যারা অন্যের খবর বিলি করে, তাদের খবর ক’জনই বা রাখে?
২ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৫৩
ভোরের আলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাদের দিন শুরু হয়, সাইকেলের প্যাডেল মাড়িয়ে শত পথ পাড়ি দিয়ে দেশ-বিদেশের খবর নিয়ে অন্যের দ্বারপ্রান্তে হাজির হয়, দু-পয়সা আয় করে অন্নমুখে দিতে পারলেই যারা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন উপভোগ করে বাঁচে। কথা বলছি তাদেরই কথা, পত্রিকার হকারদের কথা। যাদের কিনা কাকডাকা ভোর থেকে পত্রিকা নিয়ে ছুটতে হয় গ্রাহকের দুয়ারে। ঝড়-বৃষ্টি, গরম কিংবা শীত উপেক্ষা না করে নিজেদের দায়িত্বকে বড় করে দেখে মানুষের সংবাদ পৌঁছে দিলেও তাদের খবর ক’জনই বা রাখে? অথচ দেশ-বিদেশের খবর ঘরে ঘরে পৌঁছে দিলেও তারা রয়ে যান খবরের অন্তরালে।
কোনোমতে জীবন চলে তাদের। সংসারের চাকাটা সচল রাখতেই ছুটে যায় দূর-দূরান্তে। কত শত দুর্দিনের সাক্ষী হতে হয় তাদের এ খবর কেউ রাখে না। অসুস্থ শরীর নিয়ে পড়ে থাকলেও তাদের খোঁজখবর নেওয়ার কেউ থাকেনা, বরং খবরের কাগজটা ঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারলেই খেতে হয় বকা আর ধমক।
এরাও মানুষ, রক্তমাংসে গড়া এদের দেহ। অথচ পা ক্ষয় করে, গলা ফাটিয়ে বেড়ান শুধু একটা পত্রিকা বিক্রির জন্য। যেখানে ভোরের আলো ফোঁটার পর থেকে সারা দিনের পরিশ্রমের ফল আসে একজন হকারের জন্য সর্বসাকুল্যে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। কিন্তু এই আয়ের কোনো নিরাপত্তা নেই। এমনকি সামান্য এই আয়ের নিমিত্তে বিপন্ন হয় পুরো জীবনটাই। এ জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে দিতে হয় নানা দৌড়ঝাপ। যাতে দূর্ঘটনায় পড়া স্বাভাবিক। অথচ পাঠকের কাছে নিজের জীবন বাজি রেখে খবরের কাগজ পৌঁছায় ঠিকই কিন্তু দূর্ঘটনায় তাদের পাশে থাকার কেউ নাই।
এদের পরিবার- পরিজন আছে। সন্তান লালন-পালন করে তাদের শিক্ষা, চিকিৎসাসহ এই আয় দিয়ে টিকে থাকাটা যেখানে মুশকিল সেখানে এই কাজ করে ধনী হওয়াটা তাদের কাছে যেন অভাবনীয় কল্পনা। এরা শুধু বাঁচতে চায়, চায় দুমুঠো অন্ন। অথচ দুই টাকার পত্রিকা ১২ টাকা হয়ে সবার লাভ হলেও হকারদের আয় বাড়েনি। বরং দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির ফলে আয় হিসেবে ব্যয়ের পাল্লায় সার্বিকভাবে তারা পিছিয়ে পড়ছেন। এছাড়া কোনো কোনো পত্রিকার ক্ষেত্রে অবিক্রীত পত্রিকা ফেরত দেয়ার সুযোগ না থাকায় এরা বেশ দুঃচিন্তায় থাকেন।
কিন্তু ক’জনই বা এদের খবর রাখে? তাদের নিয়ে প্রকৃতপক্ষে কারো চিন্তা কিংবা মাথাব্যথা আছে কিনা যেন প্রশ্ন থেকেই যায়। তাদের কথা ভাবুন, যারা দেশ-বিদেশ কিংবা সব দিকের খবরে আমাদের ভাবাতে শেখায়। আমাদের উচিত পত্রিকার হকারদের ন্যায্য অধিকার পাওয়ার ব্যবস্থা নেয়া। যাদের অঢেল ও সীমাহীন পরিশ্রমের ফলে আমরা প্রতিদিন সংবাদপত্র পাই এবং পড়ি। এ ক্ষেত্রে জাতীয় প্রেসক্লাব ও তথ্য মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আর সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন দেশের লেখক সাহিত্যিকরা। যাদের কলমের খোঁচায় ওঠে আসবে হকারদের দূর্ভোগের কথা। হয়তো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসায় থাকার স্বপ্ন তারা দেখে না তবে একটু ভালো করে বাঁচতে চায়, বাঁচতে চায় তিন বেলা ডাল খেয়ে।
লেখক: শিক্ষার্থী; বাকলিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম
সারাবাংলা/এসবিডিই
তৌহিদ-উল বারী মুক্তমত যারা অন্যের খবর বিলি করে- তাদের খবর ক’জনই বা রাখে?