Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিশুশ্রম বন্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন

ঝুমা আক্তার
২ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৪৮

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কচি কচি নিষ্পাপ প্রাণ দিয়েই রচিত হবে সুন্দর ভবিষ্যৎ। কিন্তু বর্তমান সময়ে শিশুশ্রম সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রমআইন ২০০৬ মতে, ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাজে নিয়োজিত করা হলে তা শিশু শ্রম বলে গন্য হবে।

সময়ের তালে তালে সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন হলেও এখন সম্ভব হয়নি শিশু শ্রম বন্ধ করা। যে বয়সে বইয়ের বোঝ কাঁধে নিয়ে পাঠশালায় ছুটবে সে বয়সে দায়িত্বের বোঝা কাঁধে নিয়ে পথে-ঘাটে, ইটের ভাটায়, কল-কারখানায়, রুটির দোকানে, হোটেল-রেস্তোরাঁয়, যানবাহন চলাচলে ছোট ছোট শিশুরা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ছুটে চলে নিরন্তন।

বিজ্ঞাপন

কোথায় শেষ হবে এই দায়িত্বের বোঝা? তাদের নেই কোনো সামাজিক মর্যাদা। সমাজে অনেক সময় তারা পরিচিত হয় টোকাই, ছিন্নমূল কিংবা পথশিশু নামে। নেই তাদের নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য।

জাতীয় শিশু শ্রম জরিপ ২০২২ অনুযায়ী দেশে ৫-১৭ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ৩৯,৯৬৪০০৫ বা ৩.৯৬ মিলিয়ন। তাদের মধ্যে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা ৩৫৩৬৯২৭জন। শিশু শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১,৭৭৬,০৯৭জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১,০৬৮,২১২। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে,দেশের শিশুশ্রমের মধ্যে ৪১শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। ফলে দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে প্রতিবছর অসংখ্য শিশু পঙ্গুত্ববরণ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম, পাচার, সন্ত্রাস, নির্যাতন প্রভৃতির কারণে প্রতিবছর প্রায় ৪৪হাজার শিশুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর আরেকটি রিপোর্টে দেখা গেছে যে, ১ দশকে শিশুশ্রম ৮০ হাজার।

প্রত্যেকটি অঙ্গ যেমন দেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তেমন দেশের প্রত্যেক নাগরিকই জাতির অংশ। তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব।

বিজ্ঞাপন

শিশু শ্রম বন্ধে সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নীতিমালা গ্রহণ করেছে। যেমন সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে শিশুদের বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষা; ১৮ অনুচ্ছেদে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ;২৮ অনুচ্ছেদে কল্যাণও উন্নয়নে বিশেষ আইন প্রণয়ন করা এবং ৩৪ অনুচ্ছেদে জোরপূর্বক শিশু শ্রম নিয়োগ নিষিদ্ধ করার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শিশু শ্রম বন্ধের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রয়েছে অসংখ্য নীতিমালা। তারপরপও কি আমরা শিশু শ্রম বন্ধ করতে পেরেছি? সরকারি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এত এত উদ্যোগ নেওয়ার পরও কেন কমছে না শিশুশ্রম। সে প্রশ্নের উত্তর আজ ও কি জানা সম্ভব? তবে শিশু শ্রমের পেছনে একটি নয় বরং হাজারটি কারণ দায়ী। যেমন শিশুশ্রমের অন্যতম প্রধান কারণ বাব-মায়ের অর্থনৈতিক দুরবস্থা, দাম্পত্য কলহ, অধিক জনসংখ্যা, কাচা পয়সার প্রতি অধিক ঝোঁক। এছাড়াও আরেক টি কারণ শিশু শ্রমকে অতি মাত্রায় প্রভাবিত করে তাহলো পিতামাতার স্বল্প শিক্ষা ওঅসচেতনতার কারণে তারা শিক্ষাকে একটি অলাভজনক কর্মকান্ড বলে মনে করে। ফলে সন্তানদের ১০/১৫ বছর ধরে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়ার ধৈর্য্য থাকে না। ফলে বৃদ্ধি পায় শিশু শ্রম।

অল্প বয়সে তাদের হাতে টাকা আসার কারণে পারিবারিক, সামাজিক যথাযথ অভিভাবক না থাকার কারণে শিশু বয়স থেকেই মাদকাসক্ত সহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে জরিয়ে পড়ে। এছাড়া শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ফলে তার জীবন নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা করতে পারে না। এতে তাদের বাল্যবিবাহের দিক ঝুঁক বেশি থাকে এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তোয়াক্কা না করে অধিক সন্তান জন্ম দিতেও দ্বিধা বোধ করে না। ফলে আবার সৃষ্টি হয় অধিক জনসংখ্যা সমস্যা, পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা, দরিদ্র তা ইত্যাদি। অর্থ্যাৎএকটি সমস্যা হসজারটি সমস্যা সৃষ্টি করছে।এছাড়া মানবসম্পদ তৈরিতে অন্যতম বাধা সৃষ্টি করে।

তাই যেকোনো মূল্যে শিশু শ্রম বন্ধ করতে হবে। শিশু শ্রম এমন একটি সমস্যা যা নিয়ম করে সমাধান সম্ভব নয়, প্রয়োজন সুষ্ঠ পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা। তাই রাষ্ট্র, সমাজ ও আমাদের সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

ঝুমা আক্তার মুক্তমত শিশুশ্রম বন্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর