Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিম্ন আয়ের মানুষ কীভাবে জীবনধারন করবে?

ইমরান হোসাইন
৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৩১

বর্তমান সময়ে আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? আমি বলবো, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের দাম বৃদ্ধি। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র , বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা এই পাঁচটি মৌলিক অধিকার । যার মধ্যে খাদ্য অন্যতম। জীবনধারণের জন্য খাদ্য অত্যাবশ্যক আবার সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ পুষ্টিমানসম্পন্ন ও সুষম খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। একজন মানুষ যখন তার প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না। তখন সে কোন কাজই ঠিকঠাক করতে পারে না। নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। শত চেষ্টা করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এখন একটি আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা শুনলেও মানুষ ততটা ভয় পায় না যতটা এখন দ্রব্যমূল্য নিয়ে পাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

গত কয়েকমাস ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। শ্রমজীবীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। চাল, ডাল, চিনি ও তেলসহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম এখন আকাশচুম্বী। সাধ্যের বাইরে মুরগি, গরু ও খাসির গোশত। পিয়াজ প্রতি কেজি ১৩০টাকা, আলু ৬০-৬৫ টাকা, ডিম প্রতি হালি ৫০-৫৫ টাকা। শীতকালীন সবজির মধ্যে প্রতি কেজি শিম ১২০-১৩০ টাকা, পাকা টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি। গোস্তের ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২০০ টাকা, দেশি মুরগি কিনতে কেজিতে খরচ হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। এছাড়া গরুর মাংস ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আমরা যদি একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের উদাহরন টানি যার নূন্যতম মজুরি ১০০০০ টাকা, তাহলে প্রশ্ন জাগে সে কিভাবে এই দ্রব্য মূল্যের সাথে মানিয়ে জীবনধারন করছে? এই ১০০০০ টাকা মজুরির মধ্যে ২০০০ টাকা বা এর বেশি ব্যয় হয় ঘর ভাড়া বাবদ। বাকি ৭০০০ টাকা দিয়ে সে নিজে খায়, বাচ্চাকে খাওয়ায়, বাবা মা থাকলে তাদের দিতে হয় আর অসুখ বিসুখ তো রয়েছেই দরিদ্র মানুষের নিত্য সঙ্গী! এই অল্প মজুরি দিয়ে ঠিকমত ভাত-ডালই যাদের কপালে জুটে না তাদের আবার আমরা পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কথা বলি! পুষ্টিকর খাবার সেটা তো রীতিমত সোনার হরিণ এই দরিদ্র মানুষগুলোর কাছে। এই পুষ্টিহীনতা নিয়ে আমাদের দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী আগামীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এদের কর্মক্ষমতা অথবা কর্মদক্ষতা স্বাভাবিক ভাবেই কম থাকে।

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ , উন্নয়নের জোয়ার ভয়ছে চারদিকে। এই উন্নয়ন দিয়ে কী হবে..! যদি মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো খেতে না-পারে মানুষ । আমি বলছি না, উন্নয়নের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যে দেশের মানুষ মৌলিক অধিকার পূরণ করতে হিমশিম খায় সেখানে উন্নয়নের তজবি জপা নিরর্থক। আমি মনে করি সরকারের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ দ্রব্য মূল্যের দাম কীভাবে হ্রাস করা যায় সেদিকে। দেশের সরকারের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। খাদ্য নিরাপত্তা হলো দেশের সব মানুষের জন্য নিরাপদ, পুষ্টিকর, পছন্দমাফিক ও প্রয়োজনীয় খাবার যথেষ্ট পরিমাণে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার নিশ্চয়তা।

বর্তমান অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে বিরাজমান থাকলে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন আরও বেশি নাভিশ্বাস হয়ে উঠবে, জীবনটা যাপন তখন অসম্ভব প্রায় হবে। অভিযোগ রয়েছে সিন্ডিকেট বাজারে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এর অবসান হওয়া জরুরি। বাজারের অস্থিরতা দূর করতে হলে অবশ্যই অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দমন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিত্যপণ্যের বাজারে কেউ যেন কারসাজি না করে সেদিকে নজর দিতে হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয়কে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের কষ্ট আরো বেড়ে যায়। আমাদের প্রত্যাশা নীতি নির্ধারকরা জনগণের ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। যারা অনিয়ম করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। আমাদের প্রত্যাশা অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

ইমরান হোসাইন নিম্ন আয়ের মানুষ কীভাবে জীবনধারন করবে? মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর