Sunday 17 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শীতে সতর্ক থাকুন নিপা ভাইরাস থেকে

শাকের-উল ইসলাম
১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:০৪

চারিদিকে ডেঙ্গুর উৎপাত। দিনদিন বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। সাথে ভাইরাল জ্বর তো রয়েছেই। এদিকে শীত আসার সাথে সাথেই ঝুঁকি বেড়েছে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার। বর্তমান সময়ে বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোরেরা নিপাহ ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। প্রকৃতিতে শীত বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন পিঠা-পুলির উৎসব শুরু হয়। এ উৎসবে খেঁজুরের রস অন্যতম প্রধান একটি উপকরণ। খেঁজুরের রসের সাথে ভাপাপিঠা যে স্বাদ আর যে আবেদন সৃষ্টি করে তা অতুলনীয়। আর এ খেঁজুরের রস সংগ্রহের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন না করলে মরণঘাতী ‘নিপা’ ভাইরাস মরণকামড় বসাতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি জুনোটিক রোগ। জুনোটিক রোগ হলো এমন ধরনের সংক্রামক রোগ- যা মূলত প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। এই রোগগুলো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী ও ছত্রাকের মতো ক্ষতিকারক জীবাণুর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়ে থাকে। নিপা ভাইরাসজনিত রোগটি ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে প্রথম দেখা যায়। মালয়েশিয়ার ‘সুঙ্গাই নিপাহ’ নামক গ্রামের নামানুসারে এ রোগের নামকরণ করা হয়। বিজ্ঞানীরা প্রধানত শূকর ও বাদুড়কে এ রোগের জন্য দায়ী করে থাকেন। সেই সময় এই রোগের ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে লক্ষ লক্ষ শূকরকে মেরে ফেলা হয়। নিপা ভাইরাস বাদুড় এবং শূকরের শরীর থেকেই মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তারপর মানুষ থেকে মানুষে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে যায়। সংক্রমিত পশু ও মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বিজ্ঞাপন

নিপা ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতাই এ রোগ ছড়ানোর প্রধান কারণ। এখনো পর্যন্ত এ ভাইরাস প্রতিরোধী কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয় নি। কেবলমাত্র উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। ফলে এর ভয়াবহতা এবং এর কারণে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুহার উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বিশেষজ্ঞদের মনে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ যেখানে বাংলাদেশে এই হার ৭১ শতাংশ। ২০২২-২৩ সালে দেশে এ রোগে আক্রান্ত ১৪ জনের মধ্যে ১০ জনই মৃত্যুবরণ করেন। খেঁজুরের কাঁচা রস খাওয়া থেকেই এ ভাইরাস প্রধানত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাছাড়াও বাদুড়ের মল বা লালা লেগে আছে এমন ফল খেলেও এ রোগ হতে পারে। বাদুড়ের আধ-খাওয়া ফল থেকেও ছড়াতে পারে এ রোগ।

বিজ্ঞাপন

নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৪ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে শরীরে জ্বর, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বমি, কাশি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই শরীরে এমন কোনো লক্ষণ দেখা দিলে সাবধান হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এ রোগের অন্য একটি প্রধান সমস্যা হলো- এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং শরীরে বিভ্রান্তি, কাঁপুনি ও খিঁচুনি হতে পারে। এমনকি মাথায় অনেক সময় পানি জমার আশঙ্কাও হয় যা অত্যন্ত প্রাণঘাতী।

আক্রান্ত রোগীর লালার আরটি পিসিআর টেস্টের মাধ্যমেই এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এরপরই চিকিৎসা শুরু করা যায়। তাই লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। যেহেতু এ রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয় নি। তাই মূলত লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা যেমন- জ্বর আসলে জ্বরের ওষুধ, বমি হলে বমির ওষুধ, শ্বাসকষ্ট হলে তার ওষুধ দেওয়া হয়। সাথে রোগীকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে এ রোগের ক্ষেত্রেও প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই সর্বোত্তম পন্থা। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, ফলমূল ভালো করে ধুয়ে খাওয়া, শূকর বা বাদুড়ের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, বাদুড়ের বাসা রয়েছে এমন গাছের কাছে না যাওয়া, ফল খাওয়ার সময় সাবধান থাকা, গাছে থাকা আধ-খাওয়া ফল না খাওয়া এবং কারো শরীরে উপরের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে তার থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি কাজ করলে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

মরণঘাতী নিপা ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক না থাকায় এটি দিনদিন চোখ রাঙাচ্ছে। এটি প্রতিরোধে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ রোগের প্রকোপ এবং মৃত্যুহার যেহেতু আমাদের দেশে বেশি তাই আমাদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রস সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিক্রির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানতে কড়াকড়ি এবং নিয়মিত তদারকি করতে হবে। সাধারণ মানুষের মাঝে এ রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার এবং প্রতিরোধের উপায়সমূহ তুলে ধরতে হবে। কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার যে প্রচলন তা বন্ধ করতে হবে। তবে রস দিয়ে গুড় তৈরিতে যেহেতু কোনো ঝুঁকি নেই এবং গুড়ের চাহিদাও অনেক তাই এ ব্যাপারে মানুষকে বেশি উৎসাহিত করতে হবে। সর্বোপরি আমরা সবাই একযোগে কাজ করলেই এ রোগ থেকে বাঁচা যাবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

মুক্তমত শাকের-উল ইসলাম শীতে সতর্ক থাকুন নিপা ভাইরাস থেকে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর