অ্যান্টিবায়োটিক যেন মৃত্যুর কারণ না হয়
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:০১
অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছিলেন স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। ফ্লেমিং স্যার বলেছিলেন, এই অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে আজ কোটি কোটি মানুষ বেঁচে যাবে। অনেক বছর পর এগুলো আর কাজ করবে না। তুচ্ছ কারণে কোটি কোটি মানুষ মারা যাবেও আবার।
অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। একটা নির্দিষ্ট ডোজে, একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়। না খেলে যেটা হতে পারে সেটাকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স। ধরি, আমার দেহে ১ লক্ষ ব্যাকটেরিয়া আছে। এগুলোকে মারার জন্য আমার ১০ টা এম্পিসিলিন খাওয়া দরকার। এম্পিসিলিন এক প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক। খেলাম আমি ৭ টা, বাকি রাখলাম ৩ টা। ব্যাকটেরিয়া মরলো ৭০ হাজার এবং আমি সুস্থ হয়ে গেলাম। ৩০ হাজার ব্যাকটেরিয়া কিন্তু শরীরে রয়েই গেলো, ৩ টা ওষুধ না খাওয়ার কারণে। এগুলো শরীরে ঘাপটি মেরে বসে জটিল এক কান্ড করলো নিজেরা নিজেরা। তারা ভাবলো, যেহেতু এম্পিসিলিন দিয়ে আমাদের ৭০ হাজার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। অতএব আমাদেরকে এম্পিসিলিন প্রুফ জ্যাকেট পড়তে হবে এবার। প্ল্যান করে থেমে থাকে না এরা, বরং সত্যি সত্যি জ্যাকেট তৈরি করে ফেলে এই ব্যাকটেরিয়া গুলো। এরা বাচ্চা-কাচ্চা পয়দা করে একই সময়ে। বাচ্চাদেরকেও সেই জ্যাকেট পড়িয়ে দেয়। এর ফলে যেটা হয়, পরের বার এম্পিসিলিন নামক অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে, জ্যাকেট পড়া ব্যাকটেরিয়া গুলো কেবল ঐ ব্যক্তির শরীরেই বসে থাকে না। তিনি হাঁচি দেন, কাশি দেন। এতে করে ব্যাকটেরিয়া গুলো ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। আমাদের বড় বড় হাসপাতাল থাকবে, সেখানে এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমডি ও পিএইচডি ডিগ্রি করা ডাক্তাররা থাকবেন। কিন্তু কারোরই কিছু করার থাকবে না। কারণ তাদের হাতে যথেষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক থাকবে না।
সামান্যে সর্দিতে রোগী মরে সাফ হয়ে যাবে। উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা ব্যবস্থা আলাদা। তারা নিয়ম মেনে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খায়। এদিকে বিপদে আছি আমরা। আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোতে এবং পত্রপত্রিকায় নানান বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা হয়। যেমন– বাথরুম করে হাত ধুতে হবে, কাশি হলে ডাক্তার দেখাতে হবে, নিরাপদ পানি খেতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে কোন কিছু আজও চোখে পড়েনি। অথচ এটা অন্যান্য বিষয়গুলোর চেয়েও এই বিষয়টা জরুরি। অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করলে, এতো সচেতনতা দিয়েও আর লাভ হবে না।
এদিকে আগুন নিয়ে খেলছে আমাদের ফার্মেসিওয়ালারা। রোগী ফার্মেসিতে গিয়ে একটু জ্বরের কথা বললেই, ফার্মেসিতে বসে থাকা সেই মহাজ্ঞানী লোকটি অনায়াসে দিয়ে দিচ্ছে Ezithromycin অথবা Cefixime অথবা Cefuroxime অথবা Levofloxacin নামক কিছু নাম করা দামি অ্যান্টিবায়োটিক। কিন্তু কতোদিন খেতে হবে? সেটা না জানিয়ে সুন্দর করে বলে দেয়– এই ওষুধটি ১ ডোজ খাবেন, সব রোগ ভালো হয়ে যাবে। আর এভাবেই আস্তে আস্তে Resistance হচ্ছে সব অ্যান্টিবায়োটিক।
চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে এখনই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা উচিত। সবাইকে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। অন্যথায় আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
সর্বোপরি– সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে বিপন্ন মানুষের জীবন বাঁচবে। অন্যথায় এই অ্যান্টিবায়োটিক নামক প্রতিষেধকই জীবন ঘাতক হয়ে দাঁড়াবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ
সারাবাংলা/এসবিডিই
অ্যান্টিবায়োটিক যেন মৃত্যুর কারণ না হয় এস এম রাহমান জিকু মুক্তমত