Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাস্তব ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ

মো. শফিকুল ইসলাম নিয়ামত
৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৫৭

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকেই স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার স্বাধীন এবং সময়োপযোগী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে। বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, বিশ্বব্যাপী অত্যাচারীত এবং নিপীড়িত মানুষদের পক্ষে কথা বলা, নিজ দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল করা এবং বাংলাদেশকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করাই এই পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য।

বিজ্ঞাপন

‘কারো সাথে শত্রুতা নয় সবার সাথে বন্ধুত্ব’, এটি পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা হলেও বিভিন্ন সময়ে শাসক পরিবর্তনের জন্য পররাষ্ট্রনীতিও পরিবর্তন হয়েছে। একটি দেশের সবচেয়ে অগণতান্ত্রিক নীতি হচ্ছে পররাষ্ট্রনীতি। এখানে জনগণের কোন অংশগ্রহণ থাকেনা। যখন যে শাসক ক্ষমতায় আসীন হয় তখন তারা তাদের মত করে পররাষ্ট্রনীতি সাজায়।

বাংলাদেশে ২০০৮ থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত তিনবার নির্বাচন হয়েছে। টানা তিনবারই ক্ষমতায় আরোহন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী তারাও নতুন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে। একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে পররাষ্ট্রনীতি গোপন থাকে। তবে রাষ্ট্রের আচরণ অনুযায়ী পররাষ্ট্রনীতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে সেটা অনুধাবন করা যায়। সরকার কিছু অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত বিষয় মাথায় রেখে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করে।

বাংলাদেশ বিভিন্ন মানবিক ইস্যু, ক্লাইমেট চেঞ্জ, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং অন্যান্য ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিশ্ব দরবারে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এছাড়া, একই সাথে একই সময়ে বিশ্বের পরাশক্তি দেশসমূহের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা এবং কারো সাথে বৈরিতায় না জড়ানোর যে নীতি গ্রহণ করেছে, সেটা দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং স্বাস্থ্যবান অর্থনীতি উপহার দিয়েছে।

জোড় কূটনীতিক প্রচেষ্টা এবং তৎপরতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ভারত এবং মিয়ানমারের কাছ থেকে পাওয়া মোট ১১৮৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকার উপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। বিরোধ নিরসনে বিরোল এ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানে উপনীত হওয়ার এ নীতি আন্তর্জাতিক আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রশংসিত করেছে। বাংলাদেশ এই সমুদ্রসীমাকে কাজে লাগিয়ে সামুদ্র অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারবে। এতে দেশ আন্তর্জাতিক অংগনে অর্থনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী হবে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমান সরকার আদর্শিক জায়গা থেকে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের পরবর্তীতে এখন বাস্তবতা ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণে জোড় দিয়েছে। পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের আদর্শিক এবং ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব থাকলেও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আবার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আম উপহার পাঠিয়েছিলেন। এসবই বাস্তব ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

হয়ত প্রয়োজনের খাতিরে ভবিষ্যতে উচ্চতর প্রযুক্তি সম্পন্ন ইসরাইলের সাথেও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ করবে বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পর থেকে গৃহীত পররাষ্ট্রনীতিতে সফলতার ঝুড়ি মোটামুটি পূর্ণ থাকলেও কিছু ব্যার্থতাও আছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে ব্যাপক আবেদন সৃষ্টি করতে পারেনি। ক্রমেই রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশে প্রকট আকার ধারণ করলেও সে সমস্যা সমাধানে জোড় কূটনীতিক প্রচেষ্টা নেই বললেই চলে। তবে, প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকায় ভবিষ্যতে সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হবে বলে আশা করা যায়।

বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রনীতির আরেকটি দূর্বল দিক হল, এরা ল্যাটিন আমেরিকার দেশ গুলির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আন্তরিক না আবার চেষ্টাও করেনা। অথচ, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলির সাথে যদি সম্পর্ক উন্নয়ন করা যায় তাহলে তাদের সাথে বাণিজ্য চুক্তি করা যেতে পারে। সেসব দেশে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বাজার সৃষ্টি করে দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করা যেতে পারে।

যাইহোক, বর্তমান সরকারের গৃহীত পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমেই বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতিতে সাফল্যের পদচিহ্ন আঁকছে। সরকারের বিভিন্ন ইস্যুতে অবস্থান দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। কৌশলি পররাষ্ট্রনীতির কারণে বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও বাণিজ্যে দেশের অর্থনীতিক চাকা শক্তিশালী হয়েছে৷ অবশেষে এই সরকারের পররাষ্ট্রনীতি মূল্যায়নে যদি কোন মন্তব্য জুড়ে দিতে হয়, তাহলে এ কথা বলা যায় যে, সরকারের পররাষ্ট্রনীতি অধিকাংশই সফল। যতটুকু ব্যার্থতা আছে ততটুকু ব্যার্থতাকে সফলতায় রূপ দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

বাস্তব ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ মুক্তমত মো. শফিকুল ইসলাম নিয়ামত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর