Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাড়িভাড়া বৃদ্ধি ও ভাড়াটিয়ার নাগরিক বিড়ম্বনা

অলোক আচার্য
২২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:৫০

বছর শেষ হলে ভাড়াটিয়ার কপালে চিন্তার ভাঁজ পরে। কারণ বছর বছর বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি বেশিরভাগক্ষেত্রেই একটি অলিখিত নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। অথচ বছর গেলেই আয় তো বাড়ছে না। বর্তমানে অনেক সংকটের একটি হলো বাড়িভাড়া সংকট। দেশে আবাসন বিস্তার লাভ করছে। মানুষ গ্রামের বাড়ি ছেড়ে ছুটছে শহরের দিকে। শহরে একের পর এক বির্ল্ডি তৈরি হচ্ছে। সেসব দালানকোঠায় বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। আবার বস্তির দিকে তাকালেও একই চিত্র। নিন্মবিত্তরা সেখানে ছোট ছোট খুপরি মতন ঘড় ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। বলা যায় শহরে বসবাস করা মানুষের একটি বড় অংশই ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে। তাদের জীবন কাটে অন্যের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে কাটে। আজকাল বড় বড় বাড়ি তৈরি করে বাড়ির মালিকরা ভাড়া দিচ্ছে। মানুষ কেন অন্যের তৈরি বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে আশ্রয় নেয়? এর অনেক কারণ থাকতে পারে। কোনো বিশেষ স্থানের সুযোগ ব্যবহার করতে বিশেষত জীবিকার প্রয়োজেন ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকছে। তবে উল্লেখযোগ্য হলো জলবায়ু সংকটের কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশেষত নদী ভাঙণের কারণে মানুষ তার আবাসস্থল হারাচ্ছে। এসব মানুষ জড়ো হচ্ছে শহরঞ্চলে। তাছাড়া পেশাগত কারণে, শিক্ষার সুযোগ সুবিধার জন্যও মানুষ শহরাঞ্চলে ভিড় করছে। সন্তানকে উন্নত লেখাপড়া করানোর উদ্দেশ্যে নিজের বাড়ি ছেড়ে এসে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকছে। দিন দিন ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাসের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব এলাকায় প্রচুর মানুষ বাড়ি ভাড়া নিয়ে পরিবারসহ বসবাস করছে। অনেক বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে যুগের পর যুগ পার করে দিচ্ছে অনেকে। আবার অনেকেই বছর শেষেই বা তার আগেই অন্য বাসা খুঁজে বের করছে। যেহেতু ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালা পাশাপাশি বসবাস করে স্বাভাবিকভাবেই এই দু পক্ষের সম্পর্ক হবে সুন্দর। অনেকটা পারিবারিক বন্ধনের মতো। কিন্তু তা হচ্ছে না। প্রায়ই উভয় পক্ষ থেকে নানা অভিযোগ শোনা যায়। উভয় পক্ষের সম্পর্ক তিক্ত হচ্ছে। যা আমাদের কাম্য নয়। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বেশিরভাগ আয় বাড়েনি আবার বাড়লেও তা বাজারের তুলনায় অনেক কম। ফলে বাড়তি বাড়ি ভাড়া একটি বাড়তি চাপ হয়েই থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর। রিহ্যাবের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ঢাকায় বসবাসকারীদের ৭০-৮০ শতাংশই ভাড়াটিয়া। ভাড়াটিয়াদের স্বার্থ রক্ষায় ১৯৯১ সালে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন করে সরকার। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১এ বলা আছে, কোনো বাড়ির ভাড়া ‘মানসম্মত ভাড়া’র অধিক বৃদ্ধি করা হলে ওই অধিক ভাড়া, ভাড়ার চুক্তিতে ভিন্ন রকম কিছু থাকলেও আদায়যোগ্য হবে না। তবে ‘মানসম্মত ভাড়া’ বলতে কত টাকা সেই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই আইনে।

বিজ্ঞাপন

ভাড়াটিয়া-বাড়িওয়ালা সমস্যার একটি অন্যতম কারণ হলো বছর বছর বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করা। বছর শেষে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সব ধরনের খরচ বৃদ্ধি পায়। জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে অনেক বাড়িওয়ালা তাদের বাসা ভাড়াও বৃদ্ধি করে। এই ভাড়া বৃদ্ধির কোনো নিয়মনীতি নেই। বলা যায় লাগামহীন। মধ্যবিত্ত মানের একটি পরিবারের জন্য যা অনেকটা কষ্টকর। উচ্চবিত্তদের জন্যও এটা সমস্যার। এই করোনার মধ্যে অনেক নিষ্ঠুর বাড়িওয়ালার চিত্র আমরা দেখেছি। ভাড়াটিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। মূলত সম্পর্ক হতে হবে মানবিক। আর ভাড়াটিয়াকে দেখতে হবে আপনজন হিসেবে। তাহলে এই সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সবক্ষেত্রেই যে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়ার সম্পর্ক তিক্ত হয় এমনটা নয়। অনেক বাড়ি আছে যেখানে বছরের পর বছর ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালা মিলেমিশে বসবাস করছে। একজনের বিপদে আরেকজন দৌড়ে যাচ্ছে। নিতান্তই আতœীয়স্বজনের মতো বসবাস করে আসছে। তবে এই চিত্র খুব বেশি নয়। উভয়পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক হচ্ছে উপেক্ষার। ভাড়াটিয়াকে উপেক্ষার স্বীকার হতে হচ্ছে। এটা হচ্ছে এর কারণ হলো এক ভাড়াটিয়া ঘর ছেড়ে গেলে তা খালি থাকছে না। অপর ভাড়াটিয়া এসে উঠছে। তবে তাতে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ভাড়াটিয়ার সাথে বাড়ির মালিকের দুরত্ব বাড়ছে। এটা চিন্তা করতে হবে যে ভাড়াটিয়া বা বাড়িওয়ালা উভয়ই সমাজের অংশ। ২০২২ সালের ২৭ জুলাই প্রকাশিত জনশুমারি অনুযায়ী ঢাকার জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৭৮ হাজার ৭০৮ জন। এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংখ্যা ৫৯ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৭ জন, যা ১২টি সিটি করপোশেনের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বাসিন্দাদের সংখ্যা ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৫ জন।

বিজ্ঞাপন

সামাজিক সম্পর্ক সুন্দর রাখতে দু’জনেরই ভূমিকা রয়েছে। অথচ অর্থের মাপকাঠিতে সম্পর্ক বিচার করা হচ্ছে। প্রতি বছর ঠিক কি কারণে ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে তার সঠিক কারণ থাকা দরকার। সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি না করেই যদি ভাড়া বৃদ্ধি করা হয় তবে তা হবে অমানবিক। কেবল বাড়ির মালিক হলেই এরুপ অন্যায় করা উচিত নয়। একজন বাসা ভাড়া নিতে আসে তার প্রয়োজনে। যদি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয় তাহলেও যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ ভাড়া বৃদ্ধি করা যেতে পারে। সেটাও কোনো খোঁড়া অজুহাতে হলে চলবে না। অপরদিকে সব ভাড়াটিয়াও যে সবসময় ভালো হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাড়িওয়ালার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ারও দায়িত্ব রয়েছে। তুচ্ছ কারণে বাড়িওয়ালার সাথে বিবাদে জড়িয়ে পরা উচিত নয়। কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা উভয় পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। বাড়ির নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। নিজের মতো করে বাড়িঘর ব্যবহার করতে হবে। জীবনযাত্রা নির্বাহের ব্যয় বেড়েছে। বাড়িভাড়াও তার মধ্যে একটি বড় উপাদান। এই খরচের উপাদানের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। ইচ্ছেমতো বাড়িভাড়া বাড়ানো একটা ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়েছে অনেকের কাছে। বাড়িভাড়া আইন প্রয়োগ করা দরকার। প্রয়োজনে যুগোপযুগী করে প্রয়োগ করতে হবে।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

অলোক আচার্য বাড়িভাড়া বৃদ্ধি ও ভাড়াটিয়ার নাগরিক বিড়ম্বনা মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর