সরকারি স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় লটারি সিস্টেম কতটুকু যৌক্তিক?
২ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৪৬
নভেম্বর মাস। সামনে জাতীয় নির্বাচন। যার ফলশ্রুতিতে চলতি মাসেই বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা শেষ হবে বাচ্চাদের। জানুয়ারিতে সরকারি স্কুলে ভর্তির হিড়িক শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই। বাবা-মায়ের প্রচন্ড টেনশন বাচ্চাকে ভালো একটা স্কুলে দিতে হবে। এই টেনশনে মোটামুটি বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা যে শুরু হয়ে গেছে তারপরও কারো কোনো বিশ্রাম নেই। সবাই আরও বেশি টেনশনে যে, বাচ্চাকে ভালো একটা স্কুলে দিতে হবে। এবং বাচ্চা আদৌও ভালো স্কুলে চান্স পাবে কিনা?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, এখন সরকারি স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে যে নিয়মটা অর্থাৎ লটারি সিস্টেমের মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়। আগে যেখানে আমরা পরীক্ষা দিয়ে তারপরে স্কুলগুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতাম। সেখানে এখন লটারি সিস্টেমে বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করানো হয়। লটারি সিস্টেমটা কেন করা হয়? সেটা আমি সঠিক জানিনা। তবে আমি এই লটারি সিস্টেমটা ব্যক্তিগত ভাবে যৌক্তিক মনে করছি না। এটা কেন করা হয় জানিনা কিন্তু এই লটারি সিস্টেমটা তুলে ফেলা উচিত।
প্রয়োজনে স্কুলের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। যদি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হয় সেক্ষেত্রে স্কুলের আসন সংখ্যাও বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু লটারি সিস্টেম থাকা উচিত না। কারণ একটা শিক্ষার্থী হয়তোবা সে অনেক মেধাবী, অনেক ট্যালেন্টেড। যদি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে হতো সে ফার্স্ট বা সেকেন্ড হতো। কিন্তু লটারি সিস্টেমের কারণে তার ভাগ্য সহায় হলো না। সে ভালো একটা স্কুলে ভর্তি হতে পারলো না। এই ব্যাপারটা তার সাথে অন্যায় করা হয়েছে ঠিক এমনটাই। এভাবেই দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী ভাগ্যচক্রে নিয়তির জাতাঁকলে পিষ্ট হয়ে সরকারি স্কুল বা ভালো একটা স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে। এখন আরও দেখা যায়, বাবা-মায়ের চোখে-মুখে টেনশনের ছাপ আর বিষন্নতা। তাদের হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি একটা-ই, আমার ছেলেটা বা মেয়েটা পড়াশোনায় অনেক ভালো। কিন্তু লটারিতে সে বা তার ভাগ্য সহায় হবে কিনা? সে তো তারা জানে না।
তাছাড়া এই লটারি সিস্টেমে অনেকটা অনিয়মও চোখে ধরা পড়ে। অনিয়ম বলতে এই ভর্তি সিস্টেমে অনেক ধরণের তদবির হয়ে থাকে, অনেক ধরণের স্বজনপ্রীতি হওয়ারও বিশেষ সুযোগ থাকে। এই অনৈতিক সুবিধাটুকু কিন্তু পর্দার আড়ালে খুবই সূক্ষ্ম ভাবে ঘটে থাকে। এভাবেই উপর মহলের একটা ফোন বা এক টুকরো সুপারিশপত্রের কাছে হাজারো মেধাবীর স্বপ্ন লুটপাট হয়ে আসছে। ভর্তি লটারি হবে, একটু যদি আমার ছেলেটা বা মেয়েটার কথা বলে রাখেন। এই বলে রাখার সিস্টেম বন্ধ করাটা অতীব জরুরি। এছাড়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই লটারি সিস্টেমটা কিন্তু বাচ্চাদের মধ্যেও এক ধরণের নেতিবাচক মানসিকতার প্রভাব চেপে বসে। সে যদি চিন্তা করে, আমার চান্স পাওয়াটা ভাগ্যের উপর নির্ভর করতেছে। তাহলে সে কতটুকু পড়াশোনা করবে? বা কতটুকু শ্রম দেওয়া উচিত তার পড়াশোনার ক্ষেত্রে? এই জায়গা থেকে আমার কাছে মনে হয় যে, এই লটারি সিস্টেমটা তুলে ফেলা উচিত।
সরকারি স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় লটারি সিস্টেমের বিকল্পে অন্য কোনো যৌক্তিক পদ্ধতি চালু করতে, আমাদের যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আছে অথবা যারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আছেন তারা কিন্তু এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু চিন্তা করতে পারেন। লটারি সিস্টেমের পরিবর্তে যদি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কে বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে কিন্তু মেধার যাচাইটা করার সুযোগ অনেক বেশি থাকে। তবেই প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীদের দুঃখ লাঘব হবে বলে মনে করি। যদি মনে করেন, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করানোটা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। লটারি সিস্টেমটা যদি সহজ হয়, সেক্ষেত্রে এটা নিয়ে আরও কিন্তু চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। তাহলে কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে সেটা আরও সহজ পদ্ধতিতে নেওয়া যায়?
সর্বোপরি মনে করি, এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য স্কুলের আসন সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে অথবা স্কুলের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। সরকারি স্কুল যেগুলো আছে, সেগুলোকে আরও বড় আকারে করা যেতে পারে। এছাড়া আরও কার্যকরী এবং যুগোপযোগী অনেক কিছুই করা যেতে পারে। কিন্তু সরকারি স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় এমন অযৌক্তিক, অবাঞ্ছিত এবং অপ্রাসঙ্গিক লটারি সিস্টেম বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি। অতঃপর এই লটারি সিস্টেম বন্ধ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চিন্তাভাবনা করা উচিত। এবং পাশাপাশি সমাজের সচেতন নাগরিক মহল থেকে শুরু করে সর্বস্তরের অবিভাবকদের এই ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া উচিত।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ
সারাবাংলা/এসবিডিই
এস এম রাহমান জিকু মুক্তমত সরকারি স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় লটারি সিস্টেম কতটুকু যৌক্তিক?