গণবিচ্ছিন্ন অসহযোগ আন্দোলন
২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৫৬
সারাদেশে মানুষ যখন নির্বাচনকে উৎসব হিসেবে গ্রহণ করে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে, তখন বিরোধীদের জনবিচ্ছিন্ন আন্দোলন চলছে। বিরোধীরা এর নাম দিয়েছে অসহযোগ আন্দোলন। অথচ অসহযোগ আন্দোলনের আবহমান ঐতিহ্য থাকলেও তাদের অসহযোগ আন্দোলন হচ্ছে মানুষকে কীভাবে জিম্মি করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করা যায় সেইদিকে ঠেলে দেওয়া।
প্রতিদিন বিরোধিদলের কতিপয় নেতা, যাদের প্রতি জনগণের বিন্দুমাত্র আস্থা ও বিশ্বাস নেই, তারা লিফলেট হাতে রাস্তায় বের হচ্ছে, কিন্তু সাধারণ জনগণের তাতে কোনো সাড়া পাচ্ছে না। তাদের কোনো নেতা নেই, কর্মী নেই। বরং তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এখন বুঝতে পারছে, অন্ধের মতো যাদের পেছনে তারা এতদিন ছিল, তারা রাষ্ট্রের মঙ্গলের চিন্তা করেনি, উল্টো নিজেদের আখের গুছিয়ে রাষ্ট্রকে কীভাবে পিছিয়ে দেওয়া যায়, রাষ্ট্রের স্বাধীন সত্ত্বাকে চিরতরে বিক্রি করা যায়, এগুলোই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এর ফলে এই দলগুলো তৃণমূল থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
অসহযোগ আন্দোলন কেবল জনগণের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে, জনসমর্থন নয়, এটি এই কয়েকদিনের ঘটনা পর্যালোচনা করলেই ফুটে উঠছে। আর এই অসহযোগ আন্দোলন কার বিরুদ্ধে? স্বাধীন গণতান্ত্রিক পরিবেশে মানুষ যখন উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছে, তখন সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেই অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে বিরোধীরা আসলে কী প্রমাণ করতে চাচ্ছে, তাও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার।
তারা অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোয় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ছক তৈরি করছে, মানুষের মৌলিক অধিকারের জায়গাগুলো সংকুচিত করতে চাইছে, মানুষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে মানুষের মন যে জয় করা যায় না এটা কি তারা আসলে বুঝতে পারছে না, স্বাভাবিকভাবে এই প্রশ্ন আসতেই পারে।
তবে মূল কথা হচ্ছে, তাদের কাছে সাধারণ মানুষ গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাষ্ট্রকে কীভাবে ধ্বংস করা যায়, মানুষের স্বাধীনতা হরণ করে বাইরের শক্তিকে সহায়তা করা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে আরও কিছু বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা হলো ট্রেন লাইন কেটে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করাসহ ধ্বংসযজ্ঞের অপরাজনীতির কৌশলকে উৎসাহিত করা ও জনমনে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে মানুষের মনস্তত্বকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করা।
সাধারণ মানুষ দেখছে, কত নির্মম এই ঘটনাগুলো। একজন মা তার সন্তানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আগুন থেকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছে, কিন্তু দুজনেই পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। যখন মর্গে তাদের অঙ্গার হওয়া লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তখন মমতাময়ী মায়ের আদরমাখা শক্ত হাত থেকে সন্তানকে আলাদা করতে গিয়ে যে মর্মস্পর্শী আবহ তৈরি হয়েছে তা সাধারণ মানুষকে এই বার্তা দিচ্ছে, এসব বিরোধীরা সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে হলেও তাদের নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে চায় ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র সফল করে চায়।
সাধারণ জনগণ এখন রাজনীতি অনেক ভালো করে বুঝে, বিগত বছরগুলোয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দৃশ্যমান যে উন্নয়নগুলো হয়েছে, তাতে কেবল মানুষের জীবনযাত্রা সহজতর হয়নি, তার সাথে সাথে মানুষের জীবনমানেরও উন্নয়ন ঘটেছে। যার ইতিবাচক প্রভাব সরাসরি অর্থনীতিতে গিয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই বিরোধী শক্তি যখন বুঝতে পেরেছে তাদের সাথে সাধারণ মানুষ নেই, তখন তারা নিজেদের শক্তির ওপর দাঁড়াতে না পেরে বাইরের শক্তির দাসত্ব শিকার করে নিয়েছে।
তাদের লক্ষ্য নির্বাচন নয়, কারণ তারা জানে মানুষ এখন অনেক বেশি রাজনীতি সচেতন, নির্বাচনে গেলে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। এমন চিন্তা থেকে তারা নির্বাচনেও যায়নি। মানুষ আর রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির পাতা ফাঁদে পা দিতে চায় না, বরং উন্নয়ন ও অগ্রগতির সাথে থাকতে চায়।
বাংলাদেশের মানুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে মহান স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তার উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনভাবে নিজেদের গড়ে তোলা, স্বাধীনভাবে নিজেদের চিন্তার প্রসার ঘটিয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়নে নিজেদের সম্পৃক্ত করা, আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়ানো।
এই বিরোধী শক্তিরা বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে যে ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল, কালক্রমে তার শাখা-প্রশাখা বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বারবার রুখে দাঁড়াচ্ছে, ফলে বিরোধী অপশক্তি হালে পানি পাচ্ছে। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে তারা ক্রমাগত, এর সাথে জনগণের তোপের মুখে পড়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে তাদের ষড়যন্ত্র, হিংসা ও মানুষ পোড়ানোর রাজনীতি।
লেখক: শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট ও লেখক
সারাবাংলা/আইই