Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মানবাধিকারের ইতিহাসে বাস্তিল দুর্গের পতন ও ফরাসী বিপ্লব

সৈয়দ আমিরুজ্জামান
১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৫২

২৩৪ বছর পূর্বে ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্স রাজ্যের প্যারিসের কুখ্যাত বাস্তিলে বিক্ষোভ হয়। ফ্রান্সের সম্রাট ষোড়শ লুই তৃতীয় শ্রেণীর বুর্জোয়াদের কাছে আত্মসমর্পণ করলেও তিনি পুরোনো রাজতন্ত্রের প্রতীক হয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। শুধুমাত্র সেই কারণে ফ্রান্সের প্রধান অর্থমন্ত্রী নেকারকে সরিয়ে দিয়ে সেই পদে প্যারিস ও ভার্সাই এর সেনা মোতায়েন করেন। এরপর ফ্রান্সের উত্তপ্ত জনতা ১৭৮৯ সালের ১৪ই জুলাই বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে ও দখল করে নেয়।

বিজ্ঞাপন

এই বাস্তিল দুর্গের পতনের মধ্য দিয়ে ফরাসী বিপ্লব সংঘটিত হয়। এই বিপ্লব ছিল তদানীন্তন ফ্রান্সের শত শত বছর ধরে নির্যাতিত ও বঞ্চিত “থার্ড স্টেট” বা সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এই বিপ্লবের আগে সমগ্র ফ্রান্সের ৯৫ শতাংশ সম্পত্তির মালিক ছিল মাত্র ৫ ভাগ মানুষ। অথচ সেই ৫ ভাগ মানুষই কোনো আয়কর দিত না এবং এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করত তাদেরকে এই বাস্তিল দুর্গে বন্দী করে নির্যাতন করা হতো। বাস্তিল দুর্গ ছিল স্বৈরাচারী সরকারের নির্যাতন ও জুলুমের প্রতীক। একবার কোনো বন্দী সেখানে প্রবেশ করলে জীবন নিয়ে আর ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকত না । কারাগারের ভিতরেই মেরে ফেলা হতো অসংখ্য বন্দীদের। ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গের আশেপাশের বিক্ষুব্ধ মানুষ বাস্তিল দুর্গ অভিমুখে রওনা হয়। দুর্গের সৈন্যরাও ভিতর থেকে কামান দাগাতে থাকে। প্রায় দুইশো বিপ্লবী হতাহত হয়। এরপর চারিদিক থেকে উত্তেজিত বিক্ষুব্ধ জনতা বাস্তিল দুর্গ ধ্বংস করে। জয় হয় সাম্য, মৈত্রী এবং স্বাধীনতার। এই ঘটনাটিই ফ্রান্সের জাতীয় উৎসব বলে পালন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বাস্তিল দুর্গের পতনের পর ফ্রান্সের রাজতন্ত্র খানিকটা শিথিল হয়ে পড়ে। আতঙ্কিত রাজা ফ্রান্সের জাতীয় পতাকাকে মেনে নেয়। জনগণের নির্ধারিত মেয়রকে প্যারিস পৌরসভার প্রধান করা হয়। স্বৈরতন্ত্রের প্রতীক বাস্তিল দুর্গের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে রাজতন্ত্র ক্ষমতা হারায়। ফ্রান্সে রাজতন্ত্র পতনের শুরু হলে, গণতন্ত্র শক্তিশালী হতে শুরু করে। জনগণের আক্রমণে ফ্রান্সের বাস্তিল দুর্গের পতন হলে সম্রাটরা বুঝতে পারে, তাদের সময় বেশিদিন থাকবে না। এরপর থেকে গণতন্ত্র জোর বাঁধতে শুরু করে ও ফ্রান্সে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়।

ফরাসী বিপ্লব ইউরোপ এবং নতুন বিশ্বের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল। মানব ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তনের নির্ণায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। এটি সামন্তবাদের অবসান ঘটায় এবং পৃথকভাবে সংজ্ঞায়িত ব্যক্তিগত মুক্তির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করেছিল।

ফরাসী বিপ্লব (১৭৮৯–১৭৯৯) ফরাসি, ইউরোপ এবং পশ্চিমা সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই বিপ্লবের সময় ফ্রান্সে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে প্রজাতান্ত্রিক আদর্শের অগ্রযাত্রা শুরু হয় এবং একই সাথে দেশের রোমান ক্যাথলিক চার্চ সকল গোঁড়ামী ত্যাগ করে নিজেকে পুনর্গঠন করতে বাধ্য হয়। ফরাসী বিপ্লবকে পশ্চিমা গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি জটিল সন্ধিক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় যার মাধ্যমে পশ্চিমা সভ্যতা নিরঙ্কুশ রাজনীতি এবং অভিজাততন্ত্র থেকে নাগরিকত্বের যুগে পদার্পণ করে।

ফরাসী বিপ্লবের মূলনীতি ছিল “স্বাধীনতা, সমতা, ভ্রাতৃত্ব, অথবা মৃত্যু”। এই শ্লোগানটিই বিপ্লবের চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলো যার মাধ্যমে সামরিক এবং অহিংস উভয়বিধ পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শ্লোগানটি তখন সকল কর্মীর প্রাণের কথায় পরিণত হয়েছিলো।

লেখক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

মানবাধিকারের ইতিহাসে বাস্তিল দুর্গের পতন ও ফরাসী বিপ্লব মুক্তমত সৈয়দ আমিরুজ্জামান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর