভালো মানুষ হও। মানুষের জন্য কাজ করো।’ এই যে উদীপ্ত করা, স্বপ্ন দেখতে শেখানো, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখা একজন আদর্শ শিক্ষকের পরিচয় ছিল এটিই।
প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন- “তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব শিষ্টাচার শিখো এবং যার কাছ থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করো তাকে সম্মান কর” (আল মুজামুল আওসাত, হাদিস নং:৬১৮৪)।
আসলে কিন্তু জীবন তৈরি হবে আমাদের কিন্তু সবচেয়ে বেশি হয়তো আমাদের শিক্ষকেরাই খুশি হবে। শিক্ষক শব্দটির ওজন এতটাই বেশি যাকে খুব সহজে ব্যাখা করে শেষ করা যাবেনা। আমি তো একজনের কথা বললাম কিন্তু এমন ও কিছু শিক্ষক আমার জীবনে আলোর সারথী হয়ে বার বার এসেছে যাদের অবদান বলে শেষ করা যাবেনা তাই আজ ৫ই অক্টোবর শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আমার জীবনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা সকল শিক্ষক কে জানাই শিক্ষক দিবসের অসংখ্য শুভেচ্ছা। যাদের কাছ থেকে আমি জীবনে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি এবং এখনো শিখে যাচ্ছি আর এজন্য আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব।
লেখক: শিক্ষার্থী, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলিয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম
সারাবাংলা/এসবিডিই