Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষানগরীর মানুষ

ইমরান হোসাইন
১২ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:০১

শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ জেলা। শিক্ষার প্রায় সব স্তরেরই প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই নগরীতে। ফলে ময়মনসিংহ বিভাগের আশেপাশে জেলার অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বসবাস এই শহরে। এটি বাংলাদেশের অষ্টম বিভাগীয় শহর। এছাড়াও এটি দেশের কনিষ্ঠতম সিটি কর্পোরেশন। তবে এই শহর এখন ছিনতাইকারীদের শহরে পরিণত হয়েছে। বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীর অনেকগুলো চক্র, এদের হামলার মুখে সম্পদ তো যাচ্ছেই, ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনাও, আগে রাতে ছিনতাই হলেও এখন দিনের বেলায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এরা।

বিজ্ঞাপন

ময়মনসিংহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান- ব্রিজ এলাকা, চরপাড়া, মাসকান্দা, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন, জুবলিঘাট, কাচারি ঘাট, আকুয়া, সানকিপাড়া, জয়নুল আবেদিন পার্ক, প্রতিদিন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত শতশত মানুষ চলাফেরা করে এসব স্থানে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো প্রতিদিনই ঘটছে এই জায়গাগুলোতে চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা। শহরের স্থানীয় বাসিন্দারাও রেহাই পায়না এদের হাত থেকে। নগরীর অনেক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও শিকার হচ্ছে ছিনতাইয়ের। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আসা সংবাদের ভিত্তিমতে শহরের মহাসড়কসহ অন্তত অর্ধশত স্পটে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে নিয়মিত, যার সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকা সহ জাতীয় গণমাধ্যমে কিন্তু হচ্ছেনা এর কোন প্রতিকার, বরং বেড়ে চলছে ছিনতাইকারীদের এই অত্যাচার।

বিজ্ঞাপন

ছিনতাইকারীদের হাতে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে এই শহরে। সম্প্রতি সাদেক আলী ও হাবিবুর রহমান নামে দুই আটোরিকশা চালক নিহত হয় ছিনতাইকারীদের হাতে। ২০১৮ সালে কলেজছাত্র ইব্রাহীম ও বিকাশের এজেন্ট হরি নামে দু’জন নিহত হয়েছেছিলেন ছিনতাইকারীদের হাতে। শহরবাসীর অভিযোগ স্থানীয় পুলিশি নজরদারির অভাবে একের পর এক ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে নিরীহ মানুষ। ছিনতাইকারীদের এমন বেপরোয়া দৌরাত্মে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই নেশাখোর ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বাড়ে এই জায়গাগুলোতে। আশেপাশে যাতায়াতকারীদের একা পেলেই মোবাইল ও টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয় তারা। শুধু তাই নয়, নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটাচ্ছে ছিনতাইকারীরা। লোকলজ্জা ও প্রাণ ভয়ে এসব অনেক ঘটনাই চেপে যাচ্ছে কেউ কেউ। আবার অনেকেই বাঁধা দিতে গিয়ে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাত এবং মারধরের শিকার হচ্ছেন। এগুলো নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছেকম। দিন দুপুরে মহিলাদের কানের দুল, নাকের ফুল ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারীরা।

গতকাল শহরের চরপাড়া মোড় থেকে আমার বন্ধুর মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। ছিনতাইকারীর স্বীকার হয়েছি আমি নিজেও, কিছুদিন আগে শহর থেকে বাসা আসা পথে কয়েজন মিলে পিছন থেকে ছুরি ধরে, মোবাইল, মানিব্যাগ নিয়ে যায়। এর আগে কয়েকবার এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। নেশাগ্রস্থ, বখাটে শ্রেণীর অভাবগ্রস্ত যুবক কিশোররা জড়িয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারী চক্রে, এদের পরিচালনা করছে শহরের অনেক বড় বড় মাথারা, যাদের ছত্রছায়ায় ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে এদের অগ্রগতি। নেশা করার জন্য পর্যাপ্ত টাকা না থাকলে কয়েকজন মাদকাসক্ত মিলে তৈরি করছে একেকটি ছিনতাইকারী চক্র। নেশার টাকা পেয়ে গেলেই তারা চলে যায় নেশা করতে, আবার পরেরদিন নেশা করার জন্য তারা একই কায়দায় অন্য কারো কাছ থেকে ছিনতাই করে থাকে। এসব নেশাখোর ছাড়াও বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয় নিয়মিত চোর-ছিনতাই-পকেটমার চক্রগুলো।

শহরের মানুষ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। চলাচল করার সময় মানুষের মাঝে আতংক কাজ করে, কখন ছিনতাইকারী কবলে পরে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষানগরী এই জেলার প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে। পড়াশোনার জন্যও কেউ আসতে চাইবে না এই শহরে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরো বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন এ ব্যাপারে। যথাযথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ছিনতাইকারী সদস্যদের দ্রুত আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করছে শহরের মানুষ। এ সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।

লেখক: শিক্ষার্থী; কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

ইমরান হোসাইন নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষানগরীর মানুষ মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর