এগিয়ে যাও তোমরা পাশে আছি আমরা
৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:৩৩
শুরু হয়েছে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপের জন্য সাত ব্যাটার, দুই আলারাউন্ডার, দুই স্পিনার আর চার পেসারকে রেখে ১৫ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বোর্ড বিসিবি। বহু আলোচনা-সমালোচনা ও দর্শক-সমর্থকদের তর্কবিতর্কের পর পর বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ফিরেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তবে বাদ পড়েছেন দেশের সবচেয়ে সফল ওপেনার তামিম ইকবাল। আর তা নিয়েই দর্শকদের মধ্যে শুরু হয়েছে তমুল সমালোচনা। প্রশ্ন ওঠেছে বিসিবির পেশাদারিত্ব নিয়ে। তামিম ইকবালকে কেন বাদ দেওয়া হলো তার সুনির্দিষ্ট কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি বিসিবি। অনেকেই মনে করছেন তামিম বাদ পড়েছেন অধিনায়ক সাকিবের ইন্ধনে।
প্রথমে ইনজুরির কারণে তামিম ইকবাল বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচ খেলবেন বলে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তামিম তার ভেরিফাইড ফেইসবুক পেজে লাইভে এসে বিষয়টি পরিষ্কার করেন। তিনি জানান, ইনজুরি নয় তিনি সম্পূর্ণ ফিট আছেন। মূলত বিসিবি থেকে তাকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ না খেলার জন্য বলা হয় আর খেললে ওপেনিং থেকে নিচে ব্যাটিং করতে হবে বলে জানানো হয়, যা তিনি মেনে নিতে পারেননি। ফলস্বরূপ বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বাদ পড়তে হয় টাইগার ওপেনারকে। বিষয়টি বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমীরা সহজে মেনে নিতে পারেননি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিসিবি এবং অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে ধুয়ে দিচ্ছে দর্শকরা। অনেকে সাকিব আল হাসানকে আখ্যায়িত করেছেন মীরজাফর হিসেবে। অনেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বয়কটও করছে। আমার মনে হয় এখন আপাতত বাংলাদেশ ক্রিকেটের কথা চিন্তা করে সমালোচনা বন্ধ করা উচিৎ। আমি বলছি না যে সমালোচনা থাকবে না বা সমালোচনা করা ঠিক না। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই তামিমকে দলে নেওয়ার পক্ষে এবং আমিও তাদের দলেই। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ইতোমধ্যে বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে অবস্থান করছে এবং দুইটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে। এই মুহূর্তে আমাদের এই সমালোচনা দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে তামিমের বদলে হিসেবে ওপেনিং করা তানজিম তামিমের উপর। এমনিতে এই তরুণের প্রথম বিশ্বকাপ তার উপর এমন সমালোচনা কতটা নিতে পারবে এটাই দেখার বিষয়। দলের বাকি ক্রিকেটারদের উপর পড়বে এর প্রভাব। তাই আমাদের উচিৎ এখন ক্রিকেটারদের সাহস জোগানো, উৎসাহ দেওয়া। আমাদের দল ভালো করবে এটাই হবে এখন আমাদের মূল লক্ষ্য। মাঠে খেলবে ওরা ১১ জন আর আমরা ১৮ কোটি মানুষ সমর্থন জোগাব মাঠের বাইরে থেকে। এটা আমাদের ক্রিকেটারদের মাঝে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে ৪ বছর পরপর একটি বিশ্বকাপ আসে। অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে এদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অপেক্ষা করে এই বিশ্বকাপের জন্য। তাছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেট বাংলাদেশের সম্ভবনা একটু বেশিই। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেই। ১৯৯৯ সালের সে আসরে ৯২ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল টাইগাররা। এরপর ভারত, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে হয়ে উঠেছে পরাশক্তি। ওয়ানডেতে যে কোনো মঞ্চেই বাংলাদেশ যে কোনো দলকেই হারানোর সামর্থ্য রাখে, সেটা বিশ্বাস করে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। এ যাবত বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছে ওয়ানডে ক্রিকেটে। তার মধ্যে ২০১৯ বিশ্বকাপে মাশরাফির নেতৃত্বে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ।
আমরা আমাদের প্রিয় ক্রিকেট দলকে দেখতে চাই লড়াকু আচরণে। ১৮ কোটি প্রাণের ভালবাসায় সিক্ত ও উৎসাহিত এক দামাল প্রাণ। মাথা নিচু করে অন্যদলের কাছে হার মেনে নেওয়া নয়। নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে দেশের জন্য লড়ে যাওয়া হবে কাম্য। কিন্তু সাম্প্রতিক ম্যাচগুলো দেখে মনে হচ্ছে আমাদের ক্রিকেট দলকে মানসিক দৈন্যতা পেয়ে বসেছে। তা থেকে দ্রুত উত্থান প্রয়োজন। তাই আসুন সকল সমালোচনা উর্ধ্বে দলকে সমর্থন জোগাই। আসুন একত্রে বলি, পাশে আছি আমরা এগিয়ে যাও তোমরা।
লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এজেডএস