দুই মিনিটের নুডলস কালচার আর আমাদের প্রজন্ম
১১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৩৭
“আসুন গ্রামীণফোন ব্যবহারকারী সবাই ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স নিয়ে সিম বন্ধ করে দেই”- এই শিরোনামের পাবলিক ইভেন্টটির সোস্যাল মিডিয়াতে তীব্র রমরমা দেখা যাচ্ছে গত দু-দিন যাবত। আমার আশেপাশে সকল মানুষকে দেখছি এ সবার খুব আগ্রহ, সবাই হুমড়ি খাচ্ছে এই বিষয়ে বিনম্র মজা উপভোগ করতে। তবে আসলে সত্যি সত্যিই এই কাজ করবে ক’জন? কিছু মানুষ নিশ্চয় করেছে আগে এবং করবে এটা নিশ্চিত বলা চলে। তাই আজকের আলাপটা একটু গভীর, একটু খেয়াল করেন তাহলেই দেখতে পাবেন।
আমরা জাতিগতভাবে কতটা অপরাধ প্রবন এবং প্রতিশোধ পরায়ন এটা তার একটা তার একটি ডাটা যা, লিখিত প্রমান প্রতিচ্ছবি। ‘কিউট কমেডি’ হিসেবে চালিয়ে নিচ্ছি মুচকি হেসে হেসে, তবে ভুলে যাচ্ছি ভুল চর্চায় অভ্যস্ত হচ্ছি ও হতে শেখাচ্ছি।
একজন চিটার তাই সবাই মিলে দলগত ভাবে চিটিং করে মজা লুটতে খুব ভালো লাগবে-এই একই মজা থেকে আমরা রাস্তায় এক মাকে পিটিয়ে মেরেছিলাম! পরিসংখ্যানে এমন অনেক নোংরা, সহিংস নজির আছে আমাদের। আপাতত সবগুলো ঘটনার ঘ না ঘেঁটে এই আদ্ধাত্মিক আলাপটা সারি।
প্রতিদিনের নানান ঘাত-প্রতিঘাতের পালটা জবাব দিতে গিয়ে আমরা ছোট ছোট অপরাধকে সাক্ষাত ন্যায় ভেবে ফেলছি না তো? যেটাকে আমরা জাস্টিস বা সেল্ফ জাস্টিস ভেবে নিচ্ছি সেটা আসলেই কি তাই?
নানান ছোট ছোট ঘটনা থেকেই আমরা সাহস পাই বড় বড় ঘটনা প্রবাহে প্রবাহিত হবার। অপরাধ বিশ্লেষণ করলেও কিন্তু তাই মেলে। সব অপরাধের শুরু ক্ষুদ্র এবং নিজ ঘর থেকেই। অপরাধ সহা ও রহা ভঙ্গীতে ভাবতে ভাবতে সবই তখন সঠিক যুক্তি সংগত লাগে তাদের, কারন সঠিক ভাবে, ভাবার অভ্যাসটাই আর নেই। অপরাধ প্রবন ভাবে ভাবতে ভাবতে দলগতভাবে আমরা অপরাধশীল মস্তিস্কের অধিকারী হচ্ছি অথচ আমাদের কারো বিকার নেই। কেউ সঠিক কাজটি করলে তখন তাকে মহান বলে মনে হয় আমাদের, অথচ এটা মানবিক কর্তব্য। মানবসভ্যতা দিনে দিনে যে আংগিকে এই দ্বাবিংশ শতাব্দিতে এসেছে তার ধারা হয়তো পাল্টাচ্ছে আবার। বুনোয়েলের মতে প্রকৃতি থেকে মানুষের সভ্য হয়ে সভ্যতার অভ্যাস শুরু করা খুব দরকারি ছিলো এবং তাই উচিত।’ আর তাছাড়া আপনি মানবিক হবেন কিভাবে?
যখন আপনি মানবিকতার অলংকার গুলোকে বাদ দিয়ে – অমানবিকতার অলংকার গুলোকে একে একে ধারন ও পোশন করেন তখন তাতে আপনার নিজ স্বত্বা ও আপনার চারপাশ কতদূর খর্ব হয় তা আমরা কতটা জানি বা জানতে চাচ্ছি?
কিছুদিন পরপরই আমরা সামাজিক মাধ্যম গুলোতে এইরকম নানান উন্মুক্ত অনুষ্ঠানের খসড়া দেখি, কিছু স্লেচ্ছ হাসি মাখানো শব্দ আর অপমান সূচক ব্যাঙ্গ। কাতুকুতু ভঙ্গীমায় পাব্লিক ইভেন্টের ছড়াছড়ি করছি আর ভাবছি অনেক বিপ্লব হয়ে যাচ্ছে চারদিকে। বিপ্লবের নামে এই আহাম্মকি করে এসে তারপর এসে আমরা শিল্প বলছি।
আমরা জানিনা। আমরা বুঝতেই পারিনা এই ছোট ছোট বালুকনা, বিন্দুবিন্দু জলের মতো আকারের অপরাধগুলো একদিন গড়ে তোলে পাপের মহাদেশ আর অতল সাগরের মত অন্ধকার জীবন। কেউ বোঝার আগেই অন্ধকারে তলিয়ে যায় কত জীবন। তাদের ঠেলে দেবার পেছনে আমাদের সবার হাত আছে। আর এই জানা সত্য বারবার ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের সবার আগে স্বীকার করতে শেখা জরুরী।
কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু যখন ঘটে তখন সবার আগে জানা দরকার কে, কেন, কোথায়, কিভাবে? তাহলেই তার সঠিক সমঝোতা ও সমাধান সম্ভব।
মানবিকতা চর্চা এবং দলগতভাবে সঠিক মূল্যবোধের অভ্যাস ছাড়া সমাজ সংস্কার অসম্ভব। প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে সঠিক ঠিক কোনটি আর সঠিক ঠিক না কোনটি। না জানলে সে বিষয়ক জ্ঞ্যান বা বর্জ্য সরূপ।
নিজের বিচার নিজে করে নেবার মত সুপ্রাচীন ভুলে যদি আবার গা ভাসাতে হয় তবে আর শিক্ষার কি দরকার ছিলো কিংবা আত্মসম্ভ্রম। এতো উচ্চশিক্ষার গর্ব আমাদের কিন্ত বার বার আমরা বারি খাচ্ছি আয়নায়, অন্তরালে।
আমরা গুরুকুল সভ্যতায় আর নেই, সেই যুগও শেষ। দুই মিনিটের নুড্যুল সভ্যতায় আছি আমরা। আমাদের গুরু দরকার কিংবা শুধু শুরু।
শুরু সঠিক ভাবে ভাবার, সঠিক ভাবে শেখার এবং বিশ্বায়নের সঠিক সুযোগ নেবার।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
দুই মিনিটের নুডলস কালচার আর আমাদের প্রজন্ম মুক্তমত শিপ্রা দেবনাথ