Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফিরে দেখা ২০২৩: ব্যাংকিং খাত

ড. মিহির কুমার রায়
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:২৭

ডলার-সংকটের মধ্য দিয়েই চলতি বছরের শুরুটা হয়েছিল এবং বছরটা শেষ হয়ে এলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি কিংবা সংকট কাটেনি। ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম বছরের শুরুতে ছিল ১০৩ টাকা, যা বেড়ে এখন হয়েছে ১১০ টাকা। ডলারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার তারল্য সংকটও। মাঝে আর্থিক সংকট মেটাতে দাতা হয়ে আসা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ ব্যাংক খাতে সংস্কারের চাপ তৈরি করেছে। এতে সুদহারের ছয়-নয় নীতি থেকে সরে কিছুটা বাজারমুখী ব্যবস্থায় গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ডলারের দামও বাজারভিত্তিক করার চেষ্টা করছে। বছরজুড়ে শরিয়াভিত্তিক ও প্রচলিত ধারার কিছু ব্যাংক ছিল লাগামছাড়া। শেষ সময়ে এসে অবশ্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের পরামর্শে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে অন্য ব্যাংকগুলোর বিষয়ে এখনো নির্বিকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নতুন বছরে পুরো ব্যাংক খএখন আসা যাকাত নিয়মের মধ্যে না ফিরলে বড় ঝুঁকি দেখছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিজ্ঞাপন

এখন আসাযাক খাতওয়ারী বিশ্লেষনে যেমন এক: ডলার ও রিজার্ভ-সংকট যা ২০২২ সালের মার্চে শুরু হওয়া ডলার-সংকট চলতি বছরেও পুরোপুরি দেখা গেছে। তবে চলতি বছরে আগের মতো ডলারের দাম ধরে না রেখে ধীরে ধীরে তা বাজারভিত্তিক করার দিকে নেওয়া হয়েছে। এতে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ১১০ টাকা হলেও ব্যাংকগুলো নিজেরাই ডলার কিনছে ১২২-১২৩ টাকা দামে। ফলে এর চেয়ে বেশি দামে আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এদিকে বছর জুড়েই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত ধরে রাখা নিয়ে চাপে ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ, আইএমএফের ঋণের শর্ত ছিল, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে অন্তত ২৫ .৩২ বিলিয়ন ডলারের নেট রিজার্ভ থাকতে হবে। তবে তাতে সফল হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ, সারা বছরই প্রতি মাসে গড়ে অন্তত এক বিলিয়ন ডলার বিক্রি করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। তাতে নেট রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি আছে । গত ১২ ডিসেম্বর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দেয়ার সময় রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্তও কমিয়ে দিয়েছিল আইএমএফ। নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে এ বছর শেষে বাংলাদেশকে এখন ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হবে। এ শর্ত পূরণ করতে গত কয়েক দিন ধরে বাজার থেকে ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে শেষ পর্যন্ত বাজার থেকে নিট কত ডলার কেনা হয়েছে, সে তথ্য চূড়ান্ত করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী (বিপিএম৬) দেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। ২৭ ডিসেম্বর রিজার্ভ বেড়ে ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয়ত: উচ্চ সুদে সরকারের ঋণ যা দ্রব্যমূল্যের উচ্চ দাম ও টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়ার কারণে সারা বছরই মূল্যস্ফীতি ছিল বাড়তি। এ জন্য চলতি বছরের মাঝামাঝিতে এসে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে টাকা ধার করা বাড়িয়ে দেয়। এতে সরকারের টাকা ধারের সুদহার বেড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এদিকে ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আমানতকারীরা সরকারি ট্রেজারিতে বিনিয়োগ করছে। ফলে ব্যাংকগুলোর আমানতে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ঋণে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১৪ শতাংশে উঠেছে। এতে ব্যাংকগুলো তারল্যসংকটে পড়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। গত জুলাই থেকে ব্যাংকঋণের সুদের হারের নতুন নিয়ম চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ কারণে ব্যাংকগুলোও এখন উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করতে পারছে; বছরজুড়ে সংকটে পাঁচ ব্যাংক যেখানে সারা বছর শরিয়াভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকে তারল্যসংকট দেখা গেছে। সংকটে থাকা পাঁচ ব্যাংক হলো ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গে¬াবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। সব কটি ব্যাংকই চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে থাকা চলতি হিসাবে এসব ব্যাংকের ঘাটতি ছিল। এসব ব্যাংকের আমানত বাড়লেও তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে থাকা চলতি হিসাবে জমা করেনি। বেনামি ঋণ ও ঋণ অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য ব্যাংকে যে সমস্যা হয়েছে, তা সমাধানযোগ্য। তবে এসব ব্যাংকে যে ক্ষত হয়েছে, তার প্রভাব পড়ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনেও।

তৃতীয়ত: খেলাপি ঋণ লাগামছাড়া যা বছরজুড়ে দেখা যায় ।দেশের ব্যাংক খাতে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা, যা এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তাতে বোঝা যায়, গত ১৫ বছরে খেলাপি ঋণ প্রায় ৭ গুণ বেড়েছে। খেলাপি ঋণ কমাতে নানা লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হলেও তাতে তেমন সাড়া মিলছে না, বরং নতুন নতুন ঋণ খেলাপির ঝুঁকিতে পড়ছে।

চতুর্থত: কলমানি সুদের হার যা ১২ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে । কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ওভার নাইট একদিনের জন্য এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে নেয়া ধারের সুদহার ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ .৭৫ শতাংশে পৌঁছেছে। আর ৩২ দিন মেয়াদি সুদহার গিয়ে উঠেছে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশে, যা এক বছর আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। উচ্চসুদ ও তীব্র চাহিদা সত্ত্বেও প্রত্যাশা অনুযায়ী কলমানি বাজারে টাকা পাওয়া যায়নি। এ কারণে বেশির ভাগ ব্যাংক রেপো, স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এএলএস) ও লিকুইডিটি সাপোর্ট সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। কলমানি বাজারে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট লেনদেন ছিল ৪ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। একই দিন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকগুলো ধার করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এর আগের দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, কলমানি বাজারে গতকাল মোট ৯৬টি ডিলের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন সুদহার ছিল ৭ .৭৫ শতাংশ ও সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১২.৫০ শতাংশ। এসব লেনদেনে একদিন মেয়াদি ধারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে ১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আর ৩২ দিন মেয়াদি ধারে সর্বোচ্চ সুদহার উঠেছিল ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ, লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি টাকা। চারদিন মেয়াদি অর্থ লেনদেন হয়েছে ৪৪০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। পাঁচদিন মেয়াদি ৪০১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে। ছয়দিন মেয়াদি ৩৯০ কোটি টাকা সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে লেনদেন হয়েছে। এছাড়া সাতদিন মেয়াদি ২৮০ কোটি টাকার সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। ১১ দিন মেয়াদি ৪০ কোটি টাকা সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে লেনদেন হয়েছে। ১৩ দিন মেয়াদে ১৩ কোটি টাকা লেনদেনে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ১৪ দিন মেয়াদি ধারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ। এক্ষেত্রে লেনদেন হয়েছে ৭০৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ১৭ দিন মেয়াদি ধারে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং লেনদেন হয়েছে ২৩৫ কোটি টাকা। ২৮ দিন মেয়াদি ধারে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ সুদে ২৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়। আর ৩১ দিন মেয়াদি ধারের ক্ষেত্রে গতকাল সর্বোচ্চ সুদহার ওঠে ১১ দশমিক ৪০ শতাংশে। এক্ষেত্রে লেনদেন হয়েছে ৯০ কোটি টাকা।

একটি দেশের অর্থনীতির মাপকাঠি বলতে আমরা কী বুঝি ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ, বিনিয়োগ, জিডিপির গ্রোথ রেট, প্রাইস লেভেল মুভমেন্ট এবং এক্সচেঞ্জ রেট। দেশের অর্থনীতির এ কয়েকটা বিষয় গত এক বছর থেকে দেশের অনুকুলে নয়। যেমন, এক্সচেঞ্জ রেটের ক্ষেত্রে টাকার মূল্য বেশি হারিয়েছে, ইনফ্লেশান যেটা সাড়ে ৫ শতাংশ ছিল, সেটা এখন ১০ শতাংশে পৌঁছে গেছে, জিডিপি গ্রোথ রেট, যেটা সাড়ে ৭-এ ছিল সেটা ৫-এর মধ্যে নেমে এসেছে, বিনিয়োগ যেটা ছিল ২৯-৩০ শতাংশ, সেটা এখন ২২ শতাংশের দিকে নেমে এসেছে দেশের অর্থনীতিকে একটা নেগেটিভ সংকেত দিচ্ছে। গত তিন বছরের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে কম এলসি খোলা হয়েছে। ফলে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আনা যাচ্ছে না বা আনা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। যার ফলে এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে;

পঞ্চমত: আস্তার সংকটে নিয়ে ভোগছে দেশের ব্যাংকিং খাত। ব্যাংকে টাকা রেখে ঠকছেন আমানতকারীরা, ব্যাংক যে হারে সুদ দিচ্ছে, তার তুলনায় মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি, এতে প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে এবং এখন ব্যাংকে অর্থ রাখা মানেই লোকসান। এমনিতেই ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা কম এবং এ অবস্থায় আমানত রেখে ঠকলে মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা আরও কমে যাবে। অর্থনীতির তত্ত্ব অনুযায়ী, মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় সুদের হার কম হলে তখন প্রকৃত সুদের হার ঋণাত্মক হয় যা এখন হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৯.১০%। আর সে সময়ে দেশের ব্যাংক খাতের আমানতের গড় ভারিত (ওয়েটেড এভারেজ) সুদহার ছিল ৪.০৯ শতাংশ। ফলে একজন আমানতকারীর প্রকৃত সুদহার ছিল ঋণাত্মক ৫.০১ শতাংশ । এর অর্থ হচ্ছে, ব্যাংকে ১০০ টাকা রাখলে এক বছর পর আমানতকারী প্রকৃতপক্ষে পাচ্ছেন ৯৪ টাকা ৯৯ পয়সা। অর্থাৎ প্রকৃত সুদের হার কমে গিয়ে বছর শেষে তাঁর মূল আমানতও ৫ টাকা ১ পয়সা খেয়ে ফেলছে মূল্যস্ফীতি। তাছাঢ়াও একজন আমানতকারীর সুদ আয়ের ওপর দিতে হয় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর। ফলে প্রকৃত আয় আসলে আরও কমে যায়। বিশ্বব্যাপী একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে সংকটের সময় সাধারণত মানুষ ব্যাংকে অর্থ রাখে না, বরং জমি বা বাড়ির মতো অনুৎপাদনশীল খাতে তারা ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। এতে অর্থনীতিতে সংকট আরও বাড়ে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, মানুষকে সঞ্চয়ী করতে হলে প্রণোদনা দিতে হবে। খারাপ সময়ে এই প্রণোদনা দেওয়া আরও জরুরি অথচ এখন ব্যাংক থেকে দূরে রাখা হচ্ছে আমানতকারীদের, সুদ দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতির তুলনায় কম হারে, সঞ্চয় করতে নিরুৎসাহিত হওয়ার অর্থই হচ্ছে অর্থনীতিতে বিনিয়োগযোগ্য মূলধন কমে যাওয়া। আর আমানত কমলে ব্যাংকের তারল্যসংকট বৃদ্ধি পাবে, তাতে উৎপাদন বা ব্যবসায়িক কর্মকান্ডেও ভাটা পড়ে, মন্দাও দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাই অর্থমন্ত্রনালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশয় গুলো বিবেচনায় আনবে । এ ব্যাপারে টেকসই ব্যাংকিং নীতিমালা বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ বিশেষজ্ঞদেরও রয়েছে।

সর্বশেষে বলা যায় সময়টি চলছে নির্বাচনের বছর এবং তিনশটি আসনে দুহাজারেরও বেশী প্রার্থী সারাদেদেশে নির্বাচনী প্রচারনায় নেমেছে যা অত্যন্ত ব্যয় বহুল যদিও নির্বাচন কমিশন একটি সিলিং ধার্য্য করে দিয়েছে ব্যয় প্রতি প্রার্থী বাবদ ২৫ লাখ টাকার উর্ধে নয়। অবশ্য ভোটের জন্য প্রার্থীরা কত টাকা খরচ করছেন তা নিরূপণের যথার্থ ব্যবস্থা না থাকায়, বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, আগামী নির্বাচনের জন্য ব্যয় হতে পারে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আসন্ন নির্বাচনের ৩০০ আসনে ভোটার রয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৯৭ লাখ। দ্বাদশ নির্বাচনের জন্য সারাদেশে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ নির্ধারন করা শেষ হয়েছে। এখন হয়তো কিছু সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে। এসব ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী কাজ পরিচালনা করতে বেশ কয়েক ধরনের সরঞ্জাম কেনা হয়। যেমন- ব্যালট পেপার, স্ট্যাম্প প্যাড, মনোনয়ন ফরম, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, অমোচনীয় কালির দাগ, চটের ব্যাগ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, বাক্সের লক ইত্যাদি। এছাড়াও প্রার্থীর ন্যূনতম ব্যয়, ইভিএম প্রকল্প, নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা সংস্থার ব্যয়সহ নানান আনুষঙ্গিক খাতে নির্বচনী বাজেট বরাদ্দ থাকে। এখন ব্যাংক থেকে টাকার উত্তোলন ক্রমাগতভাবে বাড়ছে যে ধারা নির্বাচন সমাপ্ত হওয়ার পরও চলবে যা একেবারেই অনুৎপাদনশীল বাহুল্য ব্যয়। নির্বাচন কেন্দ্রীক ব্যবসা বানিজ্য এখন জমজমাট। নির্বাচনকালে প্রিন্টিং, আপ্যায়ন, মাইকিং, যানবাহনসহ সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারে বিপুল পরিমাণ কালো টাকার ব্যবহার বাড়ে। আর্থিক এসব লেনদেনের কারণে চাঙ্গাও হয় গ্রামীণ অর্থনীতি। বৈশ্বিক মন্দা এবং দেশে ডলারের তীব্র সংকটে অর্থনীতি এমনিতেই নাজুক। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতিতে ধস নামার আশঙ্কা করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা।

লেখক: গবেষক ও অর্থনীতিবিদ

সারাবাংলা/এসবিডিই

ড. মিহির কুমার রায় ফিরে দেখা ২০২৩: ব্যাংকিং খাত মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর