প্রসঙ্গ: থার্টি ফার্স্ট নাইট এবং আমাদের সচেতনতা
২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:০২
আর মাত্র হাতেগোনা কয়েকটা দিন বাকি। তারপরেই আমরা পেতে যাচ্ছি নতুন আরেকটি বছর দু’হাজার চব্বিশ। নতুন বছর সবার জন্য আরো বেশি সুন্দর হোক, এটাই প্রত্যাশা। মূলত যে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি, সেটা হচ্ছে আমাদের থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন।
থার্টি ফার্স্ট নাইটে আমরা যেটা নতুন বর্ষকে বরণ করার জন্য যে একটা আনন্দ উৎসব করি। সেই থার্টি ফার্স্ট নাইট নিয়ে সম্প্রতি একটা প্রতিবেদন প্রচার করা হয়েছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরে। উক্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা একটি বাস্তব গল্পের চরিত্র শিশু তানজিম উমায়ের। আমরা অনেকেই হয়তো তার নাম শুনেছি। আতশবাজির শব্দে মানে থার্টি ফার্স্ট নাইট যে আমরা উৎসব করি, আতশবাজি বিভিন্ন জায়গায় রাতের বেলায় যে পরিমাণে ফোটানো হয়, এরকমই আতশবাজির শব্দে চার মাসের শিশু উমায়ের মারা যায়। কেন মারা যায়, শিশু উমায়ের? কারণ হচ্ছে ক্রমাগত বিস্ফোরণের শব্দে শিশু উমায়ের হার্টফেল করে।
আমাদের এই আনন্দ উৎসব কিছু মানুষের জীবনে কতটা দুঃখ-কষ্ট বয়ে নিয়ে আসে বা কতটা ভয়ংকর হতে পারে? সামান্য একটা উৎসব কতটা ভয়ংকর হতে পারে? সেটা আপনারা ওই প্রতিবেদন দেখলে বুঝতে পারবেন।
গত বছর ঢাকার দশটি জায়গায় ফানুসের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের শব্দে পাখিরা সব হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় যে পাখির অভয়ারণ্য রয়েছে সেই জায়গাগুলোতে পাখিরা সব উড়ে যায়। এখানে আমার মনে হয়েছে যে, এই বার্তাটা দিতেই পারি– সামান্য মানে খুব সাময়িক একটা আনন্দ আমাদের। হয়তোবা ১০-১৫ মিনিট আমরা আতশবাজি ফোটাই, ফানুস উড়াই। এধরনের একটা আনন্দ উৎসব করি থার্টি ফার্স্ট নাইট। খুব সাময়িক, এই সাময়িক আনন্দ এটা যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে? কত মানুষের জীবনে, কত বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে? বা আমাদের এই সাময়িক আনন্দ, আমাদের পুরো শহরকে কতটা শঙ্কার দিকে নিয়ে যায়?
এই বিষয়গুলো কিন্তু আমরা কখনোই চিন্তা করি না এবং আমরা চিন্তা করতে চাইও না। কারণ আমাদের কাছে মনে হয় যে, আসলে আমাদের তো আনন্দ উৎসব করার সুযোগ খুব কম হয়। তাই আমরা যখনই এধরনের কোনো ইভেন্ট আমাদের সামনে আসে, আমরা তখনই সেটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু এই উপভোগ করতে গিয়ে আমরা এমন কিছু করে ফেলি, যেটার পরিণতি অনেক ভয়ঙ্কর হয়। এছাড়াও আমাদের মেট্রো রেলেও ফানুস আটকে মেট্রো রেল চলাচল বন্ধ ছিলো কয়েক ঘন্টা, এরকম ঘটনাও ঘটেছে।
সেক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয় যে, এই ব্যাপারটায় আমাদের খুব বেশি সচেতন হতে হবে। আমরা এমনিতেই একটা ভয়াবহ দূষিত নগরীতে বাস করছি। কারণ ঢাকা শহরে বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ অনেকটাই তীব্র। সেই তীব্র দূষণের মধ্যে এর তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এটা আমাদের, আমরা যারা সাধারণ মানুষ আছি তাদের সচেতন নাগরিক হিসেবে এই ব্যাপারটা আসলে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।
আমরা আনন্দ উৎসব করবো। আমরা একটা ইভেন্ট থার্টি ফার্স্ট নাইট নতুন বছরকে আমরা বরণ করতে যাচ্ছি, সেটাকে আমরা উপভোগ করবো। কিন্তু আমরা আমাদের আনন্দ উল্লাস এমন হবে না বা আমাদের উৎসবটা এমন হবে না, যেটা পুরো শহরের অনেক বড় একটা ক্ষতি করে। যা আমাদের আশেপাশের মানুষজনের অনেক বড় একটা ক্ষতি করে। আজ শিশু উমায়ের এর পরিবার যেই কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, কাল আমার-আপনার জীবনেও যে এরকম করতে পারে না সেটার কিন্তু কোনো গ্যারান্টি নেই।
সেই ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি আমি এটাও বলতে চাই, যে প্রত্যেকটা দেশেই কিন্তু এই দিনটাতে অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ১২ টার পরে কিন্তু সব দেশেই এই ইভেন্টটাকে, নতুন বছরটাকে খুব সুন্দর করে বরণ করা হয়। সব দেশেই কিন্তু বিভিন্ন আয়োজন থাকে। বিভিন্ন উৎসব আয়োজন থাকে এবং সবাই মিলে নতুন বছরকে বরণ করার যে একটা রীতি, এটা সব দেশেই থাকে। সেক্ষেত্রে আমাদের এখানেও আমি চাই না যে, এই আয়োজনটা মানে এই উৎসব আয়োজনটাও কেউ উপভোগ না করুক। মানে সচেতন থাকতে গিয়ে কেউ উপভোগ করবে না এরকমটা যেন না হয়। সেই ক্ষেত্রে কিন্তু শহরের কয়েকটা জায়গায় সরকারিভাবে বা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বা যারা বিভিন্ন অর্গানাইজার আছেন, বিভিন্ন ইভেন্ট অর্গানাইজার তারা মিলে কয়েকটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে সেই জায়গাগুলোতে কিন্তু আমরা এই আয়োজনগুলো করতে পারি।
তাহলে যেটা হবে, যে সেই জায়গাগুলোতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হবে এবং জায়গাগুলোকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করা হবে। যেন সেখানে আতশবাজি বা ফানুস উড়ালে, যেন কোথাও কোনো ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে বা কোথাও কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা না থাকে। পাশাপাশি যারা এই উৎসব আয়োজনে অংশ নিতে চাই তারা সেই জায়গাগুলোতে এসে বিভিন্ন পয়েন্টে যেতে পারবেন পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে, বাচ্চাদেরকে নিয়ে। তারা সেখানে গেলেন, যেখানে তারা সবার সাথে এই উৎসব আয়োজনে শামিল হলেন। এরকম যদি একটা সিস্টেম করা যায়, এরকমভাবে যদি আসলে খুব পরিকল্পিতভাবে এই উৎসব আয়োজনগুলো করা যায়। তাহলে আমার কাছে মনে হয় যে, একই সাথে মানুষ নতুন বছরকে বরণও করতে পারলো বেশ একটা উৎসবের মধ্যে দিয়ে।
পাশাপাশি যেসব দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হয়, সেই আয়োজনগুলোকেও আমরা অনেকখানি প্রতিরোধ করতে পারি। অর্থাৎ এইরকম ছোটখাটো বিভিন্ন ধরণের দুর্ঘটনা অথবা বড় বড় দুর্ঘটনা সেগুলোও আমরা এড়াতে পারি। আমার কাছে মনে হয় যে– এই ধরণের একটা উদ্যোগ যদি নেওয়া হয়, সরকারি বা বেসরকারি যেভাবেই হোক না কেন, তাহলে কেউই আসলে মানে জিনিসটাকে একই সাথে মানুষ উপভোগও করতে পারলো নতুন বছর বরণের যে আয়োজন সেটাকে। পাশাপাশি এই যে থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে বিভিন্ন ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে, সেই আশঙ্কাগুলোকেও অনেকখানি নিরাপদ করা গেলো। সেই আশঙ্কা মুক্ত করা গেলো শহরটাকে। অবশ্যই আপনারা সবাই থার্টি ফার্স্ট নাইটে একটু সচেতন হবেন, যেন আপনার খুব সাময়িক আনন্দের কারণে বা সাময়িক আনন্দের জন্য যেন অন্যের দুর্ঘটনার কারণ না হয় বা অন্যের দুঃখের কারণ না হয়।
সর্বোপরি– থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি না ফোটাই। আতশবাজি ফোটানোর শব্দ আর আগুনের ফুলকিতে পাখি, প্রজাপতি সহ প্রচুর কীটপতঙ্গ মারা যায় এবং ডিমের ভিতরের বাচ্চা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। চারপাশে এতো এতো প্রাণ হত্যা করে অসুস্থ আনন্দের প্রয়োজন আছে কি? সবাই ভালো থাকবেন এবং নতুন বছর সবার জন্য আরো অনেক বেশি আনন্দের হোক, এটাই প্রত্যাশা। শুভ নববর্ষ।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ
সারাবাংলা/এসবিডিই
এস এম রাহমান জিকু প্রসঙ্গ: থার্টি ফার্স্ট নাইট এবং আমাদের সচেতনতা মুক্তমত