Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ দিবস ও বিশ্ব মানবতার আহবান

অলোক আচার্য
২৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:৪২

ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশের আন্তর্জাতিক দিবস আজ। ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ প্রতিবছর দিবসটি উদযাপনের আহ্বান জানায়। এর ১০ বছর পরে ১৯৮৭ সালের ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এরপর থেকে দিনটি আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিনি সংহতি দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিরা তাদের ইতিহাসের ‘একটি অন্ধকার অধ্যায়’ সহ্য করছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি গাজায় ‘জীবন রক্ষাকারী সামগ্রীর অবাধ প্রবেশাধিকার, সব জিম্মি মুক্তি, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন বন্ধ করার’ আহ্বান জানিয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারের ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬ হাজার ১৫০টি শিশু এবং ৪ হাজার নারী রয়েছেন। ফিলিস্তিনের উপর ভয়াবহ হামলার পর ইসরাইলের সাথে বহু প্রতিক্ষীত সাময়িক যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হয়েছে। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। দশকের পর দশক ধরে চলে আসা ফিলিস্তিন-ইসরাইলের মধ্যেকার অমিমাংসিত বিষয় নিয়ে চলা যুদ্ধে প্রাণহানি, সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতির তৈরি করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিরীহ ফিলিস্তিনিরা এর নির্মম শিকার হচ্ছে। এই বিরতি সাময়িক নয়, পৃথিবী চায় স্থায়ী সমাধান। স্থায়ী সমাধান না হলে কখনোই এ অঞ্চলে শান্তি ফিরবে না। যুদ্ধ থেকে পৃথিবীকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে। যুদ্ধ পৃথিবীকে কিছ্ইু দিতে পারে না কেবল ধ্বংস ছাড়া। শুরু থেকেই ইসরাইলকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আত্মরক্ষার অধিকারের নামে যা হচ্ছে সেটি কেবল আত্মরক্ষার মধ্যেই সিমাবদ্ধ নেই, এটি এখন চরম অমানবতার পর্যায়ে গেছে। মানবতা ফিলিস্তিনে ভূলুন্ঠিত হচ্ছে, শিশুদের জন্য জায়গাটা এখন নরকের থেকে বেশি ভয়াবহ। হামলার এই পর্যায়ে সব দেশই চাইছিল যুদ্ধ বিরতি। ফিলিস্তনে ইসরাইলের ব্যাপক অভিযানে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ ছাপিয়ে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ এবং গাজা উপত্যকায় ঘটে চলা তীব্র নৃশংসতা বিশ্বের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক দশক ধরেই বিশ্ব যেন যুদ্ধ বন্ধ করার চেয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পরাকেই নিয়তি হিসেবে ধরে নিয়েছে। মানুষ এতটাই অমানবিক, প্রতিশোধ পরায়ণ এবং নিষ্ঠুর হতে পেরেছে যে ফিলিস্তিনের একটি হাসপাতালেও বোমার আঘাতে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। সেখানে কিন্তু মৃত মানুষও ছিল। একজন মানুষ আর কতবার মরবে? অতি দ্রুত এখন ইসরাইলের এই নৃশংসতা বন্ধ করা জরুরি এবং বিশ্বকে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। যুদ্ধ বিশ্বের অর্থনীতি এবং রাজনৈতি পরিস্থিতিকে আরও বেশি জটিল করে তুলছে।

বিজ্ঞাপন

যুদ্ধ কতদিন চলতে পারে এর উত্তর এ কারণে দেওয়া যায় না কারণ যে কারণগুলো দেখিয়ে সেসব বিষয়ে কিভাবে ঐক্যমতে পৌছানো সম্ভব হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। অথবা কোন দেশ নিজ উদ্যোগে এই কাজটি করবে সেটিও প্রশ্নের। ফলে যুদ্ধ থামার কোনা আশা দেখছে না বিশ্ব। যত দীর্ঘ সময় নিয়ে যুদ্ধ হবে ততই ক্ষতি বাড়বে। নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। মানুষ তার বেঁচে থাকার আশা হারাবে। নিজেকে একবার সেই জায়গায় ভাবি যেখানে যুদ্ধাবস্থায় মানুষের দিন রাত্রি চলছে। হয়তো একপক্ষ বিজয়ী হবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে যাবে মানবতা অর্থাৎ মানুষ। যুদ্ধ এক আজব বিষয়। মানুষের প্রাণ নিয়ে মানুষের লাভ! লাভ-ক্ষতির হিসেবের পাল্লায় ক্ষতির হিসাবটাই অনেক বড়। একটি টেকসই পৃথিবী গঠনে অস্ত্র নয় প্রয়োজন সবার জন্য খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা। সেই লক্ষ্যে অগ্রসর হতে প্রথমেই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। আর তা না হলে নিজেদের হাতে তৈরি সভ্যতায় নিজেরাই বিলুপ্ত হবে কোনো সন্দেহ নেই।

বিজ্ঞাপন

ফিলিস্থিনিদের সাথে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। ফিলিস্তিনিদের অধিকার বিষয়ে বিশ্বকে একমত হতে হবে এবং তাদের ভূমির অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। এভাবে আর কত নিরীহ মানুষের মৃত্যু ঘটবে যাদের বেশিরভাগই ফিলিস্তিনি? ইসরাইলের একের পর এক আক্রমণে ফিলিস্তিনের অনেক এলাকা আজ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। কতদিনে ঐ অঞ্চলে একটি স্থায়ী সমাধান আসবে সেটাও নিশ্চিত নয়। যুদ্ধ এবং শান্তি পরস্পর বিপরীতমুখী প্রক্রিয়া। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বর্তমান বিশ্বে দুটো বিষয়ই পাশাপাশি চলছে। একদিকে একে অন্যকে আক্রমণাত্বক বক্তব্য ছুড়ছে অন্যদিকে শান্তির বুলি। মানুষ আসলে কি চায় তা মনে হয় নিজেও জানে না। যাদের মাথার ওপর ছাদ ছিল। আজ নেই। মানুষের তৈরি অস্ত্র সেই ছাদ ধ্বংস করে দিয়েছে। পৃথিবীর মানুষকে আসলে গভীরভাবে ভাবতে হবে যে তারা কি চায়, যুদ্ধ না শান্তি? অস্ত্র না মানবতা? এসব তো পাশাপাশি চলতে পারে না। হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চলা যুদ্ধবিরতি অতীতেও কার্যকরের পর ফের উভয়ে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে। অতীতেও ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব নিরসনে বিশ্বে দাবি জোরালো হয়েছে। পরিকল্পনা হয়েছে, প্রস্তাব হয়েছে কিন্তু বাস্তবে এর কোনো ফল পাওয়া যায়নি। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশুই একটি স্বাধীন ভূমির প্রত্যাশা করে। যুদ্ধ বা হানাহানি জন্ম থেকে প্রত্যাশা করে না। কিন্তু ফিলিস্তিনে জন্ম নেওয়া একটি শিশু কেন সেই স্বপ্ন দেখতে পারবে না এর উত্তর কারও কাছে নেই। ফলে পৃথিবীর স্বার্থে পৌছাতে হবে কোনো স্থায়ী সমাধানে। এভাবে পক্ষ-বিপক্ষ একটি বিশ্বযুদ্ধে অথবা ব্যাপক যুদ্ধে রুপ নিতে পারে। এর মধ্যে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সুতরাং পৃথিবীর স্বার্থেই সব ধরনের যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে এবং মানবিক উপায়ে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমরা যুদ্ধ বিরতি চাই না, আমরা চাই স্থায়ী সমাধান অর্থাৎ যুদ্ধ বন্ধ হোক।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

অলোক আচার্য ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ দিবস ও বিশ্ব মানবতার আহবান মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর