Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুপেয় পানির সংকট বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেত

আজহার মাহমুদ
১ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৩২

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আশঙ্কাজনক হারে সুপেয় পানির স্তর দিনের পর দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। পৃথিবীব্যাপী জেঁকে বসা এই সমস্যা বাংলাদেশেও মারাত্বক আকারে ধারণ করবে অচিরেই। ইতোমধ্যেই তার কিছু লক্ষণও দেখা গেছে। আগামী দিনে এই সংকট বাংলাদেশের জন্য বড় ‘অশনি সংকেত’।

বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। এ দেশে প্রচুর সুপেয় পানির উৎস রয়েছে। তবে এসব উৎসগুলো ক্রমাগত দূষিত হচ্ছে এবং পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। এমন কি ভূপৃষ্ঠের পানি এবং ভূগর্ভস্থ পানির উৎস উভয়ই নানাভাবে দূষিত ও বিষাক্ত হচ্ছে নিয়মিত। ট্রেস ধাতু, কলিফর্মের পাশাপাশি অন্যান্য জৈব ও অজৈব দূষকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে দূষিত হয়ে চলেছে এদেশের পরিবেশ ও পানির উৎস।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাবের বড় শিকার। এদেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার সমগ্র অঞ্চল ও অধিবাসীগণ সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেনিটেশন ও দক্ষতা বৃদ্ধিসহ কর্মসংস্থানের যুগোপোযুগী এবং কৌশলগত পরিকল্পনার অভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অথচ এসব নিয়ে ভাবার কেউ নেই। সরকারি বেসরকারি এনজিও গুলো এসব সমস্যার কোনো দৃশ্যমান সমাধাণ দিতে পারছে না।

জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত কারণে সাগরের তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং সংযুক্ত নদ-নদীগুলো দূষিত পানি প্রবাহ সাগরে ঠেলে দিচ্ছে। আর্সেনিকের বিষক্রিয়া বাংলাদেশে এখন প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণ। আনুমানিক ৭৫ মিলিয়ন মানুষ আর্সেনিকযুক্ত জলের সংস্পর্শে এসেছে ও আরো আসতে শুরু করেছে। এ ধরণের বিষক্রিয়া ভবিষ্যতে প্রায় ৩ লাখ মানুষের ক্যান্সার-সম্পর্কিত রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। সাগর উপকূলগুলোতে লবনাক্ত পানি এলাকায় উপকুলীয় জনগোষ্ঠির পানির অধিকারকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ করেছে, মানুষের জীবন ও জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তাই বাংলাদেশের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে প্রশাসনকে। সরকারি বরাদ্দ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার সঙ্গে সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বন্ধ, এলাকাভিত্তিক বড় বড় পুকুর, খাল ও জলাশয় খনন করে তাতে বৃষ্টির পানি সঞ্চয় ও ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও সরকারি খাসজমিগুলোতে মিঠা পানির আধার তৈরি করা যেতে পারে।

ইউনিসেফের এক জরিপ বলছে, চীনের ১০ কোটি ৮০ লাখ; ভারতের ৯ কোটি ৯০ লাখ ও নাইজেরিয়ার ৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ সুপেয় পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত। অন্যদিকে ইথিওপিয়ায় ৪ কোটি ৩০ লাখ; ইন্দোনেশিয়ায় ৩ কোটি ৯০ লাখ ও পাকিস্তানে ১ কোটি ৬০ লাখ সুপেয় পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমাদের দেশেও আছে চরম সংকট। এখানে প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ জনগোষ্ঠী পানি সংকটের মধ্যে জীবন যাপন করে।

নেদারল্যান্ডসের পানি বিষয়ক বিশেষ দূত হেংক ওভিংক বলেছেন, গত ৪৬ বছরের মধ্যে এ প্রথম বিশ্ব পানি ইস্যুতে একত্রিত হচ্ছে। তাজিকিস্তানকে সাথে নিয়ে দেশটি জাতিসংঘ পানি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করছে। সম্মেলনের প্রাথমিক লক্ষ্য বৈশ্বিক পানি সংকট নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং পানি সম্পর্কিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ অর্জনে আন্তর্জাতিকভাবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

তথ্যমতে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পানি মজুত আছে কানাডাতে এবং সবচেয়ে কম কুয়েত। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কুয়েত শক্তিশালী হওয়ায় সমুদ্রের পানিকে ডিস্যালাইনেশন প্রক্রিয়ায় পানের উপযোগী করছে। কিন্তু সবদেশ এই প্রক্রিয়ায় সমুদ্রের পানি লবণমুক্ত করতে পারবে না। কারণ এটি অনেক ব্যয়বহুল। বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা অনেক কঠিন।

তাই এখন থেকেই সবাইকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পানি ব্যবহার বন্ধ করা এবং পানি দূষণের মাত্রা কমিয়ে একদম শূন্যের কোঠায় আনা এখন অত্যান্ত জরুরী। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ ও ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি না করতে পারলে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করবে ভবিষ্যতে।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

আজহার মাহমুদ মুক্তমত সুপেয় পানির সংকট বাংলাদেশের জন্য আশনি সংকেত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর