ঈশ্বরদীতে বৃদ্ধি করা হোক ট্রেন ও আসন সংখ্যা
১ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:১৯
বন্ধের পথে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন বাক্যটি সত্য না হলেও সত্যের পথে এমনটা ভাবলে মনে হয় এখন পর্যন্ত অসত্য হবে না। কারণ আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় দীর্ঘদিন যে স্টেশন থেকে ঢাকাগামী যাত্রীদের আসনের ব্যবস্থা করতে পারে নি রেলওয়ে বিভাগ, সেখানে দুইটি ট্রেনের রুট পরিবর্তন করা অর্থ এই পুরাতন ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশন স্টেশনের ক্রমশ বিলিন করা ছাড়া তো কিছু আমার মনে হয় না। ভাল মানের ট্রেনগুলো না চললে যাত্রীরা ট্রেনের প্রতি আস্থা হারাবে, একসময় যাত্রী না হওয়ার অজুহাতে স্টেশন বন্ধ ঘোষণা করা সহজ হবে।
জনসংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে ঈশ্বরদীর শিল্প কলকারখানা। বিশেষ করে মেগা প্রজেক্ট রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে আরও বেড়েছে ঈশ্বরদীর জৌলুস। কিন্তু পরিণামে কি পেতে যাচ্ছে ঈশ্বরদীবাসী? পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সহযোগীতা করার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরদীবাসী সরকারের উন্নয়নের একটি বড় অবদান রেখেছে বলে আমি মনে করি। সেই কারণে ঈশ্বরদীকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। আর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ফলে বিভিন্ন প্রয়োজনেই বাড়বে যাত্রীসংখ্যা। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে ঢাকা কেন্দ্রিক চলাচল। কিন্তু চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া স্বত্ত্বেও দুইটি ট্রেনের রুট পরিবর্তন দুঃখজনক।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ নভেম্বর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস এই দুটি ট্রেন পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করবে। ফলে ঈশ্বরদী রুটের অন্য স্টেশনে এ ট্রেন চলাচলের সুযোগ নেই। যদিও দুই ট্রেনের পরিবর্তে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনে ধুমকেতু ট্রেন থামানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি দেওয়া হয়েছে। মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেন রাজশাহী থেকে ঢাকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটিও ঈশ্বরদীতে যাত্রাবিরতি দেবে। পাবনা থেকে একটি ট্রেন ঢাকা চলাচলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। এটিও ঈশ্বরদী স্টেশন হয়ে চলাচল করবে বলে রেলওয়েসূত্রে জানা গেছে। ট্রেন যাত্রা বিরতি দিবে ঠিক আছে কিন্তু আসন সংখ্যা কত হবে জানা গেছে? চাহিদা অনুপাতে আসনসংখ্যা অপ্রতুল কি না ভেবে দেখেছেন?
যেখানে আসন সংখ্যা বেশি দাবি, সেখানে ট্রেন কমিয়ে দেওয়া আমার কাছে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত মনে হয় নি। ঈশ্বরদীর ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ঢাকাগ্রামী সকল ট্রেনের যাত্রাবিরতি ও আসনসংখ্যা বৃদ্ধির দাবিতে বুধবার ২৫ অক্টোবর সকাল ১১টায় ঈশ্বরদী বাজারের প্রধান ফটকের সামনে ঈশ্বরদীতে মানববন্ধন ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যদিকে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্মে ঈশ্বরদী রেল ষ্টেশন থেকে কয়েকটি ট্রেন অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়। ‘আমরা ঈশ্বরদীবাসী ও ঈশ্বরদীবাসীর পক্ষে মিলন চৌধুরী’র ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন। আগামীতে আরও মানববন্ধন বা কঠোর কর্মসূচি হবে এটা বলে ঘোষণা এসেছে। আমি মনে করি যার যার অবস্থান থেকে এই দাবিতে সোচ্চার হওয়া উচিত। কারণ প্রয়োজনীয়তা উপস্থাপন না করলে একসময় চক্রান্তেই বিলিন হবে ঐতিহ্যবাহী এই জংশনটি। যেমনভাবে পরিত্যক্ত ভ’মিতে পরিণত হয়েছে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর।
ঈশ্বরদী উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ বাস করে। উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা আছে। সারা উপজেলায় পাঁচটি রেলস্টেশন থাকলেও ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন রেলস্টেশন দিয়ে বেশি মানুষ যাতায়াত করে। এই স্টেশনের যাত্রীদের জন্য ট্রেন দুটির ৩০টি করে আসন বরাদ্দ আছে। অথচ এই রেলস্টেশন দিয়ে প্রতিদিন কয়েক শ মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করে। আসন না পেয়ে ঈশ্বরদী রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠে অনেক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের বেশি সমস্যা হয়। কোন জনগুরুত্বপূর্ণ কারণ বিবেচনা করে ট্রেনসংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হলো আমার মত অনেকেরই বোধগম্য নয়। তবে ঢাকার গুরুত্ব বেড়েছে এটা নিঃসন্দেহে বিবেচনা করা যায়।
দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের সময় বিবেচনায় পদ্মাসেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলকে আমি সাধুবাদ জানায় কিন্তু তাই বলে জনগুরুত্বপূর্ণ উত্তরবঙ্গকে অবহেলা করে নয়। নতুন ট্রেন যোগ করে রেল চলাচল হলে কি কোন ক্ষতি হতো? উত্তরবঙ্গে নতুন ট্রেন যোগ করে সুন্দরবন এক্সপ্রেস পরিবর্তন করলে কি ভুল হতো? বাংলাদেশ রেলওয়ে বাংলাদেশের সম্পদ। রেলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে বিষয়টি ভাবা দরকার।
রেলওয়েকে বলা হয় নিরাপদ ভ্রমনের আস্থা। জনগণের সার্বিক কল্যাণের চিন্তায় প্রতিবছর লোকশান দিচ্ছে সরকার। যেহেতু যাত্রী বাড়ছে তাহলে কেন কমানো চাহিদা? সেই বিবেচনায় ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের ঐতিহ্য বাড়ানো হোক। বৃদ্ধি করা হোক ঢাকাগামী ট্রেন। বাড়ানো হোক আসন সংখ্যা।
লেখকঃ সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
সারাবাংলা/এসবিডিই
ঈশ্বরদীতে বৃদ্ধি করা হোক ট্রেন ও আসন সংখ্যা গোপাল অধিকারী মুক্তমত