Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতিবন্ধী শিশুদের বিকাশে উপযুক্ত পরিবেশ

অলোক আচার্য
৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৪৭

আজ ৩২ তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। যখন শিশু সুস্থ অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করে তখন মা বাবার আনন্দের সীমা থাকে না। কিন্তু মাঝে মধ্যেই সুস্থ শিশুর পাশাপাশি অসুস্থ শিশুর জন্ম হয়। যা কোন মা বাবাই প্রত্যাশা করে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কোন শিশু কানে শুনতে পায় না অথবা কথা বলতে পারে না। শিশু যখন আস্তে আস্তে বড় হয়ে ওঠে তখন তার এই প্রতিবন্ধকতা চোখে পরে। তখন মা বাবার এবং পরিবারের সদস্যদের মন খারাপ হয়ে যায়। আজও গ্রামাঞ্চলে এর জন্য মায়ের ওপর দোষারপ করতে দেখা যায়। নানাবধি সংস্কারকে এর জন্য দায়ী করা হয়। অনেক কুসংস্কারের মত আমরা এই কুসংস্কার বিশ্বাস করি যে এর জন্য হয়তো মা দায়ী। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে যে একটি শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়ার জন্য সেই মা বাবা দায়ী থাকে না। বৈজ্ঞানিকভাবে বিভিন্ন ক্রটির কারণে একটি শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিতে পারে। কিন্তু এই ক্রটির বিষয়টি সবাইকে বোঝানো সম্ভব নয়। আবার কোন অসুস্থতার জন্যও কোন শিশু কথা বলা বা শোনার ক্ষমতা হারানোর মত ঘটনা ঘটতে পারে। আবার দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। মাঝে মাঝে এসব প্রতিবন্ধী শিশুকে ভন্ড পীর ফকিরের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সেই শিশুটি আরও কষ্ট পায়। অনেক প্রতিবন্ধী শিশু আছে যাদের জন্মের পরপরই যদি সুচিকিৎসা দেয়া যায় তাহলে ধীরে ধীরে তারা সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের সেই চিকিৎসা করানো হয় না। প্রতিবন্ধী হয়েই তারা বেড়ে ওঠে। প্রতিবন্ধী শিশুরা আজও আমাদের সমাজে স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেড়ে ওঠে না। মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েও তারা মানুষের কাছ থেকে স্বাভাবিক আচরণ পায় না। তারা বিভিন্নজনের কাছ থেকে অবহেলা ও অবজ্ঞার শিকার হয়। ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ডিসেম্বরের ৩ তারিখে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়ে আসছে। মূলত দিবসটি শারীরিকভাবে যারা অসম্পূর্ণ তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও তাদের কাজের মূল্যায়ন করতেই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

বিজ্ঞাপন

সাধারণভাবে জন্ম থেকে যেসব শিশু প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে জন্ম গ্রহণ করলে তাকে প্রতিবন্ধীতা বলা যেতে পারে। আবার অনেকে জন্মের পরবর্তী যে কোন সময় হঠাৎ দুর্ঘটনা প্রাপ্ত হয়ে প্রতিবন্ধীত্ব বরণ করতে পারে। আবার শরীরের কোন অংশ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে, স্বল্পস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ীভাবে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায় তাকে প্রতিবন্ধীতা বলা যেতে পারে। প্রতিবন্ধীরা শারীরিক বা মানসিকভাবে স্বাভাবিক মানুষের মত কাজ করতে পারে না, বুদ্ধি বিকাশ হয় না এ ধরনের শিশুদের। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধীত্বর মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি, শ্রবণ, বাক,বুদ্ধি বা বহুবিধ প্রতিবন্ধী আমাদের চারপাশেই এ ধরনের বহু শিশু রয়েছে। শারীরিক বা মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিয়ে তারা সমাজে বোঝা হযে জীবন যাপন করে। প্রতিবন্ধী শিশুদের এই অবহেলার শুরু হয় তাদের পরিবার থেকে। পরিবারের অবহেলায় তারা ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। একসময় যখন বড় হয় তখন সমাজটাকেও অচেনা মনে হয়। সুস্থভাবে জন্ম নেয়া আর দশটা শিশুরা সাথে নিজের পার্থক্য বুঝতে পারে এবং মানুষের মনোভাব বুঝতে শেখে। তখন সে নিজে থেকে সংকুচিত হয়ে পরে। অথচ পৃথিবীতে প্রতিবন্ধী হয়েও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন এমন অনেক উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে রয়েছে। পৃথিবী খ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী ষ্টিফেন হকিং রোগে তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। দীর্ঘ বহুবছর তিনি একটি বিশেষ চেয়ারে কাটান। এসময়ই তিনি তার পদার্থ বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব দিয়ে নিজেকে সময়ের সেরা বিজ্ঞানীর আসনে নিয়ে যান। এরকম বহু উদাহরণ আছে যারা প্রতিবন্ধী অবস্থাকে গুরুত্ব না দিয়ে মনের জোর কাজে লাগিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতদূর না গিয়ে আমরা নিজ দেশে তাকাই। প্রত্যেক পাবলিক পরীক্ষা শুরুর পর আমরা যদি পত্রিকার পাতায় চোখ রাখি তাহলে দেখা যাবে পা দিয়ে লিখে, মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেয়ার খবর প্রকাশিত হয়। এ থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে শরীরের কোন অঙ্গ কাজ না করলেও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখা যায়। এর জন্য শরীরের জোরের থেকে মনের জোর থাকা বেশি জরুরী।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য আমাদের করণীয় ঠিক করতে হবে। প্রতিটি গ্রামেই খুঁজলে প্রতিবন্ধী শিশু পাওয়া যাবে। যে পরিবারে কোন শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয় অথবা কোন দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিবন্ধী হয়ে জীবন যাপন করে সেই পরিবারের মানুষই জানে কি দুঃসহ যন্ত্রণা। তাই তাদের জন্য একটু ভালোবাসা, একটু সহযোগীতা তাদের জীবনকে সুন্দর করতে পারে। তাদের মেধাকে বিকশিত করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে আমাদের। কেউ ইচ্ছা করে প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয় না বা প্রতিবন্ধী হয় না। তাই তাদের বিশ্বাসকে সম্মান করতে হবে আমাদের। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের চলাচল করা একটা সমস্যা। এসব প্রতিবন্ধীদের জন্য সহজে চলাচল করতে পারে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশু যেসব পরিবারে আছে তাদের সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। পরিবার থেকে প্রতিবন্ধীদের প্রতি যে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করা হয়। প্রথমে পরিবার থেকে তাকে উৎসাহিত করতে হবে। পরিবার থেকে উৎসাহ পেলে সে মানসিকভাবে ভরসা পাবে। সে যে সমাজের জন্য কোন বোঝা নয় বরং তারও সমাজের প্রতি দায়িত্ব আছে, সে তার মেধা দিয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারবে সে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে। যা সৃষ্টি করা খুবই জরুরি। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধীদেও জন্য নেয়া কার্যক্রম দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধীরাও সুবিধা পায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রত্যন্ত গ্রামে দরিদ্র পরিবাওে জন্ম নেয়া প্রতিবন্ধী শিশুরা অনেক সময়ই এসব সুযোগ সুবিধা পায় না কেবল পরিবারের সচেতনার অভাবে।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

অলোক আচার্য প্রতিবন্ধী শিশুদের বিকাশে উপযুক্ত পরিবেশ মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর