বর্তমান সরকারের আমলে যোগাযোগ ব্যবস্হায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এক এক করে মেগা প্রকল্পগুলো যোগাযোগে নতুন দুয়ার সৃষ্টি করছে। ১৫ বছর আগে মানুষের কাছে যা ছিল স্বপ্ন। তা বাস্তবে রূপদান করছে বর্তমান সরকার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যার একনিষ্ঠ প্রচেষ্ঠায় বড় বড় প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান। শেখ হাসিনার এ মেগা প্রকল্পগুলো করার ঘোষণায় অনেকেই তা স্বপ্ন হিসেবে নিয়েছিল। অসম্ভব বলে উল্লেখ করেছিল। অনেকে বাংলাদেশে তা নয় বলে মন্তব্য করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা তো বঙ্গবন্ধুর মতো। তিনি বাংলার মানুষকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে জানেন। স্বপ্ন পূরণ করার প্রচেষ্টা করতেও জানেন। তিনি বাংলার মানুষের স্বপ্নকে পূরণ করেছেন।
২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের এক নির্বাচনী এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করার অঙ্গীকার করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যার এ ঘোষণায় অনেকেই তা স্বপ্ন মনে করেছিল এবং বলেছিল বাংলাদেশে তা সম্ভব নয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা তো বঙ্গবন্ধুর মতোই। বাঙালিদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে, বাস্তবে তা রূপদান করেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার কারণে, সাহসিকতার কারণে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ আজ দৃশ্যমান। স্বপ্ন দেখতে সাহস লাগে, দূরদর্শিতা লাগে। তা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলার মানুষদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু যেমন লড়াই করে বাঁচতে শিখিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যাও তারই প্রতিচ্ছবি।
১/১১ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বসে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। রূপরেখা তৈরী করেছিলেন বাংলাদেশকে নিয়ে। আজ বাংলাদেশের মানুষ সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। বাঙালিরা বিশ্বের যেখানেই যাক না কেন বাঙালিরা গলা উঁচু করে বলতে পারে আমাদের কি নেই! আমাদের সবকিছু আছে। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করতে পেরেছি। মেট্রোরেল করতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু টানেল করতে পেরেছি। রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে পেরেছি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, স্যাটেলাইট, সাবমেরিন, পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কি নেই আমাদের আজ। প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছেন- আমরা একদিন চাঁদেও যাব, ইনশাআল্লাহ। ধরতে গেলে প্রতিটা সেক্টরেই সুনামের সহিত বড় মেগা প্রকল্প করতে পেরেছি। এ ধরণের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। যা জাতিকে গর্বিত করেছে।
বড় মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’। আগামী ২৮ অক্টোবর জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পরই আনোয়ারা কেইজিজেড মাঠে জনসভায় ভাষণ দিবেন। এরপরের দিন বঙ্গবন্ধু টানেল সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। অতি সহজেই দক্ষিণ চট্টগ্রাম হয়ে মানুষজন কক্সবাজারে যেতে পারবে। মানুষের অর্থ, সময় বাচঁবে। যানজট থেকে মুক্তি পাবে নগরবাসী। টানেলের দু’পাশে গড়ে উঠবে শিল্পকারখানা। অর্থনীতির চাকা মজবুত হবে। এ টানেলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। এ টানেল চট্টগ্রামের কর্ণফুলির তলদেশ দিয়ে পতেঙ্গা-আনোয়ারা কে সংযুক্ত করেছে। বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। আর টানেলের সংযোগ সড়ক সহ মোট দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। আর এ টানেল নির্মাণের জন্য নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে তৈরী করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮০ মিটার ব্যাসের দুইটি টিউব। এ দুইটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলের মধ্যে দুইটি টিউব থাকলেও সংযোগ সড়ক রয়েছে তিনটি। এর মধ্যে একটি বিকল্প পথ হিসেবে প্রথম দুইটির সঙ্গে যুক্ত থাকবে। আর দুই সুড়ঙ্গের মধ্যে প্রথমটির সংযোগ পথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ১৪ মিটার। আর দ্বিতীয়টির সংযোগ পথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৩৪ মিটার। আর তৃতীয় এবং সর্বশেষ টির দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৭৪ মিটার। প্রত্যেকটির ব্যাস গড়ে সাড়ে চার মিটার।
বঙ্গবন্ধু টানেলের মধ্যে গাড়ির গতিবেগ ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটারের বেশি হতে পারবে না। ১০০ টি’র ও বেশি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। যা মনিটরিং রুম থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। গ্যাস সিলিন্ডারসহ বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থ বহনকারী কোন গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এমনকি হেঁটে চলাচল করা যাবে না টানেলের ভিতর দিয়ে। কোন গাড়ি দাঁড়ানো যাবে না।
এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পুরোদমে টানেল চালু হলে প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি চলাচল করবে। এই ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ এর চট্টগ্রামের মানুষের জন্য অনেক খুশি ও আনন্দের সংবাদ। টানেল হওয়ার কারণে আনন্দে আত্মহারা চট্টগ্রামবাসী। কারণ এটি চট্টগ্রামের বুকেই হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। সারা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খুশি, আনন্দের আমেজ বইছে, দেশের সর্বপ্রথম টানেলকে ঘিরে। সারাবাংলার মানুষের স্বপ্ন পূরণ করছে জননেত্রী শেখ হাসিনা।
‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ এর জন্য ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। দেশের প্রথম এই টানেল নির্মিত হচ্ছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায়। টানেল নির্মাণের টিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। বঙ্গবন্ধু টানেলের কারণে দেশের যে কোন জায়গা থেকে চট্টগ্রাম সিটিতে প্রবেশ না করেই পতেঙ্গা হয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে আনোয়ারা হয়ে দ্রুত কক্সবাজার চলে যেতে পারবে। এতে ভ্রমণপিপাসুদের অর্থ, সময় বাচঁবে। টানেলের দুই প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার এপ্রোচ সড়ক। পাশাপাশি টানেলের আনোয়ারা সংযোগ স্হলে ৭৭২ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে।
টানেলটির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। শিল্পায়ন ও এশিয়ান হাইওয়ের সংযোগ এ টানেলটি বহুমুখী ভূমিকা পালন করবে। টানেলের মাধ্যমে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর ও মহেশখালীর সংযুক্ত হবে পুরো দেশ। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু টানেলকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার সাথে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্হায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। সেন্টমার্টিন, বান্দরবান টানেল দিয়ে অতি সহজেই যেতে পারবে। টানেলের কারণে পর্যটনখাত আরো মজবুত হবে। এ টানেলের ফলে ইতোমধ্যে টানেলের দুই পাশে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আনোয়ারা উপজেলার টানেল প্রান্তে সংযোগ সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠছে অসংখ্য শিল্প কারখানা। টানেলকে ঘিরে পর্যটন ও শিল্পায়নসহ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। এ টানেল চালু হলে টানেলের দুই পাশে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে কর্ণফুলি নদী পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র আড়াই মিনিট। মানুষের সময় বেচে যাওয়ার ফলে অর্থনীতিতে গতি আসবে। বিদেশি পর্যটক বাড়বে। দেশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। দেশের অর্থনীতি মজবুত হবে। মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হবে, বিশেষ করে চট্টগ্রামের মানুষের।
কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩৬ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ তৈরী করা হয়েছে। নদীর মাঝ পয়েন্টে সুড়ঙ্গের গভীরতা প্রায় ১৫০ ফুট। প্রতিটি ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার। ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ জিডিপি তে অবদান রাখবে। টানেল চালু হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাবে শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ। এ টানেলের মাধ্যমে বৃহত্তর চট্টগ্রামে ব্যবসা বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন ঘটবে। নতুন নতুন শিল্প গড়ে উঠার কারণে কর্মসংস্হান বৃদ্ধি পাবে। বেকারত্ব কমবে। বাড়বে অর্থের আদান প্রদান। অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব পড়বে। আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম হবে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। এগিয়ে যাবে দেশ। সক্ষমতা বাড়বে বিশ্বের কাছে। সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ