Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশের রাজনীতি ও শিক্ষাখাত

আজহার মাহমুদ
৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৪২

নির্বাচনের অতি সন্নিকটে দাড়িয়ে আমরা। আগামী বছরের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের সাথে আমাদের দেশের শিক্ষাখাতের একটা বিরাট সম্পর্ক রয়েছে। আরও সহজ করে বলতে গেলে গত অক্টোবর মাস থেকেই তার কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। যা আমরা দেখতে পাচ্ছি। নির্বাচনের আগে যে বিষয়টা সবচাইতে বেশি বাংলাদেশে হয় সেটা হচ্ছে হরতাল, আগুন, অবরোধ আরও ইত্যাদি ইত্যাদি। এছাড়াও বাংলাদেশের নির্বাচন মানেই আমরা সকলে জানি মিছিল, মিটিং, সমাবেশ। এসব থাকবেই।

বিজ্ঞাপন

আর এসবের মাধ্যমেই এদেশের শিক্ষাখাতকে গলাটিপে হত্যা করা হয়। আরও সহহ করে বলতে গেলে প্রতিটি নির্বাচনের আগেই আমাদের শিক্ষাখাতের উপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। সেটা হয়তো অনেকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না কিংবা ভাবছেন না। অবরোধ, হরতাল আর সমাবেশের নামে মরামারি এসবের মাঝে শিক্ষাকর্যক্রম কতটুকু চলতে পারে সেটা আমরা সকলেই জানি। এসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা চলে। যা এসব অবরোধ, হরতালের কারণে বন্ধ রাখতে হয়। এভাবেই ক্ষতি হয় শিক্ষাখাতের।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর, নির্বাচনের আগে যেসব মিছিল, সমাবেশ হয় সেখানেও চলে লড়াই, ভাঙচুর আর আধিপত্যের খেলা। এসময় তরুণ শিক্ষার্থীরাও থাকে না শ্রেণীকক্ষে। তারা থাকে মিছিল, মিটিং এবং সমাবেশে। রাজনীতির মাঠে আজ ব্যবহার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষ, হামলা, মারামারি সবকিছুই যাচ্ছে তাদের উপর দিয়ে। আর এভাবেই কিছু কিছু শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষা নামক বিষয়টির সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কেউ কেউ এসব মিছিল, মিটিং, সমাবেশে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণও করে। এটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুব একটা নতুন নয়। কিন্তু কেন এমনটা হবে? কেন এই শিক্ষার্থীরা রাজপথে থাকবে? তাদের তো ক্লাসে থাকার কথা।

যাদের মুখে থাকা উচিত কাজী নজরুল আর কবিগুরুর কবিতা, তাদের মুখ থেকে আজ শুনতে পাওয়া যায়- আমার ভাই তোমার ভাই, অমুক ভাই অমুক ভাই। এটা আমাদের রাজনীতির অবস্থা। শিক্ষার্থীদের পুজিঁ করেই রাজনীতির ময়দানে বড় বড় শোডাউন দিতে হয় আজকালকার নেতাদের। আর যে সকল নেতারা ছাত্রদের নিয়ে তাদের জনসভা, মিছিল, মিটিং, সমাবেশ সফল করছে তারাই-বা এ দেশে কী উন্নয়ন করবে। উন্নয়নের হাতিয়ার তো শিক্ষা। শিক্ষাকে ধ্বংস করে আর শিক্ষার্থীদের নষ্ট করে কখনো দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। কারণ একটা দেশের গোড়া ওই শিক্ষার্থীরাই।

আজকাল পাশ করা খুব সহজ। যেখানে জিপিএ ৫ পেয়েও সেটা ইংরেজীতে বলতে পারে না সেখানে পাশ করা ছেলেরা আর কতটুকু শিখবে! সারাবছর নেতার পেছনে ঘুরে বেড়ানো ছেলেটাও যখন পাশ করে, শ্রেণীকক্ষে একদিনও উপস্থিত না হয়েও পরীক্ষার সুযোগ পায়, তখন বুঝতে হবে আমাদের শিক্ষার অবস্থাটা কেমন। এরা মিটিং, মিছিল, সমাবেশে থাকে আবার জিপিএ ৫ পেয়ে যায়। এরাই পরীক্ষার আগে প্রশ্ন খুঁজে। শ্রেণীতে না থাকলেতো প্রশ্ন প্রয়োজন হবেই। সারাবছর নেতার পেছনে ঘুরে পরীক্ষার সময় এসে প্রশ্ন খুঁজে। এটাই এখনকার বেশীরভাগ শিক্ষার্থীদের চিত্র।

এখন প্রতিটি কলেজ, স্কুলে রাজনীতি ঢুকে গেছে। একেকটা প্রতিষ্ঠানে একেকটা ভাই। এসব ভাইদের লিড নিয়ে চলে একেকটা কলেজ। তাদের কথা শিক্ষকদের চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ। তারা যখন যেখানে যে সমাবেশে যেতে বলবে সেখানেই হাজির হয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। আর শ্রেণীকক্ষ! সে তো ফাঁকা। বড়জোর গুটিকয়েক শিক্ষার্থী থাকে শ্রেণীতে। যেকোনো রাজনৈতিক ইস্যুতেই এমনটা হয়ে থাকে। নির্বাচনকালীন সময়টাতে সবচেয়ে বেশী। এখন কলেজ ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক ময়দানে। কলেজের ক্যাম্পাসে চলে রাজনৈতিক স্লোগান আর শ্রেণীতে চলে পাঠদান। পাঠদানে বিঘ্ন ঘটলেও প্রতিবাদ করা যায় না অনেক ক্ষেত্রে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক আলাপ করতে করতে একে অপররে সাথে ঝগড়া, মারামারি এমনকি হুমকিও দেওয়া নেওয়া করে। কখনো কখনো এটা হয়ে উঠে মৃত্যুর একটি বার্তা। আর এরকম মৃত্যুর ঘটনাও নির্দিষ্ট করে আমার উল্লেখ করতে হবে বলে মনে হয় না। তাই হয়তো কোনো এক মনিষির উক্তি ছিলো- এদেশের শিক্ষাকে রাজনীতি মুক্ত করা না গেলেও রাজনীতিকে শিক্ষা মুক্ত করা গিয়েছে।

এবার আসা যাক পারিবারিক দিক থেকে বাধা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে। নির্বাচনকালীন সময়ে দেশে সহিংসতা এবং হামলা, বিক্ষোভসহ নানান ঘটনা ঘটে। যা বিগত দিন থেকে সকলেই দেখে আসছেন। তাই পরিবারে কর্তারাও অনেক সময় এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। পরীক্ষা ছাড়া এই সময়টাতে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, এমনকি স্কুলেও যেতে দেন না বাবা-মারা । কারণ তারা চায় না সন্তানদের ঝুঁকির মধ্যে স্কুল-কলেজে পাঠাতে। রাস্তায় যখন গাড়িতে আগুন আর পুলিশের লাঠিচার্জ দেখে তখন স্বাভাবিকভাবে সকলে আতংকিত আর অস্বস্তিতে থাকে। আর সেই রকম একটি নমুনা ২৮ অক্টোবর থেকে দেশের মানুষ দেখেছে। এতোদিন যারা ভয়ে ছিলো না তারাও এখন নতুনভাবে ভয়ে রয়েছে। কারণ বলা তো যায় না, কখন, কীভাবে, কোথায়, কী হযে যায়। আর এই ভয়টাও বড় একটি বাধা আমাদের শিক্ষাখাতে। যার কারণে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। আর এই ক্ষতি পরোক্ষভাবে দেশেরই হয়। একটা দেশে নির্বাচান হলে দেশের মানুষের হৃদয়ে থাকে খুশির আমেজ। আর আমাদের দেশে হয় তার উল্টা। রাস্তায় আগুন, পুলিশের লাঠিচার্জ, গাড়ি ভাংচুর দিয়ে আমাদের নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়। কবে এই যন্ত্রণাময় দিনগুলো থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পাবে সেটাই মানুষের চিন্তার বিষয়। বাংলার মানুষ কবে ভোটের আর নির্বাচনের আমেজ নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারবে সেটাই বাংলার নেতাদের কাছে প্রশ্ন রাইলো। আর এই সমস্যাগুলোই বাঁধা হয়ে দাড়ায় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে আগে রক্ষা করুণ। মনে রাখবেন একদিন এই শিক্ষার্থীরাই আপনাদের অপরাধীর কাটগড়ায় দাড় করাবে।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

আজহার মাহমুদ বাংলাদেশের রাজনীতি ও শিক্ষাখাত মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর