Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভোট দেওয়া সামাজিক দায়িত্ব, সবাইকে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে

ড. এম. এম. মাহবুব আলম
২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:২৪

প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে বিশ্বে প্রথম গণতন্ত্র সৃষ্টি হয় গ্রিসের ছোট একটি শহর-রাষ্ট্র এথেন্সে, যেখানে প্রতিটি মুক্ত নাগরিককে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে শহর-রাষ্ট্রের সরকার পরিচালনায় সরাসরি অংশগ্রহণের অধিকার দেওয়া হয়। সাধারণভাবে এ ঘটনাকেই গণতন্ত্রের প্রথম উন্মেষ হিসেবে গণ্য করা হয়, যাকে পরে ডেমক্রেশিয়া বা জনগণের শক্তি থেকে ডেমোক্রেসি বা জনগণের শাসন বা গণতন্ত্র হিসেবে নামকরণ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

১৮৬৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন তার এক ভাষণে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “Government of the people, by the people, for the people”। সুতরাং, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে।

একজন নাগরিক হিসেবে সরকারের গৃহীত কর্মসূচির সুবিধা পাওয়ার যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি গণতন্ত্র সুসংহত রাখতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক।

গণতন্ত্র বলতে কোনো জাতিরাষ্ট্রের (অথবা কোনো সংগঠনের) এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। গণতন্ত্রে আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ রয়েছে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে।
যুক্তরাজ্যকে আধুনিক গণতন্ত্রের সূতিকাগার ও সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্ম ভূমি বলা হয়। যুক্তরাজ্য ও ভারতের শাসন ব্যবস্থার অনুরূপ বাংলাদেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। এ শাসন ব্যবস্থায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করে শাসনকার্য পরিচালনা করা হয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাজ্য ও ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশে একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাই, দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রকে আরও সুসংহত করতে সকল সচেতন ভোটারগণের উচিৎ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নাগরিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করা।

সঠিক ভোটাধিকার প্রয়োগ একটি জাতি বা রাষ্ট্রের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসন-শোষণে নিষ্পেষিত বাংলার জনগণ প্রথম ভোটাধিকারের সুযোগ পায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে যখন এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়।  ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ৩১৩টি (সংরক্ষিত ১৩টিসহ) আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টি (সংরক্ষিত ১০টিসহ) আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে জয়লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের ষড়যন্ত্রের কারণে সে নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে সমগ্র পাকিস্তানকে শাসন করতে না পারলেও একটি সফল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার জনগণকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন। গণতন্ত্র তথা স্বাধীনতার জন্য জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্যই তা সম্ভব হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে বিনির্মাণ করে সোনার বাংলা গড়তে নিরলসভাবে কাজ করছিলেন ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রে একদল পথভ্রষ্ট সেনা কর্মকর্তা জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে, স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদ বিনা ভোটে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে উন্নয়নে বিভিন্ন চমক দেখানোর চেষ্টা করলেও রাজনৈতিক দক্ষতা ও দূরদর্শিতা না থাকায় তাদের শাসনকাল দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

একইভাবে, ১৯৯১ ও ২০০৭ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নামে বিভিন্ন মিথ্যা ধর্মীয় অপ্রচার চালিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়া যথাক্রমে ১৯৯১-১৯৯৫ এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে সরকার পরিচালনা করলেও পর্যাপ্ত রাজনৈতিক দক্ষতা, দূরদর্শিতা ও উন্নয়ন দর্শন না থাকায় দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬, ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন থেকে হেনরি কিসিঞ্জার এর তলাবিহীন ঝুড়িকে পৃথিবীর অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত করে রূপকল্প-২০২১ (ডিজিটাল ও উন্নয়নশীল দেশ) বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের রুল মডেলে পরিণত করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো এখন বাংলাদেশকে ইরাক-লিবিয়ার মতো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। তাই, একজন সচেতন ভোটার হিসেবে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আপনি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনকে অর্থবহ করবেন নাকি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়িত করে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিবেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ২০ বছরে দেশের অবকাঠামোগত ও আর্থ-সামাজিক ব্যাপক উন্নয়ন করেছে অথবা উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রেখেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-পদ্মা সেতু নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, কক্সবাজারে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ, যমুনা নদীর উপর দিয়ে রেল সেতু নির্মাণ, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে রেল লাইন সম্প্রসারণ, ঢাকায় মেট্রোরেল স্থাপন, বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ, জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, অসংখ্য স্কুল-কলেজ রাষ্ট্রীয়করণ, দেশব্যাপী অসংখ্য ফ্লাইওভার ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পাকা রাস্তা তৈরি, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, সামাজিক সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান, গৃহহীনদের জমিসহ ঘর প্রদান, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য উপ-বৃত্তি প্রদান, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ ইত্যাদি।

বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আপনি যদি এসব উন্নয়ন কর্মসূচির সুফল ভোগ করে থাকেন তাহলে আপনার নৈতিক এবং সামাজিক দায়িত্ব হবে সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করা।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ১১টি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছে, যার স্লোগান হলো— স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা-যান্ত্রিকীকরণ-প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পের প্রসার, আর্থিকখাতে আরও শৃঙ্খলা বৃদ্ধি করা, নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রসার, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সাম্প্রদায়িকতা-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ রোধ করা, সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।

ইশতেহারে উল্লেখিত অগ্রাধিকার খাতগুলো অত্যন্ত সুপরিকল্পিত, সময়োপযোগী ও মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

তাহলে, আসুন, আমরা দেশের অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখতে এবং পশ্চিমা ষড়যন্ত্রকারীদের যোগ্য জবাব দিতে আগামী ৭ জানুয়ারি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত ও উন্নয়নকে টেকসই করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করি।

 লেখক: অধ্যাপক, মৎস্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর