নাটক উপেক্ষা করে সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্ভব নয়
২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:০৯
প্রাত্যহিক বিনোদনের সিংহভাগ জুড়েই থাকে কোনো না কোনো নাটক, সিরিয়াল, সিনেমা, অভিনয় ইত্যাদি নিয়েই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হালের রিল ভিডিও’র মূল উপজীব্যও কিন্তু অভিনয়। নাটকের উৎপত্তি, ইতিহাস, গোড়াপত্তন আলোচনা নাই-বা করলাম। বিনোদন, সমাজ পরিবর্তন, বিপ্লব, ঐতিহাসিক পট পরিবর্তন- প্রতিটা প্রেক্ষাপটেই সংস্কৃতির অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে নাটক-অভিনয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ এদেশের প্রতিটি রক্তক্ষয়ী লড়াই-সংগ্রাম-অধিকার-মুক্তির আন্দোলনেও নাটকের রয়েছে ঐতিহাসিক ভূমিকা। এই বাংলার বিভিন্ন আঙিকের নাটকের খ্যাতি, ওপার বাংলা থেকে শুরু করে পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষি প্রতিটা মানুষের কাছেই সমান সমাদৃত।
পুঁথিগত উপমায় ‘নাটক সমাজের দর্পণ’, কিন্তু চরম কষ্টের সাথেই পরিলক্ষিত বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই দেশের সমস্ত রাষ্ট্রীয়, জাতীয় দিবস বা উপলক্ষ্য গুলোতে দেশের প্রায় প্রতিটা অঞ্চলেই সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বা আয়োজনে কোথাও কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা উৎসব হলে প্রায় অধিকাংশ জায়গায় চরম ভাবে উপেক্ষিত হয় ‘নাটক’। যদিও কোথাও কোথাও হয়েও থাকে, দেখা যায় বিশাল সময়ের কোনো অনুষ্ঠানের মাঝে মাত্র ৫/১০ মিনিটের ছোট একটা সময় থাকে নাটক বা নাটিকার জন্য।
এবারও এর ব্যতিক্রম কিছু দেখলাম না বিজয় দিবসের সরকারি আয়োজনের এক অনুষ্ঠানে। প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টার অনুষ্ঠানে অলোচনা সভা, গান-নাচে সমৃদ্ধ থাকলেও মাত্র ৩ মিনিটের একটি আবৃত্তি ছাড়া, কোনো নাটক বা নাট্যাংশ দেখলাম না! এ সমস্ত আয়োজনগুলোতে কি নাটকের কোনো আবশ্যকতা নেই? নাকি নাটক সংশ্লিষ্টদের আগ্রহ নেই? অথচ একটা সময় ছিল মানুষ শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা শেখার জন্য নাটক করতো, নাটক দেখতো, চর্চায় থাকতো, সমাজ সচেতনতায় একটা ইতিবাচক প্রভাব রাখতো।
টিভি নাটক-সিনেমা ছাড়া দেশের সমস্ত পর্যায়ে মঞ্চ, থিয়েটার এসবের মাধ্যমে নাটকের যেটুকু চর্চা নিয়মিত-অনিয়মিত হয়ে থাকে; তা শুধুমাত্র নাটকপ্রাণ নাট্যযোদ্ধাদের নিজস্ব উদ্যোগ ও চেষ্টাতেই কেবল সম্পন্ন হয়। থাকে না কোনো বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা। রাষ্ট্রীয় অনুদানে চলচিত্র নির্মাণ হতে দেখি আমরা, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মঞ্চ নাটক, তেমনটা কখনো চোখে পড়েনি। অথচ নাটক বা নাট্যশিল্পীদের দক্ষতার ভিত হলো মঞ্চ।
সারা বছর যেসব নাট্যকর্মীরা শুধুমাত্র মনের খোরাকে সংস্কৃতির প্রতি কমিটমেন্ট থেকে নিজেদের পকেটের টাকায় নাট্যচর্চা চালিয়ে যায়। মাসের পর মাস নাটক প্রস্তুত করে মঞ্চায়নের খরচ যোগাতে নিজেদের টিকেট বিক্রি করতেও দেখা যায়। সেখানে একটু যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নাট্যযোদ্ধারা কেউ রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবে না নিশ্চিত। বরং সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ বিনির্মাণে নিরলস ভুমিকা রেখে যাবে অতীতের মতই। নাটককে উপেক্ষা করে কখনোই সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্ভব নয়, হবেও না কখনো…
লেখক: সংস্কৃতি কর্মী
সারাবাংলা/এসবিডিই
অজয় মিত্র নাটক উপেক্ষা করে সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্ভব নয় মুক্তমত