Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দূর্গা পূজা নিয়ে বাঙালির আয়োজন

সৌরভ হালদার
৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:০৩

শরতের শিশির ভেজা সকালে মেঘ বলে দেয় এই মাস দুর্গা উৎসবের মাস। চারিদিকে কাশফুল ও শীতের আভাস তাই তো জানান দেয়। এ পূজা শুধু হিন্দুদের নয় এই পূজা শুধু বাঙ্গালির নয় এই পূজা ও এই আন্দন্দ পুরো জাতির। এখানে সবাই মিলে একসাথে এই উৎসবটাকে ধরা দিতে আকুল হয়ে থাকে।

বাঙালির সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব হল দুর্গাপূজা। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে এই পূজা পালিত হয়। এই পূজার মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের মাতৃদেবী দুর্গার আরাধনা করেন। দুর্গাপূজা বাঙালির জীবনে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এই পূজার মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধারণ করে।

বিজ্ঞাপন

দুর্গাপূজার আয়োজন বাঙালির একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা। এই আয়োজনে বাঙালিরা তাদের সাধ্যমতো অংশগ্রহণ করে থাকে। পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব মিলে এই আয়োজন সম্পন্ন করে থাকে। দুর্গাপূজার আয়োজনের মধ্যে রয়েছে প্রতিমা তৈরি, মণ্ডপ সাজানো, পূজা করা, ভোগ প্রসাদ বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।

দুর্গাপূজার প্রতিমা তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিমা শিল্পীরা তাদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দুর্গার প্রতিমা তৈরি করে থাকে। প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা হয়। প্রতিমা তৈরির পর তা মণ্ডপে স্থাপন করা হয়। এরপর, শুরু হয় মণ্ডপ সাজানো যা দুর্গাপূজার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মণ্ডপকে বিভিন্ন ধরনের আলো, সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জা দিয়ে সুন্দরভাবে সাজানো হয়। মণ্ডপের নকশা ও সাজসজ্জা প্রতি বছরই ভিন্ন ভিন্ন হয়। দুর্গাপূজায় পূজা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ,এই পূজায় বাঙালিরা মা দুর্গার আরাধনা করে থাকে। পূজার মাধ্যমে তারা মা দুর্গার কাছে তাদের মঙ্গল কামনা করে থাকে।

বিজ্ঞাপন

দুর্গাপূজায় ভোগ প্রসাদ বিতরণ একটি জনপ্রিয় রীতি। এই প্রসাদ সকলের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ভোগ প্রসাদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, ফল, খাবার ইত্যাদি। দুর্গাপূজায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের নাটক, সঙ্গীত, নৃত্য ইত্যাদি পরিবেশন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে থাকে।

দুর্গাপূজা বাঙালির জীবনে একটি আনন্দের উৎসব। এই উৎসবের মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধারণ করে থাকে। দুর্গাপূজা বাঙালির জীবনে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।দুর্গাপূজাকে ২০১৬ সালে ইউনেস্কো বিশ্বের অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইউনেস্কোর মতে, দুর্গাপূজা হল “একটি ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠান যা হিন্দুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এটি তাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”

দুর্গাপূজার আয়োজনে কিছু সাম্প্রতিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে প্রতিমা তৈরিতে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে।মণ্ডপ সাজাতে ভিন্ন ভিন্ন থিম ব্যবহার করা হচ্ছে।পূজার আয়োজনে পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে।সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নতুন নতুন ধারার প্রবর্তন করা হচ্ছে।এই পরিবর্তনগুলো দুর্গাপূজার আয়োজনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দুর্গাপূজাকে আরও আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।

দুর্গাপূজা বাঙালি সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে তোলে। দুর্গাপূজার আয়োজনে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ একত্রিত হয়। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে থাকে।

চলুন এখন জানা যাক দূর্গা পূজার ইতিকথা।দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হল দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে ভারত উপমহাদেশে প্রচলিত একটি হিন্দু উৎসব। এটি সারা বিশ্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বারা পালিত হয়, তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ওড়িশা, বিহার, ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড, উত্তর প্রদেশ (পূর্বাঞ্চল) এবং বাংলাদেশে ঐতিহ্যগত বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। এটি বাংলা বর্ষপঞ্জির আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপূজা মূলত দশ দিনের উৎসব, যার মধ্যে শেষ পাঁচটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। আশ্বিনের নবরাত্রির পূজা শারদীয় পূজা এবং বসন্তের নবরাত্রির পূজা বাসন্তিক বা বসন্তকালীন দুর্গাপূজা নামে পরিচিত।

দুর্গাপূজার ইতিহাসের সঠিক উৎস জানা যায় না। তবে, ধারণা করা হয় যে, এটি প্রাচীনকাল থেকেই পালিত হয়ে আসছে। রামায়ণের একটি কাহিনী অনুসারে, রাম যখন লঙ্কাযাত্রা করেছিলেন, তখন তিনি তার পিতা দশরথের আদেশ অনুসারে শরৎকালে পার্বতীর দুর্গতিনাশিনী রূপের বোধন, চণ্ডীপাঠ ও মহাপূজার আয়োজন করেছিলেন।

দুর্গাপূজার বর্তমান রূপটি ১৬ শতকের দিকে বাংলায় উদ্ভূত হয়েছিল। তখনকার জমিদাররা এই উৎসবটিকে বিলাসবহুলভাবে উদযাপন শুরু করেছিলেন। ২০ শতকে, দুর্গাপূজা কলকাতায় একটি জনপ্রিয় সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। ২০ শতকে, দুর্গাপূজা ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে।

দুর্গাপূজার মূল থিম হল দেবী দুর্গার অসুর নিধন। দেবী দুর্গা অসুর রাজা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। মহিষাসুর ছিল একজন অত্যাচারী রাজা যিনি দেবতাদের উপর অত্যাচার করত। দেবী দুর্গার আবির্ভাবের ফলে মহিষাসুর বধ হয় এবং দেবতারা রক্ষা পান।

দুর্গাপূজা একটি ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। এই উৎসবটিতে হিন্দু সম্প্রদায় দেবী দুর্গার আশীর্বাদ প্রার্থনা করে। দুর্গাপূজা একটি মিলনমেলাও বটে। এই উৎসবের সময় পরিবার ও বন্ধুবান্ধব একত্রিত হয়।

দুর্গাপূজার কিছু গুরুত্বপূর্ণ রীতিনীতি ও প্রথা নিম্নরূপ:
১.বোধন: দুর্গাপূজার প্রথম দিন দেবী দুর্গার বোধন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে দেবী দুর্গার মূর্তি বা প্রতিকৃতিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
২.চণ্ডীপাঠ: দুর্গাপূজার সময় চণ্ডীপাঠ করা হয়। চণ্ডীপাঠ হল একটি হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ যা দেবী দুর্গার বীরত্বগাথা বর্ণনা করে।
৩.পূজা: দুর্গাপূজার সময় দেবী দুর্গার পূজা করা হয়। এই পূজায় দেবী দুর্গার মূর্তি বা প্রতিকৃতিতে ফুল, ফল, মিষ্টি, ধূপ, দীপ, প্রদীপ ইত্যাদি অর্পণ করা হয়।
৪.বিসর্জন: দুর্গাপূজার দশম দিন দেবী দুর্গার বিসর্জন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে দেবী দুর্গার মূর্তি বা প্রতিকৃতি নদীতে বা সমুদ্রে বিসর্জন দেওয়া হয়।

দুর্গাপূজা ভারতের একটি অন্যতম জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসবটি হিন্দুদের জন্য একটি ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। এটি হিন্দুদের মধ্যে ভক্তি ও সংহতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়।দুর্গাপূজা মূলত দশ দিনের উৎসব, যার মধ্যে শেষ পাঁচটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। এই পাঁচ দিনের প্রতিটি দিনের নিজস্ব নাম এবং অর্থ রয়েছে।

প্রথম দিন: সপ্তমী

প্রথম দিনটিকে সপ্তমী বলা হয়। এই দিনটিতে দেবী দুর্গার মূর্তি বা প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। পূজারীরা দেবী দুর্গার মূর্তি বা প্রতিকৃতিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন।

দ্বিতীয় দিন: অষ্টমী

দ্বিতীয় দিনটিকে অষ্টমী বলা হয়। এই দিনটিতে দেবী দুর্গার পূজা করা হয়। পূজারীরা দেবী দুর্গার মূর্তি বা প্রতিকৃতিতে ফুল, ফল, মিষ্টি, ধূপ, দীপ, প্রদীপ ইত্যাদি অর্পণ করেন।

তৃতীয় দিন: নবমী

তৃতীয় দিনটিকে নবমী বলা হয়। এই দিনটিকে দুর্গাপূজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই দিনটিতে দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের কাহিনী পাঠ করা হয়।

চতুর্থ দিন: দশমী

চতুর্থ দিনটিকে দশমী বলা হয়। এই দিনটিতে দেবী দুর্গার বিসর্জন দেওয়া হয়। পূজারীরা দেবী দুর্গার মূর্তি বা প্রতিকৃতি নদীতে বা সমুদ্রে বিসর্জন দেন।

পঞ্চম দিন: বিজয়াদশমী

পঞ্চম দিনটিকে বিজয়াদশমী বলা হয়। এই দিনটিকে একটি শুভ দিন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই দিনটিতে মানুষ নতুন জিনিস শুরু করে।

দুর্গাপূজার এই পাঁচ দিন হিন্দুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়টিতে হিন্দুরা দেবী দুর্গার আশীর্বাদ প্রার্থনা করে। এইভাবে বিজয় দশমীর মাধ্যমে শেষ হয় মা দুর্গা পূজা ও বাঙ্গালির ঐতিহ্যবাহী উৎসব।”আসছে বছর আবার হবে” এরই মধ্যে শেষ হয় দুর্গা পূজা।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি ব্রজলাল কলেজের, খুলনা

সারাবাংলা/এসবিডিই

দূর্গা পূজা নিয়ে বাঙালির আয়োজন মুক্তমত সৌরভ হালদার

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে আগুনে পুড়ল ৫ দোকান
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৩৪

আরো

সম্পর্কিত খবর