কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ
১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১১:১৫
আজ ১৩ নভেম্বর, বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র, শব্দের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ-এর ৭৫তম জন্মদিন। ১৯৪৮ সালে পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন, ছোটবেলা থেকেই তার লেখার প্রতি ঝোঁক ছিল। তার কলম থেমে গেলেও কর্ম অবিচল। রসবোধের সঙ্গে লৌকিকতা আর অলৌকিকতার সমগ্র সুন্দরের মিশেলে বাংলা কথাসাহিত্যকে যিনি সমৃদ্ধ করেছেন, সেই কিংবদন্তির জন্মদিন আজ।
হুমায়ূন আহমেদের ডাক নাম ছিল কাজল। বাবা প্রথমে নাম রেখেছিলেন শামসুর রহমান পরে তিনি নাম পরিবর্তন করে ছেলের নাম রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। একাধারে লেখক, নাট্যকার, চলচ্চিত্রকার , কবি ও গীতিকার হুমায়ূন শিল্পসৃষ্টি ও মনোরঞ্জনের মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন সহজেই। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান হুমায়ূন আহমেদ । বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল ও নামকরা কার্টুনিস্ট এবং রম্য লেখক আহসান হাবীব তার ছোট ভাই।
হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস, নাটক গুলি প্রায়শই মধ্যবিত্ত ব্যক্তিদের জীবনকে ঘিরে আবর্তিত হয়, তাদের দৈনন্দিন জীবনের সংগ্রাম, আশা, আকাঙ্খা, ভালোবাসা এবং আবেগকে তুলে ধরেছেন দারুণ ভাবে। তার গল্পগুলি সাধারণ মানুষকে স্পর্শ করে এবং তার চরিত্রগুলি ছিলো অসাধারণ। চরিত্রগুলো দারুণভাবে বিকশিত হয়েছিল, যার ফলে তার কাজ ব্যাপক দর্শকদের কাছে অনুরণিত হয়েছিল। হিমু, মিসির আলী, বাকের ভাই, ছোট মীর্জা, মুনা, মতি, রূপা, আনিস, শুভ্র, ফরিদ মামা, আজগর, এলাচি, দোতারা চাচা ও কুসুম চরিত্রগুলো নিয়ে এখনও কথা হয়, আড্ডায় ঝড় উঠে।
তার সাহিত্যিক কৃতিত্বের পাশাপাশি, হুমায়ূন আহমেদ টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি অনেক জনপ্রিয় টেলিভিশন নাটক এবং চলচ্চিত্র রচনা ও পরিচালনা করেছেন, যার মধ্যে অনেকগুলিই বাংলাদেশের বিনোদন ইতিহাসে আইকনিক হয়ে আছে। তার বিখ্যাত টিভি সিরিজ “নক্ষত্রের রাত” “আজ রবিবার” “এই সব দিন রাত্রি,” “কোথাও কেউ নেই,” এবং “অয়োময়” এখনও দর্শক মনে লালিত।
হুমায়ূন আহমেদের ব্যাপক জনপ্রিয়তার একটি কারণ ছিল তার লেখায় সামাজিক সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা। সামাজিক সংস্কার ও সাম্যের পক্ষে ওকালতি করার সময় তিনি নির্ভয়ে ধর্ম, রাজনীতি এবং লিঙ্গ ভূমিকার মতো নিষিদ্ধ বিষয়গুলি মোকাবেলা করেছিলেন। তার কাজগুলি বাংলাদেশী সমাজের জটিল বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে, সমালোচকদের প্রশংসা এবং বিশাল শ্রোতা উভয়কেই আকর্ষণ করে। হুমায়ূন আহমেদের লেখার শৈলী প্রায়ই হাস্যরস, ব্যঙ্গ এবং মানব প্রকৃতির সূক্ষ্ম উপলব্ধি ফুটে তুলেছিলেন। তার নাটক, উপন্যাসে এমন কিছু চরিত্র তৈরি থাকত যা চিন্তা-উদ্দীপক এবং বিনোদনমূলক উভয়ই ছিল, দর্শক কিংবা পাঠকরা তার চরিত্র এবং পরিস্থিতিতে নিজেকে দেখতে পেত, নিজের সাথে রিলেটেড করতে পারত ।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কারসহ (১৯৮৮) অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক। জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ হুমায়ূন আহমদকে নিয়ে নির্মাণ করে ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’।
লেখক: শিক্ষার্থী; কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই