Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও

রাকিবুল ইসলাম
১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৩৩

পৌষের শেষে এসে শীতে কাঁপছে সারাদেশ। জনপদে বইছে কনকনে বাতাস।রাতে বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। বিভিন্ন জেলায় বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। সঙ্গে রয়েছে ঘন কুয়াশাও। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

কুয়াশায় বিমানের ওঠানামা ও নদীতে ফেরি চলাচল ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ রাখার ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বিঘ্ন ঘটছে সড়কে যানবাহন চলাচলেও।

আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, শৈত্যপ্রবাহের বিস্তৃতি না থাকলেও সূর্যালোকের স্বল্পতায় তাপমাত্রা বাড়ছে না। ফলে শীতের অনুভূতি তীব্রতর হচ্ছে। আকাশে মেঘ আর ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের তীব্রতা ভূপৃষ্ঠে ছড়াতে পারছে না। এতে দিনের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধানও কমে গেছে। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমশীতল বাতাসের পরিমাণও বেড়েছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি। এজন্য বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। আগামী তিন দিন ভারী কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ অব্যাহত থাকবে। ফলে শীতের তীব্রতা বাড়বে। শক্তিশালী পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে আগামী সপ্তাহে ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে সারা দেশে। বৃষ্টির পর তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে আরেক দফা শৈত্যপ্রবাহের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে চলা শৈত্যপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় অসহায় দরিদ্র মানুষকেই। পুষ্টিহীন মানুষ সহজেই শীতে কাবু হয়ে পড়ে। তাছাড়া হিমেল শীতে বেশি ভোগে বয়স্ক ও শিশুরাও। শীতের তীব্রতায় বাড়ে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানিসহ শীতজনিত নানা রোগ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যেই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগীর ভিড় বাড়ার ও শিশু মৃত্যুর খবর গণমাধ্যম প্রকাশিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এই তীব্র শীতে বিপাকে পড়ছেন। অভিভাবকরাও রয়েছেন আতঙ্কে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই শৈত্যপ্রবাহের কদিন বন্ধ রাখা যায় কিনা সে বিষয়ে ভাবা দরকার সংশ্লিষ্টদের।

ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষ কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। কাজে বের হতে না পেরে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে পড়েছে চরম দুর্ভোগে।

এই কনকনে শীতে বস্তিতে, সড়কের পাশে, বাসস্ট্যান্ডে, রেল স্টেশনে, বাজার ঘাটে, ফুটপাথে অনেক অসহায় শীতবস্ত্রহীন মানুষকে শীতের কাঁপুনি নিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও পথশিশুদের কষ্টের কোন সীমা নেই। তাদের রাত কাটছে প্রায় নির্ঘুম অবস্থায় শীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে। হতদরিদ্র ছিন্নমূল মানুষেরা গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

একদিকে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতি অন্যদিকে হাড় কাঁপানো কনকনে শীত। এ যেন শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘাঁ।

গত কয়েক দিন হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে রাস্তায় থাকা কুকর বিড়ালের অবস্থাও নাজুক। কাহিল হয়ে পড়েছে পশুপাখিও। সাধারণ মানুষ তাদের গরু, ছাগল ও পশুপাখি নিয়ে পড়েছে চরম বিপাকে।

প্রতি বছর শীতের সময় সরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। কিন্তু এই সহায়তা যথেষ্ট নয়। সরকারের শুধু একার দায়িত্ব নয় এই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো।

মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও। মানুষ তো মানুষের জন্যই। সরকারের পাশাপাশি আমরা সবাই এগিয়ে এলে শীতার্তরা উপকৃত হবে।

সমাজের অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের সামান্য সহযোগিতা তাদের জীবনে এনে দিতে পারে এক টুকরো সুখ। কনকনে শীতে শীতার্ত মানুষের গায়ে শীতবস্ত্র জড়িয়ে তার মুখে হাসি ফোটানোর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে।আমরা চাইলেই এসকল অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি। হাসি ফোটাতে পারি তাদের মুখে।আমাদের উপার্জিত অর্থের সামান্য পরিমাণও যদি শীতার্ত অসহায়দের জন্য আমরা বরাদ্দ করি তাহলে সামান্য সে দান শীতার্তদের কষ্ট লাঘবে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। তাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ দলমত-নির্বিশেষে আসুন আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াই।

বিজ্ঞাপন

লেখক: সাংবাদিক

সারাবাংলা/এসবিডিই

মানুষ বড় কাঁদছে- তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও মুক্তমত রাকিবুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর