Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার ইশতেহার

অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৮

বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক আদর্শের আলোকে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশে আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৪-এ অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে “নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪” ঘোষণা করেছে।

এই ইশতেহারে জাতীয় জীবনের ১১টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের প্রত্যয় ব্যক্ত করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সাথে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করা হবে। তিনি নির্বাচনী ইশতেহারে দ্বিধাহীন ভাষায় উল্লেখ করেন যে, সকল ধর্ম, বর্ণ এবং পেশার মানুষের আবাসভূমি বাংলাদেশ হবে ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ’।

অসাম্প্রদায়িক চেতনা হচ্ছে এক অনন্য মূল্যবোধ, মানবিক দর্শন, দৃঢ় বিশ্বাস এবং সম্প্রীতির সংস্কৃতি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং পেশা নির্বিশেষে এ চেতনার মূলভিত্তি হচ্ছে সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।

প্রাচীন কাল থেকে বঙ্গ জনপদটি স্বকীয়। ভৌগলিক অবস্থান ও ভূ-প্রকৃতি বাংলাকে একটি নিজস্ব সত্তা দিয়েছে যা বাঙালিকে একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ও ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনে প্রেরণা জুগিয়েছে এবং বলিয়ান করেছে। ইতিহাসের পথ পরিক্রমায় বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতির মিথষ্ক্রিয়ার ফলে এক মেলবন্ধনের ভিত্তি রচিত হয়েছে।
এ মেলবন্ধন ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক। আর্য থেকে মোঘলসহ নানা জাতির গোষ্ঠীর সংস্পর্শে আসার পরও বাঙালি জাতি তার স্বকীয়তা বজায় রেখে অসাম্প্রদায়িক চেতনার জয় গানের মাধ্যমে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্দনা করেছে, যা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গভীরভাবে অনুধাবন করে ইতিহাসের এই নির্মোহ সত্যকে আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

স্বাধিকার, স্বাধীনতার আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে রয়েছে বাঙালির দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ, দেশ প্রেমের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, এটি কোনো তাৎক্ষণিক ঘটনার ফল নয়। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদান অসামান্য; বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের দীর্ঘ সংগ্রামের প্রেক্ষাপট বাঙালির জন্যে এক মহৎ ও গৌরবময় অহংকার। কিন্তু বাঙালির এই বিশাল অর্জনের পথে দীর্ঘদিনের প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা-যা একরৈখিক (Singular) এবং সাম্প্রদায়িক বিষময় অপশক্তি। এই অপশক্তি সকল ধর্ম, বর্ণ, ভাষিক জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও পেশার মানুষের সম্মিলনে বহুত্ববাদী (Plural) সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বড় অন্তরায়। এই অপশক্তি অশুভ শক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। তাই এই অপশক্তি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে ধ্বংসের পথে পরিচালিত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত থাকে।

সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের মাঝে উগ্র, মৌলবাদী, পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর মানসিকতার জন্ম দেয়। ফলশ্রুতিতে সমাজ ও রাষ্ট্র বিপন্ন হয় এবং বাধাগ্রস্ত হয় জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন এবং অগ্রগতি। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তাদের রক্ষণশীল ও গোঁড়া বিশ্বাস (ধর্মীয়সহ), কায়েমি স্বার্থ, দলগত উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্য অর্জন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য সমাজে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিসহ গণহত্যার মত মানবতা বিরোধী জঘন্য অপরাধ সংঘটনে দ্বিধাবোধ করে না।

এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ হচ্ছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জামায়াত, শিবির, আলবদর, রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি, যারা স্বৈরতান্ত্রিক ও পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম নারকীয় গণহত্যা সংগঠিত করে। তাই তারা ৩০ লক্ষ মুক্তিকামী বাঙালি ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হত্যা এবং ৩ লক্ষ্যের অধিক মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ঘটাতে সামান্যতম কুণ্ঠাবোধ করেনি।

সাম্প্রদায়িকতার বিপরীতে অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্ম ও বিকাশ। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক শক্তির উত্তরণ ও অগ্রযাত্রা। অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলভিত্তি হচ্ছে ধর্ম, বর্ণ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও পেশাজীবীদের সমন্বয়ে বহুত্ববাদী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন এবং রাষ্ট্র পরিচালনা।

অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিশ্বাস করে রাষ্ট্র সবার, ধর্ম যার যার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির সহস্র বছরের অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক ও শ্রেষ্ঠ বাহক। তাইতো দেখতে পাওয়া যায় যে, ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য প্রণীত ও গৃহীত সংবিধানের চারটি মূলভিত্তি রচনায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূল্যবোধ গভীরভাবে ধারণ করা হয়েছিল।

পরবর্তীকালে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সংবিধানের দুটি ভিত্তি ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শীর্ষক চেতনা ধ্বংস করে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর জন্য বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এই ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি ভাবধারায় বাংলাদেশকে পরিচালিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিনাশ ঘটানো।

বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক ভাবধারায় বাংলাদেশ পরিচালিত হবার কারণে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির অপ-প্রয়াস অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে কিন্তু থেমে যায়নি। তাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর নির্বাচনে ইশতেহারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট অঙ্গীকার দেশের সকল নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, জীবনমান উন্নয়ন, রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের প্রাধান্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাসমুক্ত সমাজগঠন ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের আলোকে সকলের জন্য “অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ” গড়া।

লেখক: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, সিনেট সদস্য ও সদ্য সাবেক প্রক্টর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার ইশতেহার মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর