Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিলুপ্তপথে দোয়েল, এভাবে অন্যান্য পাখিরাও হারিয়ে যাচ্ছে না তো?

তৌহিদ-উল বারী
১৮ অক্টোবর ২০২৩ ১১:২৫

লাউ কিংবা শিমের মাচায় নতুবা বাড়ীর আঙিনায়-উঠোনে যে পাখিকে নেচে খেলে চলতে দেখা যেত, আনাচে কানাচে শিস বাজিয়ে মানুষের দ্বারপ্রান্তে থেকে মিষ্টি সুরে ডাক পারতো সেই পাখিটাকে আজ আর তেমন দেখা যায় না। কেবল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দুই টাকার নোটেই যেন তার দেখা মিলে। সবুজ প্রকৃতি জুড়ে থেকে মানুষকে বিমোহিত করা পাখিটা আজ কোথায়? কোথায় হারালো তারা?

কথা বলছি, দেশের জাতীয় পাখি দোয়েল নিয়ে। একটা সময় ছিলো পাখিটির আনাগোনায় প্রকৃতি সৌন্দর্যময় আর আকর্ষণীয় হয়ে উঠতো। সবুজ প্রকৃতি জুড়ে ছিলো যার অবাধ বিচরণ। সকালবেলা সূর্য উঠার সাথে সাথে মিষ্টি সুরে ডাক পেড়ে মানুষের ঘুম ভাঙাতো এই পাখিটি। পাখিটির মিষ্টি সুরে যে কেউ বিমোহিত হয়ে যায়। যেন মানুষের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক, আর সে সম্পর্কে থেকে বাঁশির সুরে মানুষকে ভালোবাসা দিতো এ পাখিটি।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সাদা-কালো রংয়ের স্মৃতি-বিজরিত এ পাখিটি এখন আর তেমন দেখা যায় না। টিয়া, ঘুঘু, কাক, মাছরাঙা ইত্যাদি পাখি বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল তেমন আর মানুষের চোখে পড়ে না। মুরব্বীরা বলতো, মুয়াজ্জিনের আযানের সুরে এরা সুর মেলাতো। আর গাছের ডালে বসে নামাজে রত হতো। তবে একটা সময় পরিচিত এ পাখির চি চি শব্দ শুনতে পাওয়া গেলেও তার সুর এখন আর কানে শোনা যায় না বললেই চলে। বাঁশ গাছ, নারিকেল আর সজিনা গাছে অথবা বাড়ির ছাদে পাখিটিকে সবসময় দেখতে পাওয়া গেলেও সে পাখিটি এখন আর আগের মত চোখে পড়ে না।

ধারণা করা হচ্ছে নদী ভাঙ্গনের ফলে ফসলি জমিতে উঠছে ঘরবাড়ি, জনসংখ্যা প্রভাবে কোথাও না কোথাও প্রতিদিন নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি করতে গাছ কেটে বন উজাড় করে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। খাদ্য সংকট আর যথাযথ বাসযোগ্য স্থানের অভাবে এরা আজ বিলুপ্তপ্রায়।

বিজ্ঞাপন

ফলে দোয়েল পাখির মতো বনে জঙ্গলে তেমন পাখির দেখা মিলছে না। পাশাপাশি অতিরিক্ত মুনাফার আশায় বনে চোরা শিকারীরা বিভিন্ন ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে শিকারের হাত থেকে বাঁচতে জীবন রক্ষার্থে পাখিরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অনেক সময় তাদের হাতে মারাও যাচ্ছে পাখি। অথচ প্রশাসনের তেমন কোন তৎপরতা নেই। তাহলে বন বিভাগ কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় এসব পাখিরা হারিয়ে যাচ্ছে নাকি মানবসৃষ্ট প্রকৃতি বিনষ্টের ফলেই এসব পাখিরা বিলুপ্তির পথ বেছে নিচ্ছে?

যেহেতু দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখী। তাই দোয়েল পাখি সংরক্ষণে আমাদের সচেতনতা বাড়ানোর পাশ পাশি আমাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা দরকার পক্ষিকুল রক্ষার্থে। সচেতন মহল মনে করছেন এক সময় হয়তো আমাদের পরিবেশের খাদ্য শৃঙ্খল ও খাদ্য জাল থেকে হারিয়ে যাবে এই জাতীয় পাখি দোয়েলের মতো অন্যন্য পাখিরাও। এজন্য সচেতন মহলের অভিমত, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সরকারের উচিৎ আইন প্রণয়ন করে পাখি শিকারের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ জোরদার করা, সরকারী-বেসরকারীভাবে পক্ষীকুল সংরক্ষনের উদ্যোগ গ্রহন করা। অন্যথায় এক সময় ধ্বংস হয়ে যাবে এদেশের বন্যপ্রাণী ও ইতিহাস ঐতিহ্য স্মৃতি জড়িত দোয়েলের মত পাখি।

লেখক: শিক্ষার্থী; বাকলিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম

সারাবাংলা/এসবিডিই

তৌহিদ-উল বারী বিলুপ্তপথে দোয়েল- এভাবে অন্যান্য পাখিরাও হারিয়ে যাচ্ছে না তো? মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর