Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কালের গর্ভে ডুবতে চলেছে বেতনা নদী

শিশির ওয়াহিদ
২১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:১১

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত বেতনা নদীটি অন্যতম একটি প্রাচীন নদী। এ নদীটি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর, যশোর জেলার চৌগাছা, শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলা এবং সাতক্ষীরা জেলার তালা, কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর এবং আশাশুনি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত।

বেতনা নদীর উৎপত্তি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা সদরের ভৈরব নদ থেকে। প্রায় দেড়শো বছর পূর্বে বেতনা নদী ভৈরব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বেতনার উৎস মুখ মহেশপুর উপজেলা সদরে অবৈধ দখল দ্বারা বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের স্থায়ী স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। উৎপত্তি স্থল থেকে দক্ষিণে ভারতীয় সীমানা অতিক্রম করে পুনরায় বেতনা শার্শা উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আনুমানিক আটশো বছর পূর্বে ঐতিহাসিক কাটগড়া বাওড়ের উৎপত্তিও এই বেতনা নদী থেকে।

মহেশপুর উপজেলায় পলি ভরাটের কারণে বেতনা মারা গেছে, এছাড়া বহুদিন ধরে নদীর সিংহভাগ অংশ স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে বাঁধ দিয়ে খণ্ড-খণ্ড পুকুর/ঘের বানিয়ে মাছ চাষ করছে। বিশেষ করে মহেশপুর উপজেলার শ্রীরামপুর, নাটিমা, জাগুসা, যাদবপুর ও যাদবপুর-পুড়াপাড়া সড়কের মধ্যবর্তী রাজাপুর-বড়বাড়ী ও ভারত সীমান্তবর্তী গোপালপুর পর্যন্ত নদীর সমস্ত অংশ এখন প্রভাবশালীদের দখলে। বর্তমান হাল দেখলে কেউ বুঝতেই পারবেনা এটা একটা বৃহৎ নদী!

আমি ঐ এলাকার স্থানীয় বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। যখনই বেতনা নদী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তখন যেন তাদের চক্ষু চড়ক গাছে। তারা অনেকেই জানেনা ‘বেতনা একটা নদী।’ নদীর মাঝে বাঁধ দিয়ে পুকুর বানালেও গুগল ম্যাপে এখনো নদীটির চলার পথ সুস্পষ্ট চিহ্নিত করা যায়।

নদীটি মহেশপুরে কতগুলো বিল থেকে পানি নিয়ে ভারতে (পশ্চিমবঙ্গে) প্রবেশ করেছে। আবার যশোর জেলার শার্শা উপজেলার মধ্য দিয়ে পুনরায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে নাভারণ হয়ে সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ করেছে। এই নদী সাতক্ষীরা জেলায় মরিচ্চাপ নদীর সাথে মিলে খোলপেটুয়া নাম ধারণ করেছে। বেতনা নদী সুন্দরবন অংশে ‘অর্পণগাছিয়া নদী’ নামে পরিচিত। অতঃপর এই একই নদী ‘মালঞ্চ’ নামে পরিচিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এই নদীর অপর নাম কোদালিয়া (তবে বেতনা নামেই সমধিক পরিচিত)। ভারতের কিয়দংশ বাদে প্রায় সিংহভাগ অংশে বেতনা এখনো সপ্রাণে বয়ে চলেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে ঠিক তার বিপরীত চিত্র। ভোগ-দখলে নদীটা হারিয়েছে তার প্রাণ-যৌবন; সম্ভবত মৃতপ্রায় নদী বললেও ভুল হবেনা। বেতনা নদীর নামানুসারে ‘বেতনা এক্সপ্রেস’ নামে বেনাপোল-খুলনাগামী একটি ট্রেন আছে। বেতনা নামের ট্রেনটি ঠিকঠাক চললেও, প্রকৃত বেতনার অবস্থা খুবই নাজুক, তার আর চলার অবস্থা নেই। ভোগ দখলে একসময়ের প্রবহমান বেতনা এখন স্থিমিত হয়ে গিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় বেতনার নাম শুধু কাগজে-কলমে স্থাপনাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

বেতনা নদী রক্ষার্থে সাতক্ষীরাতে বেশ কয়েকবার মানববন্ধন হয়েছে, প্রশাসন বরাবর আবেদনও জমা হয়েছে। কিন্তু নদীটা যেখানে উৎপত্তি, সেই মহেশপুর অঞ্চলের সচেতন নাগরিকেরা নদী সম্পর্কে একেবারেই উদাসীন। পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও (পাউবো) নেই যেন কোনো দায়বদ্ধতা।

নদী আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ। ভবিষ্যত বন্যা থেকে রক্ষার্থে নদীর ভূমিকা ব্যপক ও বিস্তৃত। শুধু বন্যা থেকে নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রক্ষার্থে নদী রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃহৎ বেতনা নদী বাঁচাতে প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, সহযোগিতা এবং সচেতন নাগরিক সমাজের এগিয়ে আসাটা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

সারাবাংলা/এসবিডিই

কালের গর্ভে ডুবতে চলেছে বেতনা নদী মুক্তমত শিশির ওয়াহিদ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর