Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাবে কারা?

মো. শফিকুল ইসলাম নিয়ামত
১ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:২৮

একাদশ জাতীয় সংসদে ৬১ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। রাজনীতিবিদ রয়েছেন মাত্র ৫ ভাগ। বাকি ৩৪ শতাংশের মধ্যে আইনজীবী ১৩ ভাগ ও অন্যান্য পেশার রয়েছেন ২১ ভাগ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ প্রকাশিত ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছিল।

টিআইবি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রথম সংসদে মাত্র ১৮ শতাংশ সদস্যের পেশা ছিল ব্যবসা। ক্রমান্বয়ে এ হার বৃদ্ধি পেয়ে ৬১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকার নির্বাচনে ডেমোক্রেসি যেমন ডলারোক্রেসি, বাংলাদেশের ইলেকশনগুলোও তেমন ইনকাম জোন।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে একজন মেম্বার লাখ লাখ টাকা খরচ করে নির্বাচন করে। চেয়ারম্যানের খরচের হিসাব নাকি কোটির ঘরে। তাদের এত টাকার উৎস কোথায়? আমার জানামতে ইলেকশনের জন্য কোন বাজেট বরাদ্দ থাকেনা। অথবা, ইলেকশন করার জন্য দলীয়ভাবে কোন আর্থিক সহায়তাও প্রদান করা হয়না। একজন প্রার্থী কোন জায়গা থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়া তো দূরের কথা, তারা মনোনয়ন বাণিজ্যে তাদের মোটা অঙ্কের টাকা খুইয়ে আসে।

একটা নোংরা প্রবণতা চালু হয়ে গেছ সমাজে। প্রার্থীরা এখন টাকা দিয়ে ভোট ক্রয় করে। ভোটাররাও সামান্য কয়টি টাকার জন্য ভোট বিক্রি করে। এখন প্রার্থীর সততা, দক্ষতা এবং যোগ্যতা সব টাকার উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, যে প্রার্থীর টাকা আছে মোটামুটি তাকেই নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধি হতে যাচ্ছে বলে ধরে নেয়া হয়। নির্বাচনের উৎসবমুখর সেই পরিবেশ আর নেই।

আর যেই পরিমাণ টাকা খরচ করে চেয়ারম্যান-মেম্বার হয়, ভোটে জেতার পর তারা সেই পরিমাণ টাকা উসুল করতেই ব্যাস্ত থাকে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চাইতে জাতীয় নির্বাচনের অবস্থা আরো করুণ। সেখানে মনোনয়ন বাণিজ্য থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচারণাসহ একেবারে ভোটের ফলাফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত টাকার ছড়াছড়ি। অঘোষিতভাবেই নির্বাচন আর টাকা সমর্থক শব্দে পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়ার বড় একটা কারণ হল—নমিনেশন নিতে যে পরিমাণে টাকার প্রয়োজন হয় সাধারণ কোন নাগরিকের পক্ষে নমিনেশন ক্রয় করা সম্ভব নয়। ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের টাকা দিয়ে নমিনেশন ক্রয় করেই ক্ষান্ত থাকেনা। তারা তাদের অর্থ-সম্পদের বদৌলতে নির্বাচনী প্রচারণায় মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে।

এমনকি অনেক সাধারণ স্বতন্ত্র প্রার্থীকে টাকা দিয়ে নির্বাচন থেকে মাইনাস করে। ফলাফল প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত জনগণের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেন রাখে। ফলাফল হয়ে গেলে বা পার্লামেন্ট মেম্বার হওয়ার পরে সাধারণ জনগণের সাথে আর তাদের কোন সম্পর্ক থাকেনা।

এসব ব্যবসায়ীরা সাংসদ হয় একমাত্র নিজ প্রয়োজনে। তাদের ব্যবসায়ীক কর্মকাণ্ডকে আরো বৃহৎ পরিসরে বৃদ্ধি করতে কোন প্রকার রাজনৈতিক বা সরকারি বাধার সম্মুখীন যাতে না হতে হয় এটাই তাদের অন্যতম লক্ষ্য। এছাড়াও বিদেশে ব্যবসায়ীক স্বার্থে যাওয়া-আসা এবং বিদেশি সংস্থার সাথে সহজেই যাতে ব্যবসায়ীক কাজ করতে পারে এটাও একটা কারণ।

এজন্য এসব ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদরা জনগণের সংস্পর্শে থাকেনা। জনগণও নির্বাচনী প্রচারণা বাদে এদের চেহারা দেখেনা। কথা হচ্ছে সাংবিধানিকভাবে দেশের সবারই রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এর অধিকার আছে। সাংসদ হওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু এরা সাংসদ হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে। জনসেবা এদের মূল লক্ষ্য নয়।

এই ব্যবসায়ীক গোষ্ঠী সাংসদ হওয়ার কারণে ইচ্ছামত বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে৷ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ওঠানামার ক্ষেত্রেও তাদের হাত থাকে। তারা সাধারণ জনগণের কষ্ঠ না বুঝে শুধু ব্যবসায়ীক মানসিকতার কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

শুধু তাই নয়। সংসদে অধিবেশন চলাকালেও তারা অধিকাংশ সময় উপস্থিত হয়না। একজন সাংসদ হিসেবে, আইন প্রণেতা হিসেবে বিভিন্ন বিলের উপর আলোচনা বা মতামত প্রদানের প্রয়োজনও মনে করেনা। যে আসন থেকে তারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় সে আসনের সাধারণ জনগণের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে সংসদে কখনো আলোচনা করেনা। শুধু বায়ু পরিবর্তন করতে মন চাইলে কালেভদ্রে কিছু সংসদ সদস্য তাদের আসনে বেড়াতে যায়।

ব্যবসায়ীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মনোনয়ন ক্রয় করতে যত টাকা খরচ হইছে সেটা উসুল করতে ব্যস্ত হয়ে পরে৷ এমনকি নির্বাচনী প্রচারণায় তারা যে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে সেটার কয়েকগুণ তুলতে মরিয়া হয়। সংগত কারণেই ওইসব ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদরা কখনো জনকল্যাণে মনযোগী হতে পারেনা।

তবে সবাই যে একরকম হয় এমনটিও নয়। অনেকেই ব্যবসাও করেন একই সাথে ত্যাগী রাজনীতিবিদ। ব্যবসা সামলিয়ে জনগণের সাথে মিশে গিয়ে তাদের দু:খ-দুর্দশা শুনে সেটা লাঘব করার চেষ্টা করেন এমন ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদও আছেন। তবে এই সংখ্যাটা খুবই কম।

আশাকরি আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল একেবারে ত্যাগী এবং পরিক্ষিত রাজনীতিবিদকে মনোনয়ন দেবে। কোন রাজনৈতিক দল মনোনয়নকে বাণিজ্য হিসেবে পরিচিত না করিয়ে জনগণের সেবা যারা নিশ্চিত করবে তাদেরকেই মনোনয়ন দেবে।

রাজনীতিতে সবার আসার অধিকার থাকলেও অতীতের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে যারা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে সংসদ নির্বাচন করে সাংসদ হওয়ার পরে জনগণকে ভুলে যায়, তাদের মনোনয়ন যাতে না দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে সম্পূর্ণ সজাগ থাকবে এটাই কামনা করি।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাবে কারা? মুক্তমত মো. শফিকুল ইসলাম নিয়ামত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর