জলাতঙ্ক আতঙ্কের নাম হলেও চাই সচেতনতা
২১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:২১
জলাতঙ্ক- ভাইরাসজনিত একটি জুনোটিক রোগ। রেবিজ ভাইরাস নামক এক ধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাসের কারণেই এই রোগ হয়ে থাকে। এই রোগ সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী ও বন্য প্রাণীদের প্রথমে সংক্রমিত করে। মানুষ এই সংক্রমিত প্রাণীগুলির বা এদের লালার সংস্পর্শে আসলে বা এই প্রাণীগুলি যদি মানুষকে কামড়ায় অথবা আচড় দেয় তাহলে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। জলাতঙ্ক রোগ এন্টার্কটিকা ছাড়া প্রায় সব মহাদেশেই দেখা গেছে, বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশে।
সম্প্রতি এই রোগ ব্যাপক হারে বেড়েছে আমাদের দেশেও। দেশের প্রায় জায়গায় এই রোগের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গেলো কয়েকদিন আগেও চট্টগ্রাম নগরীর এক মসজিদের ইমামের মৃত্যুর খবর শুনা গেছে এই রোগে। উক্ত ইমামের মৃত্যুটি সচেতন মহলকে খুবই মর্মাহত করেছে। যদিও এই মৃত্যুটির ক্ষেত্রে অবহেলাকেও দোষছেন অনেকে।
বলতে গেলে জলাতঙ্ক রোগটির ক্ষেত্রে সাবধানতা আর সচেতনতার বিকল্প নেই। এ রোগটি থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই রোগটি সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা রাখা যেমন প্রয়োজন তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। এ রোগটি অত সহজেই বিস্তার লাভ করে না। তবে এতে কোনোমতেই অবহেলা করা যাবে না।
র্যাবিস ভাইরাস ঘটিত মারাত্মক এই রোগটিতে আমাদের দেশে বছরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। জলাতঙ্কের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার প্রায় শতভাগ। অর্থাৎ রোগলক্ষণ একবার প্রকাশ পেলে রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে; কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, বানর, বেঁজি, বাদুড় ইত্যাদি প্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হলে এবং আক্রান্ত উল্লেখিত প্রাণি মানুষকে কামড়ালে মানুষের এ রোগ হয়। এসব আক্রান্ত প্রাণির মুখের লালায় র্যাবিস ভাইরাস থাকে। এ লালা পুরোনো ক্ষতের বা দাঁত বসিয়ে দেওয়া ক্ষতের বা সামান্য আঁচড়ের মাধ্যমে রক্তের সংস্পর্শে এলে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টি হয়। আমাদের দেশে শতকরা ৯৫ ভাগ জলাতঙ্ক রোগ হয় কুকুরের কামড়ে।
বর্তমানে দেশে কুকুরের উৎপাত খুব বেশিহারে বেড়েছে। এর ফলে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধারাও এদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে ফজরের সময়ে কুকুরের হাত থেকে রেহায় পাচ্ছেনা মসজিদমুখী মুসল্লিও। এতে করে জনমানবে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক ভয় আর উৎকন্ঠা। সর্বদা আতংকে থাকছে দেশের সব জায়গার মানবগোষ্ঠী।
তবে এই রোগটি অত সহজে বিস্তার লাভ করে না। সাধারণত সন্দেহজনক প্রাণি কামড়ানোর ৯ থেকে ৯০ দিনের মাঝে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দেয়। মূলত এ রোগ প্রতিরোধের উপায় হলো টিকা নেওয়া। এই ভাইরাসের অনেক রকম টিকা আবিষ্কার হয়েছে তবে এর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ টিকা হলো হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন। মূলত আক্রান্ত হওয়ার পরে এই টিকা নেওয়াকে পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস বলা হয়।
কারো শরীরে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে উন্মত্ত বা পাগলামো আচরণ এবং মৌন আচরণ এ দুই ধরনের আচরণ দেখা দিতে পারে। অস্বাভাবিক আচরণে আক্রান্ত ব্যক্তির কথাবার্তা ও ভাবভঙ্গি হবে অস্বাভাবিক। সে উদ্দেশ্য ছাড়াই ছুটে বেড়াবে, ক্ষুধামন্দা হবে, বিকৃত আওয়াজ করবে, বিনা প্ররোচনায় অন্যকে কামড়াতে আসবে ইত্যাদি। অনেকক্ষেত্রে জলাতঙ্কে আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষাঘাত, শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়া, ক্ষতস্থানে অবশতা ও অসারতা অনুভূত হওয়া ইত্যাদি লক্ষণও প্রকাশ পেতে পারে। শরীরের শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ু ও মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়লে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট দেখা যায়।
তাই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই যথাযথ টিকা নিতে হবে। কোনো মতেই অবহেলা করা যাবে না। প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই রোগের মৃত্যু প্রায় শতাধিক। পাশাপাশি আক্রমণকারী প্রাণীর দিকে লক্ষ রাখতে হবে। আক্রমণের কিছুদিনের মাঝে প্রাণীটি মারা গেলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এসবিডিই