জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে মূল্যায়ন করুন
১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:১৩
ত্রিশ পেরিয়ে একত্রিশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা স্তরের অন্যতম বৃহৎ প্ল্যাটফর্ম। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের তদারকি করতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনায় বাড়তি চাপ পোহাতে হচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। সেই চাপ কমাতে ও অধিভূক্ত কলেজগুলোর মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালের ২১শে অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চশিক্ষা মূলত এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়ে থাকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের প্রায় ৪০-৫০ লক্ষ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা ক্যাটাগরিতে রয়েছে স্নাতক (সম্মান) কোর্স, স্নাতক (পাস) কোর্স ও স্নাতকোত্তর।
দেশের উচ্চশিক্ষা অঙ্গনে সর্ববৃহৎ প্ল্যাটফর্মে থেকেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নানামুখী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবহেলার জাঁতাকলে। যেখানে দেশের বেশির ভাগই অর্থাৎ প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। অথচ সেখানেই যত সমস্যা এবং প্রতিবন্ধকতা সবকিছুই যেন এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে আবর্তিত।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক আবর্তিত সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে সেশনজট। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও সেশনজট সমস্যা নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই সেশনজটের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর জীবনে আজ বিপর্যয় নেমে এসেছে। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে সময়োপযোগী শিক্ষাব্যবস্থার অনুপস্থিতি, কারিগরি শিক্ষায় অনগ্রসরতা এবং ক্লাস ও অবকাঠামোগত সমস্যা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই তামাশা যেন কোনভাবেই থামছে না।
শুধু তাই নয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যবর্তী বিস্তর ফারাক। এই প্রতিবন্ধকতার দেয়াল পেরোতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে পরিসমাপ্তি ঘটে গেছে। এমনকি এই প্রতিবন্ধকতার সমাধান খুঁজে না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। তারপরও এমন প্রতিবন্ধকতার অভিশপ্ত দেয়ালে আটকে আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন প্রতিবন্ধকতা থেকে শিক্ষার্থীরা আদৌ মুক্তি পাবে কি?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রতিবন্ধকতাজনিত কারণে আর কত শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি এবং আর কত শিক্ষার্থীর অকালে জীবন গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সর্ববৃহৎ সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ সংক্রান্ত জটিলতা। এককথায় যাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনিয়ম বা চূড়ান্ত গাফিলতিও বলা চলে। কেননা– দেখা যায় যে, একজন পরীক্ষার্থী যদি আটটি কোর্সের ছয়টি কোর্সে আশানুরূপের চেয়েও বেশি মার্কস পেয়ে যাচ্ছে। আর বাকি দুইটা কোর্সে হয়তো সি গ্রেড নয়তো সি প্লাস গ্রেড পাচ্ছে। কিংবা এমনও হয়ে থাকে, বাকি দুটো কোর্সেই এফ গ্রেড আসছে। এখন এই অকৃতকার্য কোর্স দুটির উত্তরপত্র অনলাইনে পুনঃনিরীক্ষণ আবেদন করে কখনোই সঠিক প্রতিকার মেলেনি।
কিন্তু একজন পরীক্ষার্থী তার অকৃতকার্য কোর্সসমূহ সরাসরি চ্যালেঞ্জ করতে পারছে না। কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় একমাত্রই ঢাকার গাজীপুরে। যা বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বাইরে অন্যান্য জেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরীক্ষার্থীদের জন্য দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যালয়ে এসে উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ করা ক’জনের ভাগ্যে আর জুটে?
সর্বোপরি– জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকারের প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপার সম্ভাবনা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কেবল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর জীবন প্রাণ ফিরে পাবে। অতঃপর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি ও সুবিবেচনা কামনা করছি।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ
সারাবাংলা/এসবিডিই
এস এম রাহমান জিকু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে মূল্যায়ন করুন মুক্তমত