মরণকে বরণ করে নেওয়া নয়, বেঁচে থাকাতেই সমাধান
১০ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:১৮
বর্তমান সময়ে আমরা ধৈর্য ধরতে পারিনা। অল্পতেই সবকিছুতে অনেক বেশি হতাশ হয়ে যায়। সফলতার মাপকাঠি চিন্তা করি অন্যের সাথে তুলনা করে। পরিক্ষায় কেউ আপনার চেয়ে ভালো ফলাফল করলে আপনি ভাবেন আপনি ব্যর্থ। আপনি চাকরি পাচ্ছেন না, অন্যজন পেয়ে গেলে আপনি ভাবেন আপনি ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা মেনে নিতে না পেরে বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। প্রতিদিন খবরের কাগজ খোললেই চোখে পড়ে তরুণদের আত্মহত্যার খবর। যারা আগামীর সম্পদ, যাদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে আগামীর বিশ্ব। পরিক্ষা ভালো ফলাফল না করতে পেরে আত্মহত্যা, চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা, প্রেমে বিচ্ছেদ আত্মহত্যা, বেকার যুবকের আত্নহত্যা, যেন সবকিছুর সমাধান নিহিত এই আত্মহত্যায়। এইতো গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়নিজ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী কাজী ফিরোজ। জানা যায়, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে বিষণ্নতার কারণে তিনি আত্মহত্যা করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ জন মানুষ আত্মহত্যা করছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ৬ বছরে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে আত্মহত্যা করেছে ১০ হাজার ৭৪৯ জন। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দেশে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে যথাক্রমে ১০ হাজার ২৫৬ ও ১১ হাজার। ২০১৯-২০ সময়কালে করোনার সময়ে বাংলাদেশে আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন। স্বাভাবিক সময়ে মেয়েদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি হলেও এ সময়ে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের আত্মহত্যার পরিমাণ ছিল তিন গুণ। ২০২১ সালে ১১ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
২০২২ সালে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যা দিন দিন মহামারি আকার ধারণ করছে। এখন থেকে মুক্তির পথ খোঁজতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে জীবন একটা জার্নি। জীবনে আপনাকে অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে হবে। কখনো খুব বেশি কষ্ট পাবেন, কখনো হাসবেন, কখনো কাদবেন, এটাই জীবন, এটাই জীবনের বৈচিত্র্য। আপনি সবসময় সুখে থাকবেন, শান্তিতে থাকবেন এমনটা চিন্তা করা বোকামি। সুখ-দুঃখের সমন্বয়ে জীবন। সঙ্গিত শিল্পি ফারজানা ওয়াহিদ শায়ান জীবন নিয়ে সুন্দর একটা কথা বলেছেন, যে পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই, যে তার জীবনের কোন এক সময়ে মরে যেতে ইচ্ছে করেনি।” আসলে এটাই সত্য, আমাদের জীবনের এই জার্নিতে কখনো হয়তো কোন কারণে খুব বেশি কষ্ট পায়। আবার কোন একটা কাজে সফল হতে না পেরে নিজেকে ব্যর্থ মনে করি। জীবনের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়। তবে এটা দীর্ঘসময়ব্যাপী থাকেনা না। আপনার কষ্ট একদিন ঘুচবে, আপনিও হাসবেন, আপনিও সফল হবেন, শুধু ধৈর্য ধরে সময়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে ।
আপনার চারপাশে এমন অনেককে দেখবেন যারা জীবনে অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছেন, বার বার ব্যর্থ হয়েছেন, তবুও ভেঙ্গে পড়েননি, ঘুরে দাড়িয়েছেন এবং এক সময় সফল হয়েছেন। দুঃখ-কষ্টকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। যাকিছু হোক বেঁচে থাকতে হবে। মরণকে বরণ করে নেওয়া কোন সমাধান নয়, বেঁচে থাকাতেই সমাধান, বেঁচে থাকাটাও সফলতা। মনে রাখবেন সফলতার নির্দিষ্ট কোন মাপকাঠি নেই। যে খেতে পারেনা, তার জন্য খেয়ে-পরে বেচে থাকাটাই সফলতা। আত্মহত্যার কথা মাথায় নেওয়ার পূর্বে একটু চিন্তা করুন, আপনি মরেগেলে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে? না, বরং আপনার পরিবারকে আপনি আরো বেশি বিপদের মুখে ফেলেগেলেন, তখন সমস্যা আরো দ্বিগুণ হয়। আর আপনিও আত্মহত্যার মাধ্যমে যে মুক্তির পথ খোঁজেছেন সেই মুক্তি আর কখনো পাবেন না।
আল্লাহ তায়ালা আত্নাহতাকারীকে ঘৃণা করেন। মানুষ নিজের প্রাণের মালিক নিজে নয়। প্রত্যেক প্রাণের মালিক মহান রাব্বুল আলামিন। তিনিই জীবন ও মৃত্যু দান করেন। তিনি সব মানুষের জানের নিরাপত্তা দিয়েছেন। এব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করব। এটি আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সূরা-নিসা : ২৯-৩০), আত্মহত্যাকারীর শাস্তির বিষয়ে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রা: রাসূলুল্লাহ সা: থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে (পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে) আত্মহত্যা করতে থাকবে। এটি হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সারাক্ষণ বিষপান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটি হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সেই লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢোকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ (বুখারি-৫৩৩৩)
তাই জীবনে যাইহোক , যত দুঃখ-কষ্ট আসুক কখনো আত্মহত্যার কথা ভাববেন না। জীবনকে যুদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করুন। যত বাঁধা আসবে সব ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করুন। আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ যা করেন ভালো জন্যই করেন এই বিশ্বাস টা রাখুন। যখনি খুব বেশি কষ্ট পাবেন, অশান্তি সৃষ্টি হবে, সৃষ্টিকর্তাকে স্বরণ করুন, দেখবেন দুঃখ-কষ্ট অনেকটাই কমেগেছে, শান্তি অনুভব করছেন, বেঁচে থাকার ভরসা পাচ্ছেন।
লেখক: শিক্ষার্থী; কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই
ইমরান হোসাইন মরণকে বরণ করে নেওয়া নয়- বেঁচে থাকাতেই সমাধান মুক্তমত