Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ কী আসলেই বিশ্বকাপ!

খালিদ ফেরদৌস
২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:২২

জৌলুসপূর্ণ ও শ্বাসরুদ্ধকর ফুটবল বিশ্বকাপের পর তুলনামূলক বেশ কম উত্তেজনাপূর্ণ এক ক্রিকেট বিশ্বকাপের স্বাক্ষী হতে হয়েছে ক্রিকেট বিশ্বকে। ইনজুরি আক্রান্ত হয়েও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় ২০১ রানের ইনিংস, আফগানদের ক্রিকেট উত্থানের রুপকথা, ভারতবর্ষের ইতিহাসে ওলন্দাজ বলে পরিচিত ডাচদের অসাধারণ ফর্মে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেয়া এবং ভারতীয় দলের ব্যাটে-বলে অন্যগ্রহের পারদর্শীতার প্রদর্শনী বাদে- এটাকে জৌলুসহীন বিশ্বকাপ বললেও খুব বেশি অত্যুক্তি হবে না। তবে দক্ষ ম্যারাথন দৌঁড়বিদের মতো প্রথম গতি সীমিত রেখে তা আস্তে আস্তে বাড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছে। এতে প্রমাণিত হয়, তাদের মগজ-মজ্জায় ক্রিকেট। দারুণ পেশাদায়িত্বের মাধ্যমে অন্যগ্রহের ক্রিকেট খেলা ভারতকে ফাইনালে হেসেখেলে হারিয়ে দিয়েছে। যা বাংলাদেশসহ অন্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের শেখা উচিত।

বিজ্ঞাপন

এবারের ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ছিল মাত্র ১০ দলের। এই অল্প সংখ্যক দল নিয়ে একটা বিশ্বকাপকে কতটা বিশ্বকাপ বলা যায়- তা নিয়েও নানা প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা আছে। মোটামুটি স্বীকৃতি দুইশতের অধিক দেশের পৃথিবীতে মাত্র ১০টি দল নিয়ে বিশ্বকাপ! আবার এই ফরম্যাটে- একটা দল কীভাবে প্রথম পর্বেই আইপিএল-এর মতো ৯টা খেলা পায়? এইসব ফরম্যাট মূলত বাণিজ্যকে সামনে রেখে করা। ক্রিকেটকে গ্লোবাল স্পোর্ট করার স্বার্থে এটা করা কিনা- তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। আগামী ২০২৬ সালের ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ হবে ৪৮ দলের হবে। আর এবারের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ৪৮ ম্যাচের; যেখানে এক দলই ৯টা খেলা পায় কোনো রাউন্ডের বাঁধা না টপকিয়ে। তাই প্রসঙ্গক্রমে বলাই যায়, যতদিন ক্রিকেট অলিম্পিকে না যাবে, বেশি দলের অংশগ্রহণে বিশ্বকাপের আয়োজন না করা হবে, নিদিষ্ট কয়েকটি দেশের বাণিজ্য স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হবে; ততদিন ক্রিকেট গ্লোবাল স্পোর্ট হবে না। তবে ভালো সংবাদ ২০২৮ সালের আমেরিকা অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ফুটবল জনপ্রিয়তা এবং উন্মাদনায় ক্রিকেটসহ অন্য যেকোনো খেলার চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে। তবে এটাও সত্য জনসংখ্যা বিবেচনায় ক্রিকেট বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় ক্রীড়ার নাম। ক্রিকেটে মাঝে মাঝে এমন কিছু উত্তেজনা বা উন্মাদনা তৈরি হয় যা ফুটবলেও নাই। ম্যাক্সওয়েল আফগানিস্তানের সাথে ইনজুরি নিয়ে ২০১ রানের অতিমানবীয় যে অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচ জিতিয়েছে তার মাহাত্ম্য ও উন্মাদনা ফুটবলকেও হার মানায়। তাছাড়া ক্রিকেট খেলার পালাবদল আমাদের মানবজীবনের উত্থান-পতনের সাথে হুবহু মিলে যায়। এইজন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে ক্রিকেট প্রধান খেলায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ও সাকিব আল হাসানের কথা আলোচনা করতে গিয়ে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির কথা এসেই যায়। এক সময় লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে ভালো খেলত না বা দলের সাথে বোঝাপড়া ভালো ছিল না। এই কারণে আর্জেন্টিনা ফিফা বিশ্বকাপে কোয়াটার ফাইনালের দলে পরিণত হয়েছিল। প্রায় বিশ্বকাপে তারা জার্মানি বা অন্য শক্তিশালী দলের কাছে হেরে বিদায় নিত।

অবশ্য মেসি যখন বার্সেলোনার খেলোয়াড় ছিল তখন সে এখনকার চেয়ে অনেক ধারালো ও ক্ষিপ্র ছিল। কিন্তু আর্জেন্টিনা দলে তার অবস্থান ভালো ছিল না। সে একটা পর্যায়ে জাতীয় দলে একপ্রকার বোঝা হয়ে যাচ্ছিল। তখন কেউ কেউ বলত, মেসি ছাড়াই আর্জেন্টিনা দল ভালো খেলবে। কিন্তু সেই মেসি পরিবর্তন হলো, দলকে আপন করে নিল। আর্জেন্টিনা তাদের সর্বকালের অন্যতম সেরা সেরা কোচ ও খেলোয়াড়ের পরশপাথরে ২০১০, ২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের তুলনায় দুর্বল দল নিয়ে ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ জিতল।

ক্রিকেট ও বাংলাদেশ বিবেচনায় সাকিব মেসির মতোই খেলোয়াড়। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে সাকিব আল হাসান মেসির মতো প্রথম দিনকার অবস্থায় আছে। সে অধিনায়ক হিসেবে দলের সাথে কেন যেন মানাতে পারছে না। অন্য খেলোয়াড়রা তাকে আইডল মানলেও অধিনায়কের জায়গায় তাকে সেইভাবে মানতে পারছে বলেই আপাত মনে হচ্ছে। সে দলের সদস্যদের অনুপ্রেরণা দিতে চেষ্টা করছে ; কিন্তু তেমন একটা কাজ হচ্ছে না। ক্রিকেট মেধা ও বুদ্ধিতে সে বাংলাদেশে অদ্বিতীয় যা অনেক বিশ্ববিখ্যাত ধারাভাষ্যকার এবং ক্রিকেট বিশ্লেষক অপকটে স্বীকার করেছেন। কিন্তু কেন যেন তা বাংলাদেশের ক্রিকেটে কার্যকর হচ্ছে না। এর পাশাপাশি সে নিজেও তার যোগ্যতা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারছে না। এবারের ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপে দুই-একটা ম্যাচ ব্যতিরেকে তাকে ভালো খেলতে দেখা যায়নি। বলা যায়, পুরো বিশ্বকাপে সে ফর্মহীনতায় ভুগেছেন। বিশ্বকাপে যদি সাকিব-শান্তরা ফর্মে থাকত তবে তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতেও আরও দুটি ম্যাচ বাংলাদেশ অনায়াসে জিতত বলে মনে হয়। আর এটা বললে বেশি হবে না, দলে নির্বাচক, কোচ ও সাপোর্ট স্টাফ কেন্দ্রিক একটা সমস্যা দানা বেঁধেছে ; যার কারণে দলের দোতারার একটা তার কেটে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। এখন দোতারায় সুর হচ্ছে কিন্তু দর্শকদের মুগ্ধ করতে পারছে না বা ধারাবাহিকভাবে জয় ছিনিয়ে আনতে পারছে না।

আর একটা বিষয়, এখন দলে তেমন কেউ নেই যে শুধু বাংলাদেশ নয় অধিনায়ক সাকিবের জন্যও প্রাণপণে লড়ে যাবে। মাশরাফি বিন মুর্তজা যখন অধিনায়ক ছিল; তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে এই বিষয়টা বেশ ছিল। দলের অনেক ক্রিকেটার মাশরাফির জন্যই খেলত। এই কারণে সে সময় বাংলাদেশ বড়ো দল হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশ দল নিয়মিত বড়ো দলের সাথে জয়লাভ করত। হারলেও চোখে চোখ রেখে চোখ রাঙানি দিত। এর জন্য ক্রিকেটপ্রেমীরা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিয়ে বড়ো স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিল। দেশে ক্রিকেট এক আবেগ ও প্রাণের স্পন্দন হয়ে উঠেছিল। এই একটা জায়গায় দল-মত নির্বিশেষে সবাই নিরেট-নিখাঁদ আনন্দ উপভোগ করার উপলক্ষ পেত।

এবারের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩-এ বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমিদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তামিল ইকবাল নিয়ে নাটক এবং তাকে দল থেকে বাদ দেবার কারণে অনেকের আন্দাজ করতে পেরেছিল- এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জন্য খুব ভালো কিছু অপেক্ষা করছে না। তারপরও ক্রিকেটপাগল বাঙালি আশায় বুক বেঁধেছিল, ফাইনাল না হলেও অন্তত সেমিফাইনালে উঠুক প্রিয় বাংলাদেশ। কিন্তু এই স্বপ্নের ছিটেফোঁটাও পূরণ হয়নি। আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সাথে জয় ব্যতীত কোনো দলের সাথে জয় আসেনি। এমনকি বাংলাদেশ অন্য কোনো খেলায় জয়ের সম্ভাবনাও তৈরি করতে পারেনি। অধিকন্তু, ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়াতে ট্রল হতে থাকে, ”বাংলাদেশের আফগানিস্তানের সাথে জয় এ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড়ো অঘটন।” বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলার মাঝে বিরতি বেশি হলে কেউ কেউ স্ট্যাটাস দিয়েছে, “এই সুযোগে সাকিব আল হাসান ঢাকা এসে একটা শো-রুম উদ্বোধন করে যেতে পারে।” এটাতে সাকিব আল হাসানের ক্রিকেটের প্রতি দায়বদ্ধতার ঘাটতির বিষয়টা ফুটে ওঠে। সর্বশেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সাথে সাকিব খেলেনি বলে দলের সাথেও দেখা যায়নি। যা অধিনায়ক হিসেবে বিষয়টা বেশ বেমানান। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড় গ্লেন ম্যাক্সওয়েল মহাকাব্যিক ইনিংস খেলে একাই আফগানিস্তানকে হারিয়ে; পরের ম্যাচে না খেললেও দলের সাথে থেকে দলকে অনুপ্রাণিত করেছেন। যেটা আমরা সাকিবের কাছ থেকে প্রত্যাশা করতেই পারি। কিন্তু বাংলাদেশ দল তার কাছ থেকে এটা পায়নি।

আমাদের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার এবারের বিশ্বকাপে এমন একটা ঘটনা ঘটিয়েছে যা ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম। তিনি এঞ্জেলো ম্যাথিউজকে টাইমড আউট করেছেন। এটার জন্য তাকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই; কারণ ক্রিকেটের ব্যাকরণে এই আউট আছে। তবে সবকিছু ব্যাকরণ বা আইন দিয়ে বিবেচনা করলে চলে না। সে আইন প্রয়োগ করার কথা আম্পায়ারকে বলেই খ্যান্ত হলে চলত; কারণ নিদিষ্ট টাইমে বোলিং শেষ করার বাধ্যবাধকতা আছে। এটা না করতে পারলে জরিমানার শিকার হতে হয়। কিন্তু সে তা না করে স্বভাবজাতভাবে ক্রিকেট মাঠকে যুদ্ধের ময়দান বানিয়ে, জয়কে একমাত্র লক্ষ্য করে ক্রিকেটীয় সৌন্দর্য ও চেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন। এটাতে ক্রিকেট যে ভদ্রলোকের খেলা তা ভূলুণ্ঠিত এবং স্পোর্টসম্যান স্পিরিট নষ্ট হয়েছে। যদি সে ম্যাথিউজকে আউট হবার পর আবার ফিরিয়ে আনতেন তবে বাংলাদেশ ও ক্রিকেটকে মহানুভবতার অনন্য উচ্চতায় চলে যেত। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, মেসি বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় ও দর্শকদের প্রতি সবসময় সৌম্য-সুন্দর আচরণ করে। অনেক খেলায় বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা মেসিকে বিপদজনকভাবে ট্যাকলিং করার কারণে সে মারাত্মকভাবে আহত বা ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু সে প্রতিশোধপরায়ণ আচরণ করেনি। সে মানবকল্যাণ ও শিশুসেবায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। যা অন্য খেলোয়াড়সহ সকলের জন্য মহান দৃষ্টান্ত।

তাই বলব, সাকিব মেসি নয়, ম্যাক্সওয়েলও না। তবে সাকিব আল হাসান বিশ্বমানের খেলোয়াড় এই ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেসি হবার দারুণ একটা সুযোগ এসেছিল। তবে সে নানা কারণে এই সুযোগটা হাতছাড়া করেছেন।

নির্মোহভাবে বলা যায়, দলকে নিয়মিত জয় এনে দিতে, গ্রেট প্লেয়ার হতে হলে বুক চিতিয়ে দলের জন্য লড়ে যেতে হয়, দলের বিপদে মাটি কামড়িয়ে মাঠে পড়ে থাকতে হয়। সাথে লাগে মহানুভবতা ও দলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেবার মানসিকতা। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের যতেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতির পূর্ণতা দিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের নতুনভাবে ভাবতে হবে। দেশের জয়ে নিজেদের শতভাগ দিতে বদ্ধপরিকর হতে হবে। বিশেষ করে সাকিবকেও দলের স্বার্থে নিবেদিত প্রাণ হতে হবে।তবে একথা সত্য, সাকিবের বিকল্প বাংলাদেশে এখনও কেউ তৈরি হয়নি। তাকে এখনও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য ভীষণভাবে প্রয়োজন। দেশকে সে এখনও অনেক কিছু দেবার ক্ষমতা রাখে।

যা হোক, অনেক খারাপের ভেতর একটা ভালো সংবাদ, বাংলাদেশ পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কোয়ালিফাই করেছে। তাই বিসিবির উচিৎ হবে, অতীত ভুলে দলে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে; তা সমাধানে মনোনিবেশ করা। খেলোয়াড় নিয়ে অতি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মানসিকতা বাদ দিয়ে বিশ্বমানের একটা দল গঠনে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ঘরোয়া ক্রিকেটকে ঢেলে সাজানোসহ দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা। আর সাকিব যেহেতু অধিনায়ক হিসেবে তেমন সফল হচ্ছে না সেহেতু অধিনায়ক নিয়ে নতুন চিন্তা করা যায়।

ক্রিকেট অনুরাগী সকলে প্রত্যাশা করে, সামনের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিসহ অন্যান্য খেলায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করুক। ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশ পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হোক। প্রত্যাশার প্রাপ্তি যেন ঘটে।

লেখক: প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এজেডএস

ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ কী আসলেই বিশ্বকাপ! খালিদ ফেরদৌস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর