Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছিন্নমূল শিশুদের মাদকাসক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়

আসাদুজ্জামান বুলবুল
২৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:০৭

শিশু-কিশোরদের মধ্যে মাদক সেবনের ঘটনা সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় বেশি। এটির কারণ হচ্ছে শিশু মনের কৌতূহল, অনেক পথশিশু যৌন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের দৈনন্দিন চক্রের সাথে মোকাবিলা করতে বা দারিদ্র্যের জীবন থেকে বাঁচতে বিনোদন হিসাবে সস্তা নেশাদ্রব্য ব্যবহার করে।

বাংলাদেশে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো, মাদকের অপব্যবহারকে একটি সামাজিক এবং স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে দেখা হয়, যা ক্ষতিগ্রস্থদের শারীরিক, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে শিশুদের। এটি পরিবার, সম্প্রদায়ের নেতা, শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ, সরকার এবং শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারের উপর শিশুদের নিয়ে বাংলাদেশে কার্যক্রম রয়েছে, তবে সেটির বাস্তবায়ন খাতায় কলমে থাকলেও বাস্তবে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিলক্ষিত হয় না। পথশিশুরা মাদক সেবনের মহামারী পর্যায়ে অবস্থান করছে।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদকে আসক্ত। সংগঠনটির তথ্যানুযায়ী ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি স্পট রয়েছে, যেখানে ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা মাদক সেবন করে। পথশিশুরা সাধারণত গাঁজা, ড্যান্ডি, পলিথিনের মধ্যে গামবেল্ডিং দিয়ে ও পেট্রল শুঁকে নেশা করে। পথশিশুরা ক্ষুধার জ্বালা, একাকিত্বের কষ্ট বা সঙ্গদোষে নানা ধরনের মাদক নিচ্ছে। তারমধ্যে অন্যতম মাদক ড্যান্ডি। পথশিশুদের ভাষ্যমতে ড্যান্ডি গ্রহনের অন্যতম কারণ হচ্ছে ক্ষুধা। ড্যান্ডি খেলে ঝিমুনি আসে, ঘুম আসে। তখন ক্ষুধার কথা মনে থাকে না। এখন আলোচনার বিষয় হচ্ছে বিশাল সংখ্যক ছিন্নমূল শিশুদের মাদকাসক্তের ফলে সমাজ ও রাষ্ট্র কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রথমত বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি, অল্প বয়সে মাদক গ্রহণের ফলে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ, স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তপাত, ফুসফুসে ক্যান্সার, মুখে ক্যান্সার, এমনকি হতে পারে এইচআইভি পর্যন্ত। দ্বিতীয়ত সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি, ছিন্নমূল শিশুদের নেশার ফলে মানসিক বিকৃত ঘটে ফলে নেশার অর্থ জোগাড় করা ছাড়াও নৈতিক স্খলনের কারণে খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ, চুরি, পকেটমার, মাদক পাচার, মাদক কারবারিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। তৃতীয়ত বিশাল সংখ্যক পথশিশুদের মেধা ও প্রতিভাকে সমাজের কোন কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

সমাজ ও রাষ্ট্রের উদাসিনতা ও কার্যকারি পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ছিন্নমূল শিশুদের মাধ্যমে এই দুটি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসন এবং সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে সমাজের মানুষ। আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন মানুষ শখ করে কুকুর, বিড়াল পোষে কিন্তু কখনো শখ করে মানুষ পোষে না। আর পথশিশুদের মাদকাসক্তির প্রধান কারণ অভিভাবকত্ব হীনতা। তাদের ভালোবেসে, দায়িত্ব নিয়ে শেখানোর মতো কেউ নেই তাইতো তারা আজ বিশৃঙ্খল। আমরা যদি শখ করে কুকুর, বিড়ালের পাশাপাশি একটা পথশিশু পুষি তাহলে হয়তো সমাজে এত ছিন্নমূল শিশু থাকতো না।

সামাজিকীকরণ দরকার পথশিশুদের মাদকাসক্তি থেকে দূরে রাখতে আইন প্রয়োগ কিংবা রিহ্যাব সেন্টার কখনো অপরাধ প্রবণতা দমন করতে পারবে না। শিক্ষা, সহমর্মিতা, ক্ষুধা এবং বাসস্থানের বন্দোবস্তের পাশাপাশি পারিবারিক আবহ পেলে ছিন্নমূল শিশু কখনো বিপথে যাবে না।

১৯৭৪ সালের ২২ জুন জাতীয় শিশু আইন (চিলড্রেন এ্যাক্ট) তৈরি করা হয়। যার মাধ্যমে শিশুদের নাম ও জাতীয়তার অধিকারের স্বীকৃতি আদায়, সব ধরনের অবহেলা, শোষণ, নিষ্ঠুরতা ও খারাপ কাজে ব্যবহার হওয়া ইত্যাদি থেকে নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করা যায়। বর্তমান সরকার শিশুবান্ধব নানা কর্মসূচী ও প্রকল্প হাতে নিয়েছে যদিও কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল, কাগুজে উদ্যোগ অনেক থাকলেও বাস্তবায়নের বেলায় গড়িমসি লক্ষ্য করা গেছে।

উন্নত দেশগুলোয় দেখা যায়, প্রত্যেক শিশুর দায়িত্ব রাষ্ট্র কোন না কোনভাবে পালন করে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও এটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আন্তর্জাতিক শিশু সনদ, শিশু আইনসহ দেশের প্রচলিত আইনে প্রতিটি শিশু তাদের সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, খাদ্য ও পুষ্টি, বিনোদন পাওয়ার অধিকার রাখে। শিশুদের সব ধরনের নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে আত্মরক্ষার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে এসব সনদ ও আইনে। কিন্তু আমাদের দেশের পথশিশুরা এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত।

ছিন্নমূল শিশুরা সুবিধাবঞ্চিত এবং পারিবারিক দায়বদ্ধতা থেকে বিছিন্ন হওয়ার কারণে সমাজে জটিলতা সৃষ্টি করছে। তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের সহানুভূতি নয় দায়িত্ব হচ্ছে পথশিশু বা ছিন্নমূল শিশুদের অধিকার রক্ষা এবং সমাজের মূলধারায় তাদের ফিরিয়ে আনা।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

আসাদুজ্জামান বুলবুল ছিন্নমূল শিশুদের মাদকাসক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রের দায় মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর