পড়াশোনা আমাদের জন্য যেন এক বিলাসিতা!
১১ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:০০
বলা হয়ে থাকে, ‘অভাবেই স্বভাব নষ্ট’। অভাব যখন মানুষের দরজায় এসে কড়া নাড়ে তখন মানুষের স্বভাব কিংবা স্বপ্ন মুহুর্তেই মিশে যায় মাটির সঙ্গে। ধূলিসাৎ হয়ে যায় প্রতিটি আশা আর আকাঙ্খা। তিল তিল করে গড়া তোলা স্বপ্নরাও বিলীন হয়ে যায় নিমিষেই। হার মেনে নেয় পরিস্থিতির কাছে।
বাস্তবতা সত্যিই কঠিন। এ অভাব মানুষকে নানা কর্মকান্ড কিংবা যেকোনো কাজ করতে বাধ্য করে। বাধ্য করে নিজের সকল স্বপ্ন কিংবা আশাকে মুহূর্তের মধ্যে কবর দিতে। অভাবের কারণেই ঝরে যায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও। যাদের যথেষ্ট মেধা থাকা সত্বেও এ অভাব তার স্বপ্ন পূরণে হয়ে দাঁড়াও প্রতিবন্ধক হয়ে। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা সবার প্রয়োজন হলেও দিনশেষে যখন তিনবেলা ভাতের প্লেটের সাথে সাক্ষাৎ করতে হয় তখন এ শূন্য খাবারের প্লেট কি আমাকে পড়াশোনা করতে উৎসাহিত করে? শূন্য খাবারের প্লেটটি তখন আমাকে যেন কানে কানে বলে যায়, যেখানে আমি শূন্য সেখানে তোমার ওই পড়াশোনা বিলাসিতা বৈকি আর কিছুই নয়।
পিতৃহীন ছেলেটার পড়াশোনা করতে মন চাইলেও চায়ের দোকানে মাসিক বেতনের চাকরিটা তাকে বড্ড ধমক দেয় তার দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে, কৃষিকাজ করে সংসার চালানো বাবাটাও নিয়মিত পীড়া দেয় ছেলেটাকে তার কাজে সহযোগিতা করতে, কুলি কাজ করে মা-বোনের মুখে ভাত তুলে দিতে না পারলে যে তারা উপোষ থাকবে সেটা কি ছেলেটিকে ভাবায় না? মিস্ত্রি কাজ করে সংসারের হাল ধরা পরিবারের বড় ছেলেটিকে পড়াশোনা করতে কি পরিস্থিতি এক মুহুর্তের জন্য ভাবায়?
জানি সব প্রশ্ন কিংবা এসব কথার জবাব আমি কিংবা আমরা দিতে পারবো না। কথাগুলোর জবাব দেওয়াটা সহজ হলেও বস্তুতপক্ষে এসব কিছু পরিচালনা করে পরিস্থিতি আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কতটুকু উৎসাহ প্রদান করে কেবল তা পরিস্থিতির স্বীকার হলেই আমরা বুঝবো।
এ বয়সে, পড়াশোনা করার বয়সে, ছেলেটার সাইকোলজি তা কখনোই বুঝবে না। শুধুই বুঝবে তার পড়াশোনা করার চেয়ে পরিবারের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়া শ্রেয় এবং মুখ্য। কেননা পরিস্থিতি তাকে প্রতিনিয়তই শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে পড়াশোনা করার পাশাপাশি যে তাকে খাবারের যোগানও দিতে হবে পরিবারের জন্য। যোগান দিতে হবে অন্যান্য ভরণপোষণেরও।
ক’দিন মুখে তাদের খাবার তুলে দিতে ব্যর্থ হলে শুনতে হয়; তুই কি আরো পড়তে চাস, বড় হতে চাস, স্বপ্ন দেখিস বড় হয়ে পন্ডিত হওয়ার৷ কি হবে এসব স্বপ্ন দেখে, যা কোথায় গিয়ে কাজ কর। মুখে আগুন লাগুক তুর এমন পান্ডিত্যে! এমনই হাজার খানেক কথা আর অপমান। তখন না পারি নিজের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে না পারি তাদের ছেড়ে একা কোথাও চলে যেতে।
কি এক নিদারুণ কষ্টের আর অসম্ভব রকমের চিন্তা মনে করিয়ে দেয় আমাদের এই পরিস্থিতিগুলো। যেখানে ধনী বাবার ছেলেটার মতো কার-গাড়িতে চেপে স্কুলের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে যাওয়াটা আমাদের মতো পরিবারের কপালে জুটে না। জুটে না, হাজার খানেক টাকার বিনিময়ে মাসিক টিউটর দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার মতো অসম্ভব রকমের ভাগ্য। আর এভাবেই ভাবতে থাকি পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, পরিবার চালানো, কতটুকুনই না সম্ভব হয় আমাদের মতো পরিবারের সন্তানদের, শিক্ষার্থীদের। তখন বড্ড কান্নাচাপা হৃদয় নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধুই বলতে ইচ্ছে করে এ পড়াশোনা করাটা আমাদের জন্য বিলাসিতা বৈকি আর কিছুই নয়।
লেখক: শিক্ষার্থী; বাকলিয়া সরকারী কলেজ, চট্টগ্রাম
সারাবাংলা/এসবিডিই